
ঈদ ঘনিয়ে আসায় মানুষ রাজধানী ছাড়ছে। বাজারে বেচাবিক্রি কমতে শুরু করেছে। তার পরও চালসহ কোনো পণ্যের দাম কমছে না। আগের মতোই চড়া দামে খেজুরসহ অন্য ফল বিক্রি হচ্ছে। বেগুন, শসা, লেবুর দামও চড়া। অন্যান্য সবজির দামও বাড়তি। চার দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার ২৩৫ টাকা ও সোনালির দাম ৩২৫ টাকায় ঠেকেছে। বিক্রি কমলেও রেকর্ড চড়া দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। তবে বাড়েনি চিনি, ছোলা, সয়াবিন তেলের দাম। অন্যদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়লেও খোলা তেলের সংকট কাটেনি। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মুরগির দাম বাড়ছেই। এ ব্যাপারে টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. বেল্লাল হোসেন, কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান ব্রয়লার হাউসের বিক্রয়কর্মী জসিম উদ্দিন ও হাতিরপুল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. জাকির হোসেন খবরের কাগজকে জানান, প্রথমে কম থাকলেও ২০ রমজানের পর থেকে বাড়ছে দাম। খামারিরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। চার দিন আগে ব্রয়লার ২১৫ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও বর্তমানে ২৩৫ টাকায় ঠেকেছে। তবে বড় সাইজের দাম একটু কম, ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দামও বেড়ে ৩২০ থেকে ৩২৫ টাকা হয়েছে। দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারের অন্য মুরগি বিক্রেতারাও একই তথ্য জানান। অন্য বাজারেও একই অবস্থা। তারা বলছেন, খামার থেকে বাড়াচ্ছে দাম। খামারিরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।
মুরগির মতো গরুর মাংসের দামও বাড়তি বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। গতকালও বিভিন্ন বাজারে আগের মতো প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
তবে মাংসে উত্তাপ ছড়ালেও ডিমে মিলেছে কিছুটা স্বস্তির বার্তা। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগের মতোই রুই, কাতলা আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৫০, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ১ হাজার, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চড়া দামেই মিনিকেট চাল বিক্রি
আগের চেয়ে রমজানে চালের বিক্রি অনেক কমে গেছে। আমদানিও বেড়েছে। তার পরও মিনিকেট চালের দাম ৮৬ থেকে ৮৮ টাকা, সবচেয়ে ভালো মোজাম্মেল মিনিকেট ৯৬ টাকায় ঠেকেছে। তবে আটাশ ও মোটা চালের দাম বাড়েনি। কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আউয়াল তালুকদারসহ অন্য চাল বিক্রেতারা জানান, মিনিকেট চালের দামে ঊর্ধ্বগতি থামছে না। রশিদ ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও ডায়মন্ড, হরিণ, মনজুর, এরফান ৮৬ থেকে ৯০ টাকায় ঠেকেছে। মিল থেকে বাড়ছে দাম। তবে আগের মতোই আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
নিউ মার্কেটের জসিম উদ্দিন, হাতিরপুল বাজারের মাসুমসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ‘আগের মতোই ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি, ছোলার ডাল ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ১১০, চিনি ১২০, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা লিটার ও পাম অয়েল ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা সয়াবিন তেল সহজে মেলে না।
বাড়তি দামে বেগুন শসা লেবুসহ অন্য সবজি বিক্রি
রমজানের শুরুতে বেগুন, শসা, লেবুর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। গতকাল ২৩তম রমজানেও এসব পণ্যের দাম তেমন কমেনি। লম্বা বেগুনের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সবুজটা ৬০ থেকে ৮০, বড় লেবুর হালি ১০০ থেকে ১২০ টাকার কমে মেলে না। টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান আলীসহ অন্যরা বলেন, ‘লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সবুজ বেগুন ৬০ থেকে ৭০, ছোট লেবুর হালি ৪০ থেকে ৭০, তবে বড় লেবু ৮০ থেকে ১২০ টাকা। হাইব্রিড শসার দামও বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও দেশি জাতের শসা ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। করলা, পটোল, ঢ্যাঁড়সের কেজি ১০০ টাকার কমে মেলে না।
বাড়তি দামেই খেজুর বিক্রি
রমজান মাস উপলক্ষে এবার প্রচুর আমদানি হলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুর। ২৩ রমজান চলে গেলেও কোনো দাম কমেনি। আগের মতোই বাড়তি দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া ফল বিতানের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেনসহ অন্য ফল বিক্রেতারা জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসায় মানুষ বাড়ি যেতে শুরু করেছে। বিক্রি কমে গেছে। কিন্তু দাম কমেনি। মেডজুল খেজুর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি, মরিয়ম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০, বরই খেজুর ৪৫০ টাকা, জাহিদি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। মালটার কেজি ২৮০ টাকা, আপেল ৩২০ থেকে ৩৫০, আঙুর ৩৫০ থেকে ৫৫০, তরমুজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।