Image description

নিষেধাজ্ঞা শেষে ঢাকায় ঢুকতে শুরু করেছে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া। ভালো দামের প্রত্যাশায় বিক্রেতারা আশাবাদী; আর আড়তদারেরা বলছেন, বাজারে চাহিদা এখন বেশ ভালো। ফলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চামড়া নিয়ে ব্যাপারীরা রাতের গাড়িতে রওনা দিয়েছেন রাজধানীর দিকে।

ঢাকার পোস্তা এলাকার আড়তগুলোয় গতকাল থেকে চামড়া আসা শুরু হয়েছে। সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেড়েছে। এবারের কোরবানিতে পশু কম জবাই হওয়ায় (প্রায় ১২.৭২ লাখ কম) চামড়ার পরিমাণও কম। আড়তমালিকেরা বলছেন, এবার ৯০ লাখ চামড়া সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা পূরণ না-ও হতে পারে। ফলে লবণযুক্ত ভালো মানের চামড়া সরকার-নির্ধারিত দামের কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরের দারুল উলুম মাদ্রাসাসহ আশপাশের তিনটি মাদ্রাসা এ বছর ঈদের দিন চামড়া বিক্রি না করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেছে। মোট ২৬৮টি চামড়া তারা নিজেরা লবণ কিনে সংরক্ষণ করেছে ভালো দামের আশায়। প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আজম বললেন, ‘গত বছর প্রতিটি চামড়া মাত্র ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এবার এতিম ছাত্রদের ভরণপোষণের জন্য ভালো দামে বিক্রির চেষ্টা করছি।’

পোস্তার আড়তদারদের সংগঠন বিএইচএসএমএর সভাপতি মঞ্জুরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর বাজার গতি পাচ্ছে। অনেকে ফোনে দাম জেনে নিচ্ছেন, আবার অনেকে চামড়া পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

চামড়া পরিবহনে ১০ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল ৩ জুন থেকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ঈদের দিন থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য ছিল চামড়া একসঙ্গে ঢাকায় না এনে পর্যাপ্ত সময়ে সংরক্ষণ করে পাঠানো, যাতে বাজারে দাম পড়ে না যায় এবং পচন রোধ করা যায়। বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। এখন চামড়া পচছে না, দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’

গতকাল পোস্তায় ভালো মানের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১২৫০ থেকে ১৪০০ টাকায়। ছোট বা নিম্নমানের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৬০০-৮০০ টাকায়। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার সরকার-নির্ধারিত দাম ৬০-৬৫ টাকা; ঢাকার বাইরে ৫৫-৬০ টাকা। সর্বনিম্ন দাম ঢাকায় নির্ধারিত হয়েছে ১৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১১৫০ টাকা।

এ বছর কোরবানির পশুর সংখ্যা ছিল ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি, ছাগল ও ভেড়া ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮টি এবং অন্যান্য (উট, দুম্বা) ৯৬০টি। গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানি কমেছে ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৪টি।

চীন প্রতিবছর বাংলাদেশের ক্রাস্ট চামড়া আমদানি করে। এবার সরকার ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। চীন ও ভিয়েতনামের আগ্রহ থাকলে বাড়তি চামড়া রপ্তানি হয়ে যেতে পারে। এতে দেশীয় বাজারেও দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিক্রেতা, আড়তদার ও সরকার—তিন পক্ষই বলছে, এবার কাঁচা চামড়ার বাজারে নতুন করে প্রাণ ফিরেছে।