Image description

একসময় মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল চিঠি। টেলিফোন কিংবা সামনা-সামনি কথা। আজ তা বদলে গেছে। আমরা এখন এক ক্লিকেই পৌঁছে যাই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কথা বলি অজানা মানুষের সঙ্গে, অনুভব করি ‘কানেক্টেড’ থাকার মিষ্টি তৃপ্তি। কিন্তু এই মিষ্টতা কি বিষে রূপ নিচ্ছে? প্রশ্ন উঠেছে, আমরা কি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছি, নাকি সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের ব্যবহার করছে?

একটা স্ক্রল- সময়ের দামি শত্রু। আপনি কি কখনো ভেবেছেন, দিনে কতটা সময় আপনি শুধুই স্ক্রল করে পার করছেন? এক পোস্ট থেকে আরেক পোস্টে, এক ভিডিও থেকে আরেক রিল—সময় যেন বাষ্প হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। কাজের সময় পিছিয়ে যাচ্ছে, ঘুমের সময় কমে যাচ্ছে, পড়ালেখা কিংবা কাজের প্রতি মনোযোগ সরে যাচ্ছে।

আমরা না জেনেশুনে একটি অদৃশ্য জালে জড়িয়ে পড়ছি। যার নাম সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম। আপনার মতামত নাকি অ্যাপের ইচ্ছা? যখন আপনি বারবার নির্দিষ্ট এক ধরনের পোস্ট দেখেন, তখন কি আপনি ভেবেছেন—এটা আপনি খুঁজছেন? নাকি অ্যাপ আপনাকে সেদিকেই ঠেলে দিচ্ছে? ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক—সব প্ল্যাটফর্মই আপনার পছন্দ বুঝে এমনভাবে কনটেন্ট সাজিয়ে দেয়, যাতে আপনি আর বের হতে না পারেন। আপনার মতামত, পছন্দ, এমনকি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও প্রভাবিত হচ্ছে এই অ্যালগরিদমিক নিয়ন্ত্রণে।

মানসিক স্বাস্থ্যের অদৃশ্য ক্ষয়

সোশ্যাল মিডিয়ার আরেকটি ভয়ংকর দিক হলো মানসিক চাপ। অন্যের সুখী ছবি, বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, সফলতার গল্প দেখে নিজের জীবনে অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা বাড়ছে। গড়ে উঠছে ‘FOMO’ (Fear of Missing Out), যার ফলে নিজেকে তুচ্ছ ও অপ্রয়োজনীয় মনে হওয়া শুরু করে অনেকেই। এটা শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়, সম্পর্ককেও আঘাত করে। আমরা পাশে থাকা মানুষটিকে সময় না দিয়ে স্ক্রিনের সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছি। প্রশ্ন উঠছে, কে নিয়ন্ত্রণ করছে কাকে? আমরা কি এখনো বলতে পারি, ‘আমি ফেসবুক ব্যবহার করি?’ নাকি আসলেই ফেসবুকই আমাদের ব্যবহার করছে? আমাদের অনুভূতি, সময়, মতামত, এমনকি ক্রয় সিদ্ধান্তও এখন তাদের হাতের পুতুল। তারা জানে, আমরা কখন অনলাইনে থাকি, কী দেখি, কতক্ষণ দেখি, কী কিনি, কী ভালোবাসি, কী ঘৃণা করি। এটা যেন এক আধুনিক দাসত্বের রূপ।

সমাধান কোথায়?

আমরা যদি সচেতন হই, তাহলে এখনো নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। দিনে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি না স্ক্রল করা। সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স করা, সপ্তাহে একদিন সম্পূর্ণ দূরে থাকা।

বাস্তব জীবনের সম্পর্ক ও অভিজ্ঞতায় গুরুত্ব দেওয়া। ভিন্নমত ও বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া। সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য যাচাই করা।