
আচমকা এক সিদ্ধান্তে সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা আবরডিন গ্রুপ পিএলসি গত বৃহস্পতিবার তাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের পুরোনো “ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ারনেস ট্রাস্ট” বন্ধ করে দিয়েছে। কোনও আগাম বার্তা ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়েছে প্রধান নির্বাহী মুবিন হক, চেয়ারম্যান ও সব ট্রাস্টিকে। ট্রাস্টে কর্মরত আটজন কর্মীও হয়ে পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা ‘নতুন পথে এগোতে’ চায়। এই সাধারণ বাক্যটি দিয়ে শেষ হলো একটি এমন প্রতিষ্ঠান, যা দীর্ঘদিন ধরে আয় বৈষম্য এবং আর্থিক ন্যায়বিচার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকে সহায়তা করে এসেছে।
আবরডিন একটি বিনিয়োগ এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। বহু বছর ধরে সংস্থাটি সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে এমন গবেষণায় অর্থায়ন করেছিল, যার থেকে তাদের তাৎক্ষণিক আর্থিক লাভ ছিল না। এটি ছিল একটি ভদ্র, ‘নৈতিক পুঁজিবাদ’-এর নমুনা। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক ও কর্পোরেট আবহে সেই জায়গাটিও সঙ্কুচিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশ, সামাজিক নীতি (ESG) এবং বৈচিত্র্য-সম্পৃক্ততা (DEI) নীতির বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তাতে বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলো নিজেদেরকে ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা’ থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
আবরডিনের তহবিল বন্ধ হওয়ায় যে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তার তালিকা বিস্তৃত ও গুরুত্বপূর্ণ। এতে রয়েছে:
Institute for Fiscal Studies (IFS)
Resolution Foundation
Royal United Services Institute
Bright Blue
New Economics Foundation
Centre for the Analysis of Taxation (CenTax)
Child Poverty Action Group
High Pay Centre
Transport for All
Quaker Social Action ও Which?–এর পরিচালিত কিছু প্রকল্প
ট্রাস্টটি আগে থেকে প্রতিশ্রুত ৩.৬ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান দেয়ার কথা থাকলেও এখন সে অর্থ আদৌ দেয়া হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “সাপেক্ষে পর্যালোচনার” ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন CenTax বা Living Pension Foundation, যাদের আগামী কয়েক বছরের প্রকল্প এই তহবিলের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তারা এখন কার্যত অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।
আবরডিন বলেছে, তারা এখন থেকে 'অভ্যন্তরীণভাবে পরিচালিত একটি দাতব্য সংস্থা'র মাধ্যমে 'যুব বেকারদের মত ব্যক্তি ভিত্তিক উদ্যোগে' অর্থ ব্যয় করবে। কিন্তু এর মাধ্যমে আর্থিক বা কর কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে না।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ পল জনসন বলেছেন, “আমরা বিজ্ঞানের জন্য বিলিয়ন পাউন্ড পাচ্ছি, কিন্তু সামাজিক গবেষণার জন্য একটা কণা-ত্বরকও নেই।”
আবরডিনের সাবেক চেয়ারম্যান ডেভিড নর্গ্রোভ এই আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি UK Statistics Authority, Pensions Regulator ও Low Pay Commission-এর মতো প্রতিষ্ঠানেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা ছিল অবিবেচক, রূঢ় ও অসম্মানজনক। আবরডিনের ভাবমূর্তি এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
আবরডিনের বর্তমান চেয়ারম্যান ডগলাস ফ্লিন্ট, যিনি লেবার পার্টির আর্থিক পরামর্শক হিসেবে যুক্ত আছেন, তাকেও এ ঘটনার জন্য কটাক্ষের মুখে পড়তে হতে পারে। তিনি ব্যাঙ্কের ওপর আর্থিক সংকট পরবর্তী বিধিনিষেধকে ‘অতিরিক্ত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এটি একটি বৃহত্তর প্রবণতার অংশ। যুক্তরাজ্যের ৫৬% উচ্চপদস্থ আর্থিক পেশাজীবী এখন বিশ্বাস করেন, আগামী ৫ বছরে ESG–ভিত্তিক বিনিয়োগ কমে যাবে। WPP, বিশ্বের অন্যতম বড় মিডিয়া কোম্পানি, তাদের বার্ষিক রিপোর্ট থেকে DEI শব্দটি সরিয়ে দিয়েছে। অ্যামাজন নিজেও DEI নীতিকে ছোট করে “উন্নয়নমুখী পরিবর্তন” বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পলি টয়েনবি সতর্ক করছেন, পুঁজিবাদ নিজেই এখন সমাজ ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছে। কর্পোরেট জগতটি যেন আবারও কেবলমাত্র মুনাফা মুখী, আত্মকেন্দ্রিক রূপে ফিরে যাচ্ছে। এভাবে সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব নয়—এটাই আজকের বাস্তবতা।