Image description

বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমাকে আঘাত করলে সারা ভারত হিলিয়ে দেব। ইলেকশনের পরে দেশটা চষে বেড়াব।’

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বনগাঁওয়ের সভা থেকে ফের একবার বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনকে এক বন্ধনীতে ফেলে সমালোচনা করেন মমতা।

নাম উহ্য রেখে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা মনোজ আগরওয়ালকে ‘ইয়েস স্যার’ এবং ‘ছোট স্যার’ বলে আক্রমণ করেছেন তিনি। কেন এত কম সময়ে ‘অপরিকল্পিত’ এসআইআর, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার (এসআইআর) প্রথম ধাপ শেষ হবে ৪ ডিসেম্বর। তারপর ৯ ডিসেম্বর প্রকাশ হবে খসড়া ভোটার তালিকা। সেই খসড়া তালিকা প্রকাশের পর বোঝা যাবে পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান কতজন ভোটার রয়েছে।

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এসআইআর এর কাজ সম্পূর্ণ শেষ না হলেও এখনও পর্যন্ত ১০ লাখ ভোটারের নাম বাদ পড়তে চলেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এরমধ্যে সাড়ে ৬ লাখ ভোটার মৃত। এক ভোটারের দুই আসনে নাম রয়েছে এমন ভোটার এবং নিরুদ্দেশ ও অবৈধ ভোটার রয়েছে। বিজেপির দাবি, পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটির বেশি এধরনের মানুষের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়তে চলেছে। যেটা ছিল মমতার ভোট ব্যাংক।

আশঙ্কা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা না হয়, সেটাই নিশ্চিত করবে রাজ্য সরকার। এরপরই মমতা বলেছেন, ভাগ্যিস আমি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি। তা না হলে আমাকেও ওরা বাংলাদেশি বলে দিত। এরা (বিজেপি) মানুষকে ভয় দেখাবে, অত্যাচারিত করবে, মানুষকে শঙ্কিত করবে। আর বাংলা ভাষায় কথা বললেই বলবে আপনি বাংলাদেশি!

মমতা বলেন, ইতিহাসটাকে ভালো করে জানতে হবে। ভারত যখন স্বাধীন হলো তখন কেউ বাংলাদেশে থেকে পাকিস্তানে চলে গেল, কেউ ভারতে চলে এলো। যারা ছোটবেলায় বাংলাদেশি ভাষায় কথা বলে অভ্যস্ত আজকে হঠাৎ করে তারা কীভাবে ভাষা পরিবর্তন করবে? আমাদের লেখার ভাষা সকলেরই এক। বলার ক্ষেত্রে হয়তো উচ্চারণ একটু আলাদা হতে পারে। আমাদের রাজ্যে বীরভূম, বনগাঁ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া সব জায়গায় ভাষার আলাদা একটা টান রয়েছে। ভাগ্যিস আমি বীরভূমে জন্মগ্রহণ করেছি। তা না হলে আমাকেও বাংলাদেশি বলে দিত।

পরক্ষণেই মমতা বলেছেন, আমি বাংলাদেশকে খুবই ভালোবাসি। কারণ আমাদের ভাষা এক, দুই দেশের মধ্যে ভৌগোলিক সীমানা আছে, ঐতিহাসিক সীমানা আছে।

সদ্যসমাপ্ত বিহারের নির্বাচনের আগে এসআইআর হয়েছিল বিহারে। দেখা গিয়েছিল ৬০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছে বিরোধীকে ধুয়েমুছে প্রবল শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে নীতিশ কুমার এবং বিজেপির জোট।

সেই প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার মমতা বলেছেন, বিহারে ওরা (মহাগঠবন্ধন) বেচারা লড়তে পারেনি। আপনাদের (নির্বাচন কমিশন) গেম ধরতে পারেনি। আমরা সব ধরিনি। মনে রাখবেন, বাংলা কিন্তু বিহার নয়। বিজেপি বাংলা দখলের জন্য হ্যাংলার মতো করছে।

এরপরই নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগে মমতা বলেছেন, জনগণ ভোট দিয়ে সরকারকে ঠিক করে। এখন পুরো প্রক্রিয়াটাই পাল্টে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে যে, সরকার কে হবে! এটা কখনো হয়? নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা। কিন্তু আজকে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। বিজেপিকে সন্তুষ্ট করার জন্য মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আর কত প্রাণ যাবে?

উল্লেখ্য, প্রথমধাপে বিহারে হয়েছিল এস়আইআর। এরপর দ্বিতীয় ধাপে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে চালু হয়েছে ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধন (এসআইআর)। কিন্তু বিহারসহ অন্যান্য রাজ্যে এসআইআর নিয়র অতটা উত্তেজনা দেখা যায়নি, যতটা দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে।