Image description

দেশে স্মার্টফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস বা যন্ত্রের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার বেড়েছে স্মার্টফোনের। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রতি চারটি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবারেই এখন অন্তত একটি করে স্মার্টফোন রয়েছে।

গত সোমবার বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) প্রকাশিত এক গবেষণায় স্মার্টফোন ব্যবহারের এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও দেশে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার ছিল সীমিত; স্মার্টফোন ছিল কেবল উচ্চবিত্ত শ্রেণির নাগালে। তবে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি, ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি, ডিজিটাল রূপান্তর ও কম দামে স্মার্টফোন কেনার সুযোগ তৈরি হওয়ায় এর ব্যবহারও বেড়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘ইকোনমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউসহোল্ড লেবেল ইন মিড ২০২৫’ শীর্ষক এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘স্মার্টফোন ব্যবহারে আমাদের বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। বাজারে দামি স্মার্টফোনের পাশাপাশি অনেক সস্তা (কম) দামের স্মার্টফোনও আছে। নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষেরা এসব স্মার্টফোন কিনে নিজেদের চাহিদা পূরণ করছেন।’

৭৪% পরিবারে স্মার্টফোন

পিপিআরসি জরিপে দেখা যায়, বর্তমানে দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ পরিবারে এখন অন্তত একটি করে স্মার্টফোন রয়েছে; অর্থাৎ প্রতি চার পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবারে এখন স্মার্টফোন রয়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে সরকারি পরিসংখ্যানও কাছাকাছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, বর্তমানে দেশে স্মার্টফোন রয়েছে ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ পরিবারে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

স্মার্টফোন ব্যবহারে গ্রাম ও শহরের মধ্যে তারতম্য রয়েছে। শহরের তুলনায় গ্রামে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার এখনো বেশ খানিকটা কম। শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ ও গ্রামের ৭১ শতাংশ পরিবারে স্মার্টফোন রয়েছে। যদিও ফিচার (বাটন) ফোনের ব্যবহার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। গ্রামের ৭৯ শতাংশ পরিবারে ফিচার ফোন রয়েছে, শহরে তা ৭২ শতাংশ।

পিপিআরসির জরিপে স্মার্টফোন নিয়ে আরেকটি তথ্য উঠে এসেছে। তা হলো, যেসব পরিবারে তরুণ–তরুণী বেশি, সেসব পরিবারে স্মার্টফোনের ব্যবহারও তুলনামূলক বেশি; অর্থাৎ স্মার্টফোন ব্যবহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তরুণেরা চালক হিসেবে কাজ করছেন। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের চিত্রও বেশ আশাব্যঞ্জক। পিপিআরসির হিসাবে, বর্তমানে দেশের ৬৪ শতাংশ পরিবারে কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই মোবাইল নেটওয়ার্ক–নির্ভর। আর ব্যক্তি হিসাব করলে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৮ শতাংশ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।

* দেশের ৬৪ শতাংশ পরিবারে কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। * অর্ধেকের বেশি স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয় মোবাইল আর্থিক সেবা গ্রহণে। * ৫০% ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ও ২০% স্মার্টফোন শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহৃত হয়।

ল্যাপটপের ব্যবহার কম

পরিবারে স্মার্টফোনের ব্যবহার অনেক বাড়লেও ল্যাপটপ ব্যবহারের হার এখনো খুব কম। জরিপে দেখা যায়, দেশের মাত্র ৫ শতাংশ পরিবারের কাছে এ যন্ত্র রয়েছে। শহর এলাকায় প্রতি ১০ পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারে এবং গ্রামে প্রতি ৪০ পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার রয়েছে। পিপিআরসির গবেষণা বলছে, মানুষের আয়বৈষম্য প্রভাব ফেলছে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহারে। ধনী মানুষের মধ্যে এসব যন্ত্রের ব্যবহার অনেক বেশি, সে তুলনায় দরিদ্র্য মানুষেরা বেশ পিছিয়ে আছেন।

যেসব কাজে ব্যবহৃত হয়

স্মার্টফোনের প্রধান ব্যবহার হয় মূলত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। এ ছাড়া পড়াশোনা, বিনোদন, আধেয় তৈরি, আর্থিক লেনদেন কিংবা চাকরির প্রয়োজনে মানুষ এখন স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন। যেমন অর্ধেকের বেশি স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয় মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) গ্রহণের জন্য।

দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বহুল ব্যবহার ও গেমিং স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রায় ৮০ শতাংশ স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত থাকেন ব্যবহারকারীরা। অবশ্য এ কাজে ল্যাপটপেরও উল্লেখযোগ্য ব্যবহার রয়েছে।

শিক্ষার্থী ও তরুণেরা অনলাইন ক্লাস, গবেষণা, ই-বুক ও নানা শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছেন। প্রায় ৫০ শতাংশ ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ও ২০ শতাংশ স্মার্টফোন এসব শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিং ও বিভিন্ন পরিষেবা মাশুল দেওয়া প্রভৃতি কাজে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ ব্যবহৃত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্মে কম্পিউটারের ব্যবহার বেশি হয়। আর সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতা গ্রহণে ফিচার ফোনের ব্যবহার তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে।