টাকা দিতে না পেরে ৩০ ব্যাংককে ১১ হাজার কোটি টাকার বন্ড দিচ্ছে সরকার
সংকটের কারণে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা বাবদ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি পরিশোধ করতে পারছিল না সরকার। শেষ পর্যন্ত বিশেষ বন্ড ছেড়ে সেই পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গত তিন সপ্তাহে চার দফায় মোট ১১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা পরিশোধে গতকাল বুধবার ঢাকার বিদ্যুৎ ভবনে ২৪টি ব্যাংকের অনুকূলে ৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। ব্যাংক, পাওনাদার বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মধ্যে এই এমওইউ সই হয়। এর আগে গত মাসে ৬ ব্যাংকের অনুকূলে একই রকম এমওইউর পর তিন দফায় ছাড়া হয় ৫ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বন্ড। সব মিলিয়ে ৩০টি ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে এমওইউ সই করা হলো।
জানা গেছে, আগে ছাড়া বন্ডের বিপরীতে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক টাকা ধারও নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। গতকালের এমওইউর পর অর্থ বিভাগ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠাবে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক পরে ব্যাংকগুলোর অনুকূলে বন্ড ছাড়বে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ভর্তুকির টাকা দিতে পারছিল না সরকার। আর কেন্দ্রগুলোও ব্যাংকের পাওনা শোধ করতে পারছিল না। কোনো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র ঋণখেলাপিও হয়ে পড়ছিল। তাদের পক্ষেই এখন দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। পুরো পরিস্থিতি সরকার মোকাবিলা করার জন্যই বিশেষ বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বন্ডের কুপন রেট বা সুদহার হচ্ছে ৮ শতাংশ। এ হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা রেপো রেটের সমান। তবে ভবিষ্যতে রেপো রেট বাড়লে এই বন্ডের সুদের হারও বাড়বে, আর রেপো রেট কমলে বন্ডের সুদও কমবে।
বন্ড ছাড়ার ফলে কোনো ব্যাংক আর সংশ্লিষ্ট দেনাদার বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে টাকা চাইতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকের দায় এখন সমন্বয় হয়ে যাবে। আর ব্যাংক সুদ পাবে ছয় মাস পরপর। মেয়াদ শেষে সুদসহ ব্যাংকের পাওনা সরকার পরিশোধ করবে। তখন বন্ডগুলোও সরকার ফেরত নেবে। সাধারণত বন্ডের মেয়াদ ১৫ থেকে ২০ বছর হলেও বিশেষ বন্ডের ক্ষেত্রে তা সর্বোচ্চ ১০ বছর হয়ে থাকে।
নগদ টাকার বদলে বিশেষ বন্ড ছেড়ে সংকট মোকাবিলার উদ্যোগের ফলে কোম্পানিগুলোর কী লাভ হবে, আর ব্যাংকগুলোই–বা কীভাবে সুবিধাভোগী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এখন এটা ‘উইন-উইন’ (সবার জন্য লাভজনক) হয়েছে। কোম্পানিগুলোর লাভ হচ্ছে তাদের দায়টা সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে এবং ব্যবসা করতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না। আর ব্যাংকের সুবিধা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বন্ড রেখে টাকা নিতে পারবে এবং অন্য ব্যাংকের কাছে এগুলো বিক্রিও করতে পারবে। এই বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) রাখার বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে পারবে। অন্যদিকে সরকারের সুবিধা হচ্ছে, আপাতত নগদ টাকা পরিশোধ করতে হলো না।
বিদ্যুৎ খাতের বাইরে এর আগে গত ৪ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে ২ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের অনুকূলে ৪৫৯ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার ব্যাপারে বহুপক্ষীয় চুক্তি হয়।