Image description

স্বপ্নবাজ আলেম উদ্যোক্তা হাফেজ মাওলানা আবু তালহা। বর্তমানে তিনি নোয়াখালীর একটি মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি শুধু একজন ইমাম নন, বরং একজন স্বপ্নবাজ তরুণ। জেলা শহরে থেকেও ইমামতির পাশাপাশি হালাল রিজিক অন্বেষণে যুবসমাজকে পথ দেখাচ্ছেন এই আলেম।

বিভিন্ন ধরনের মসলার ব্যবসা নিয়ে খুলেছেন ‘নোয়াখালী বাজার’। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা। 

কালের কণ্ঠ : একজন ইমাম হয়েও উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে প্রেরণাটা কোথা থেকে এলো?

আবু তালহা : আসলে শুরুটা খুব সহজ ছিল না। ইমামতিই আমার পেশা ও পরিচয়।

কিন্তু আমি চেয়েছিলাম এমন কিছু করব, যাতে মানুষের উপকার হয়, আর নিজেরও হালাল জীবিকার ব্যবস্থা হয়। একসময় আমার দুবাইপ্রবাসী এক বড় ভাই সাইফুল ইসলাম আমাকে উৎসাহ দেন। তিনি একবার আমাকে একটা ভিডিও পাঠান, যেখানে এক ইমাম সাহেব মসজিদের পাশে ব্যাগ বিক্রি করছিলেন। আবার নামাজের সময় হলে নামাজও পড়াচ্ছেন।
 
তখন আমার ভেতরে একটা চেতনা জাগে, ইমাম হলে কি ব্যবসা করা যায় না? তাহলে রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম কি করতেন? তাঁরাও তো সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। সেখান থেকেই আমি ঠিক করি যে মসলা নিয়ে কাজ করব।

কালের কণ্ঠ : মসলার ব্যবসা বেছে নেওয়ার পেছনের চিন্তাটা কিভাবে এলো?

আবু তালহা : আমি চেয়েছিলাম এমন কিছু নিয়ে কাজ করতে, যা মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্যবান্ধব। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে ব্যবসার পাশাপাশি মানবসেবাও করা ছিল আমার উদ্দেশ্য। মসলার বাজারে ভেজালের পরিমাণ বেশি।

তাই আমি যদি খাঁটি মসলা সরবরাহ করি, তাহলে মানুষ উপকৃত হবে আর আমিও হালাল পথে উপার্জন করতে পারব।

কালের কণ্ঠ : আপনি একজন ইমাম। এই পেশায় থেকে কাজ করতে গিয়ে আপনাকে কি শুরুতে প্রতিবন্ধকতা বা কোনো বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?

আবু তালহা : জি, অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, ‘উনি তো ইমাম, উনি কেন মসলা বিক্রি করবেন?’, কেউ বলেছেন, ‘মসলা বিক্রেতার পেছনে নামাজ পড়া যাবে না!’ এমনকি কেউ বলেছেন, আমার ক্ষুধা বেশি! এই কথাগুলো শুনে মন অনেক ভেঙে যেত। কিন্তু আমি আল্লাহ ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধরেছি। আমার মতে, রাসুল (সা.) নিজেও ব্যবসা করতেন, সাহাবারাও করতেন, তাহলে আজকের ইমামরা কেন পিছিয়ে থাকবেন?

কালের কণ্ঠ : আপনার পণ্যগুলোতে কি আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য আছে?

আবু তালহা : আমি শুধু বাজারের মতো হলুদ-মরিচ বিক্রি করি না, আমি ২১ পদের একটি বিশেষ শাহি মসলা তৈরি করেছি, যা বাবুর্চি ও শেফদের পরামর্শ নিয়ে বানানো হয়েছে। সব উপাদান খাঁটি, ফ্রেশ। একবার এক (মুসল্লি) গ্রাহক আমার এই মসলা ব্যবহার করে রান্না করছিলেন। তাঁর মতে, মসলাগুলো শতভাগ ফ্রেশ হওয়ায় তরকারি থেকে সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছিল। এমনকি পাশের বাসার লোকেরা এর রহস্য জানতে চলে এসেছিল। সেদিন তিনি বিকেলেই আমার কাছ থেকে আমার মসলা সংগ্রহ করেন। 

কালের কণ্ঠ : ডেলিভারি ও গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয়টা কিভাবে সামাল দেন?

আবু তালহা : আমি নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে নিজেই ডেলিভারি দিই। সরাসরি কাস্টমারের মুখে শুনি, মসলা ভালো লেগেছে কি না। ফোন করেও জিজ্ঞেস করি। এই রিভিউ আমাকে আরো ভালোভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

কালের কণ্ঠ : আপনার ব্যবসার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা কী?

আবু তালহা : আমি আমার অনলাইন পেজের নাম রেখেছি ‘নোয়াখালী বাজার’। ভবিষ্যতে শুধু মসলা নয়, সুপারশপের মতো নানা রকম পণ্য যুক্ত করার ইচ্ছা আছে। আমি স্বপ্ন দেখি এমন একটি ব্যবসা গড়ে তোলার, যার লাভ দিয়ে আমি আমার পরিবার চালাব, আর ইমামতি থেকে পাওয়া সম্মানী মসজিদের জন্য ফি সাবিলিল্লাহ দান করে দেব।

কালের কণ্ঠ : নতুন উদ্যোক্তা বা যাঁরা ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন, তাঁদের জন্য আপনার বার্তা কী?

আবু তালহা : সত্য, ধৈর্য আর আমানতদারির সঙ্গে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। নিজের লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় হোন। যাঁরা আপনার পেছনে হাসেন, তাঁরাও একদিন প্রশংসা করবেন—যদি আপনি নীতির পথে থাকেন। আমি শুধু চাই, আমার কাজ দেখে নতুন প্রজন্মের আলেমরা সাহস পাক, নিজেকে গড়ে তুলুক এবং প্রমাণ করুক, ইমাম বা আলেম মানেই শুধু মসজিদ বা মাদরাসার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ কেউ নন, তিনি একজন সমাজ গড়ার কারিগরও হতে পারেন।