Image description

গুড়, আচার, পোলট্রি ফিড, সস, সয়াবিন তেল, দুধসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও মাত্রাতিরিক্ত বেনজয়িক অ্যাসিড, ক্রোমিয়াম, হাইড্রোজ, লিস্টোরিয়াসহ নানা উপাদানের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)।

বিএফএসএ কর্তৃপক্ষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৭ ধরনের ৬ হাজার ৫০৪টি খাদ্যপণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ১৭ ধরনের ১ হাজার ১০৭টি নমুনা মানবহির্ভূত/মানহীন বলে শনাক্ত হয়। এসব খাদ্যদ্রব্যের নমুনায় ৬৮টি প্যারামিটার পরীক্ষা করা হয়। এগুলোর মধ্যে ৩০টি মানবহির্ভূত পাওয়া যায়।

পণ্যের মান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) বলছে, তারাও সারা বছর বাজার থেকে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের নমুনা পরীক্ষা করে। এসব নমুনায় তারা মানবহির্ভূত পাচ্ছে।

বিএসটিআই পরিচালক (সিএম) সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পরীক্ষায় মানবহির্ভূত পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষা করে ভেজাল শনাক্ত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গুড় পরীক্ষায় মানবহির্ভূত পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য পণ্যটি এ বছর বাধ্যতামূলক পণ্যের আওতায় আনার চেষ্টা করছেন।

bfsa

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৪টি গুড়ের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর ৫৩টি মানবহির্ভূত বলে শনাক্ত করা হয়। ১৫০টি আচারের নমুনায় ৪৯টি, পোলট্রি ফিডের ২১৫টির মধ্যে ৩৭টি, সসের ১৫৪টির ৩২টি, সয়াবিন তেলের ৪৬টির মধ্যে ১১টি, দুধের ৪৭টির মধ্যে ১১টি, লবণের ১৪টির মধ্যে ৭টি, হলুদের গুঁড়ার ৩৭টির মধ্যে ছয়টি, মধুর ৭টির মধ্যে ৫টি, পানির ১৭টির মধ্যে ৪টি, শুঁটকির ১৯টির মধ্যে ৩টি, মরিচের গুঁড়ার ৪৫টির ২টি, সরিষার তেলের ১১টির ২টিতে ভেজাল শনাক্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, গুড়ে হাইড্রোজ, আচার ও সসে বেনজয়িক অ্যাসিড, পোলট্রি ফিডে ক্রোমিয়াম, সয়াবিন তেলে ভিটামিন ‘এ’, দুধে টোটাল প্লেট কাউন্ট, লবণে আয়োডিন, হলুদের গুঁড়ায় লেড, মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ, পানিতে আর্সেনিক, শুঁটকিতে পেস্টিসাইড, সরিষার তেলে স্যাপোনিফিকেশন ভ্যালু, কেকে হাইড্রোজ ও চিপসে ট্রান্স ফ্যাট ও লবণের উপস্থিতি সাধারণত পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এসব ব্যবহারের নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। নির্ধারিত মাত্রার কম বা বেশি হলে সেটি মানবহির্ভূত বলে শনাক্ত হবে।

bfsa.jpg-2

খাদ্যদ্রব্যে অনুমোদনহীন ও মাত্রাতিরিক্ত উপাদান পাওয়া গেলে মানুষের ক্যানসার, কিডনি রোগসহ জটিল রোগ হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের ডিন মো. বিল্লাল হোসেন।

বিল্লাল হোসেন বলেন, খাদ্যদ্রব্যের নমুনায় ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি কোনোভাবেই থাকতে পারবে না। ক্রোমিয়ামযুক্ত খাবার খেলে মানুষের লিভার সিরোসিস হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত বেনজোয়িক অ্যাসিড ব্যবহার করা হলে তা বিষাক্ত হতে পারে। এতে কিডনির জটিল রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, ৬ হাজার ৫০৪টি খাদ্যদ্রব্যের ৬৮টি প্যারামিটার পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩০টি প্যারামিটার মানবহির্ভূত শনাক্ত হয়। ৩০৭টি নমুনায় বেনজোয়িক অ্যাসিডের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হলে ৬১টিতে তা মাত্রাতিরিক্ত পাওয়া যায়। এ ছাড়া ক্রোমিয়ামের উপস্থিতির জন্য ৫৪টির মধ্যে ৫০টি ও ৪৮টির মধ্যে ৩৬টিতে অতিরিক্ত বলে শনাক্ত হয়। একইভাবে হাইড্রোজ, আয়োডিন, লিস্টোরিয়া, ফ্রুকটোজ, ভিটামিন এ, ইস্ট অ্যান্ড মোল্ড, সুক্রোজ, টোটাল প্লেট কাউন্ট, টোটাল সলিউবল সলিড, ময়েশ্চার লবণ, স্যাপোনিফিকেশন ভ্যালু, প্রেডনিসোলনের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৭০টি খাদ্যদ্রব্যের নমুনা পরীক্ষায় ৯১টি বা ৯ শতাংশ মানবহির্ভূত বলে শনাক্ত হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৮১টি নমুনার মধ্যে ২১৬টি বা ১৫ শতাংশ মানবহির্ভূত বলে শনাক্ত হয়। আর চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ২৯০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৮৭টি বা ৩৭ শতাংশ মানবহির্ভূত বলে শনাক্ত হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, মানবহির্ভূত পণ্য উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। সম্প্রতি মুড়ি পরীক্ষা করে হাইড্রোজ ও ইউরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। খাদ্যদ্রব্যের মাত্রাতিরিক্ত উপাদান ব্যবহার হলে সেটি দূষক বলে গণ্য হবে। উন্নত বিশ্বের কোথাও (খাদ্যপণ্যে) ক্রোমিয়াম নেই; অথচ বাংলাদেশে রয়েছে। এটির সঠিক মাত্রা কত হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্ধারণ করা হবে।