Image description

চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু। সফরকালে তিনি বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন, শ্রম অধিকার এবং বাক-স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন যে কোনো ছাড় দেবে না তা-ই পুনর্ব্যক্ত করে গেছেন। ঢাকার দুটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড লু বলেছেন, বিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ করার অধিকার দিতে হবে এবং কথা বলার মুক্ত পরিবেশ থাকতে হবে।

ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, আমরা সবসময় যেসব দাবি জানিয়ে আসছি, সেগুলোই বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন সফরকারীরা। এগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাংবিধানিক অধিকার। এগুলো বাস্তবায়ন করলে বিদেশিদের পরামর্শ নেওয়া লাগে না। দেশ নিয়ে নেতিবাচক কথাও হয় না।

তারা বলছেন, আশা করি সরকার দ্রুত এগুলো বাস্তবায়ন করবে। বিরোধী দলগুলোকে বাধাহীনভাবে সভা-সমাবেশ, মত প্রকাশ ও সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ করতে দেবে। সর্বোপরি সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য যা যা করা দরকার তা করবে। বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকবে।

লুর আগে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা এবং হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার।  

তিনি বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আর ডোনাল্ড লু পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করেন। তবে বিএনপি বা বিরোধী দলের কারও সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ওই দুই প্রতিনিধির সাক্ষাৎ হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ও দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশ সফরে ডোনাল্ড লু মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং বাক-স্বাধীনতার কথা বলেছেন। এ কথাগুলো তো আমরা দাবি আকারে বলে আসছি। এগুলো আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, এগুলো বাস্তবায়ন করলে তো বিদেশিদের পরামর্শ গ্রহণ করা লাগত না। বাংলাদেশ নিয়েও এত নেতিবাচক কথা উঠত না।

তিনি বলেন, এগুলো তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা। এগুলোই তো ডোনাল্ড লু বলে গেছেন। গণতন্ত্রে বিশ্ব^াসী দেশগুলো যেসব জিনিস পছন্দ করে, নিজেরা চর্চা করে, সেই জিনিসগুলো অপরাপর দেশে দেখতে চায়। সে অনুযায়ী পরামর্শ দেয়। ডোনাল্ড লুও তাই করেছেন।

রিপন বলেন, এ সফরের আগ পর্যন্ত সরকার ঠিক এর উল্টো কাজগুলো করত। আমাদের কথা সরকার আমলে না নিয়ে অগ্রাহ্য করেছে। এখন বিদেশিরা বলায় আমলে নেওয়ার কথা বলেছে। এখন সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি কাজগুলো পরিহার করবে বলে বিশ্বাস করি।

ডোনাল্ড লু দেশে ফিরে যাওয়ার পরেই শাসক দলের নেতাদের ভাষা পরিবর্তন হয়ে গেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি যে পরমর্শগুলো দিয়ে গেছেন, সরকার সে বিষয়ে কতটুকু আন্তরিক, কতটুকু প্রয়োগ করে। এখন দেখার বিষয় তারা আসলে এগুলো কার্যকর করে কি না।

আসাদুজ্জামান রিপন আশা প্রকাশ করে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে আমরা যে সব দাবি জনগণের কাছে তুলে ধরছি, সরকার সেগুলো বাধাহীনভাবে করতে দেবে। যেমন সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া, মত প্রকাশ, সংগঠিত হওয়া, প্রতিবাদ করতে দেওয়া-  এসব সুপারিশ কার্যকর করবে। কথায় কথায় গুলি করা, মিথ্যা মামলা দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সময়ের আলোকে বলেন, এ কথাগুলো তো আমরা আগে থেকেই বলে আসছি যে, এই সরকারের আমলে কথা বলার সুযোগ নেই, মত প্রকাশের সুযোগ নেই। সভা-সমাবেশ এমনকি সংগঠন করারও অধিকার নেই। এককথায় গণতন্ত্রবিরোধী কর্তৃত্ববাদী শাসক গত ১৪ বছর ধরে দেশ শাসন করে চলেছে। এ কথাটাই সর্বশেষ মার্কিন সহকারী মন্ত্রী বলে গেছেন।

তিনি বলেন, আসলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র থেকে কক্ষচ্যুত হয়েছে। ক্ষমতালিপ্সু একটি দল ক্ষমতা দখল করে আছে। এ থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া স্বাভাবিক পরিস্থিতির কোনো সুযোগ নেই।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আগে বিরোধী দলগুলো বলেছে, এখন বহির্বিশ্ব, যারা গণতন্ত্রপ্রিয় ও স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে তারা বলা শুরু করেছে। এ সফর আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ১৯৭১ সালে আমাদের যে অর্জন সেটা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, গতকাল (সোমবার) হাসপাতাল থেকে ফিরেছি, আমি অসুস্থ। পরে এ বিষয়ে কথা বলব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন, তারা তাদের কথা বলেছেন। বিএনপির সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেননি। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

উল্লেখ্য, গত দুই বছরের মধ্যে ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ১১তম উচ্চ পর্যায়ের সফর, যা অতীতের তুলনায় নজিরবিহীন। ধারাবাহিকভাবে এমন সফর বার্তা দেয় যে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা কৌশলে বাংলাদেশ কৌশলগত অবস্থানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।