Image description
শাড়িতে নারী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি নারীদের বসনে বিভিন্ন ধরনের পোশাক জড়ালেও শাড়ি এখনো পছন্দের শীর্ষে। এর মধ্যে বেনারসি, কাতান, জামদানি, মসলিন, সিল্ক অন্যতম। তবে এসব শাড়ি তৈরির জন্য গড়ে উঠেছে শিল্প ও কারখানা। তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পেও এসব শাড়ির কোনো কোনোটির উৎপাদন হয়ে থাকে দেশে। চাঁদপুর হাইমচরের এক উদ্যমী যুবক রনি পাটওয়ারী। তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিজ বাড়িতে জামদানি শাড়ি তৈরি করছেন। তার এই উদ্যোগ উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। উপজেলার ৩ নম্বর দক্ষিণ আলগী দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী পশ্চিম চর কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা রনি পাটোয়ারী। নিজ এলাকা ছাড়িয়ে এই জামদানি শাড়ি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে মরিয়া এই উদ্যোক্তা। সরজমিনে দেখা যায়, ‘নিজের একটি দো'চালা টিনের ঘরে ক্ষুদ্র পরিসরে জামদানি শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। উদ্যমী যুবক রনি। রনির বাবা বিল্লাল পাটওয়ারী ইউএনবিকে বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে পারিবারিক অভাব-অনটনে পড়ে রনি হাইমচর ছেড়ে পাড়ি জমায় নারায়ণগঞ্জে। সেখানে ২০ বছরে নানান প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ধীরে ধীরে জামদানি কাপড় বুনার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও নিপুনতা রপ্ত করেন। পরে নিজ গ্রামে ফিরে উদ্যোক্তা হয়ে উৎপাদন করতে থাকেন জামদানি শাড়ি। এখন নিজ ক্ষুদ্র শিল্প নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভাবের তাড়নায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা বেশি এগোতে পারেননি তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও এখন এই শাড়ি তৈরি বা বুনা ও বিক্রি করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন রনি। ছেলের এই দক্ষতা ও উদ্যোগে নিজেদের অনেক আনন্দের কথা হাসিমুখে জানালেন বৃদ্ধ বাবা বিল্লাল। রনির মা সালমা বেগম ও বাবা বলেন, সুতা, নাটাই, কাঠের ফ্রেম, সিজার, কেচিসহ নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে একা হাতে এক একটি জামদানি তৈরি করতে রনির ৩ থেকে ৪ দিন সময় লেগে যায়। তাই নানা প্রান্ত থেকে শাড়ির অর্ডার আসলেও তা তাদের হাতে তুলে দিতে ওর সময় লেগে যাচ্ছে। জামদানি শাড়ি তৈরির উদ্যোক্তা রনি পাটওয়ারী ইউএনবিকে বলেন, এ কাজটিতে আরও অনেকের কর্মসংস্থান তৈরির প্রত্যাশা রয়েছে তার। এজন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সহয়তা। যদি তারা সহযোগিতায় এগিয়ে আসতো, তাহলে এখানে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো। কথায় কথায় রনি ইউএনবিকে আরও বলেন, ‘আমার তৈরি এক একটি জামদানি শাড়ির বর্তমান মূল্য ৩ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা। তবে যে কারো চাহিদানুযায়ী অর্ডার পেলে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা দামের জামদানি শাড়ি তৈরিতেও আমি পারদর্শী।’ নিজের কাজকে এগিয়ে নিতে সবার দোয়া ও সহযোগিতাও চান তিনি। এ বিষয়ে চাঁদপুরের হাইমচরের ৩নং দক্ষিণ আলগী দূর্গাপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান সর্দার আব্দুল জলিল বলেন, রনির জামদানি শাড়ির এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তার এ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানকে অনেক বড় করতে আমার পরিষদ থেকে সহায়তা থাকবে। আমি চাই এই শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরও এগিয়ে যাক। হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বলেন, রনির জামদানি শাড়ির কথা জানি। এই উপজেলায় তেমন কোনো শিল্প কারখানা গড়ে উঠেনি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে রনির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, তাকে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সহায়তা থাকবে। শিল্পটিকে আরও ছড়িয়ে দিতে রনির এই শিল্প তৎপরতায় যেকোনো সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।