
মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটার সাম্প্রতিক বিনিয়োগের পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রশিক্ষণ কোম্পানি ‘স্কেল এআই’র ওপর একের পর এক ধাক্কা আসতে শুরু করেছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটা কোম্পানিটির ৪৯ শতাংশ অংশীদারিত্ব অর্জন করার পর গুগল স্কেল এআই-এর সাথে তার অংশীদারিত্ব বাতিলের পরিকল্পনা করছে।
স্কেল এআই মূলত বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেলকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য পরিচিত, যেখানে প্রশিক্ষণের ফলাফলগুলো মানব পর্যালোচকদের দ্বারা যাচাই করা হয়। রয়টার্স জানিয়েছে, গুগল ‘স্কেল এআই’র সবচেয়ে বড় ক্লায়েন্ট ছিল। তাদের জেমিনি মডেলের জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি প্রশিক্ষণ ও রিভিউ চুক্তির পরিকল্পনাও করেছিল।
তবে মেটার বিনিয়োগের পরপরই গুগল ওই সম্পর্ক ছিন্ন করতে উদ্যোগী হয়েছে এবং স্কেল এআই-এর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির বিষয়েও আলোচনা শুরু করেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এই গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্ট হারানোর পরেও স্কেল এআই-এর বাজার মূল্য দ্বিগুণ হয়ে ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৯ বিলিয়নে পৌঁছেছে।
এখানেই থেমে থাকেনি চুক্তি বাতিলের প্রবণতা। রয়টার্স জানিয়েছে, মাইক্রোসফ্ট এবং ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠিত এক্সএআই সংস্থাও স্কেল এআই থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এমনকি ওপেনএআইও কোম্পানির সাথে ভবিষ্যত চুক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবছে। তবে স্কেল এআই-এর সাথে চুক্তি বজায় থাকবে বলেই এখন পর্যন্ত জানিয়েছে ওপেনএআই। অবশ্য তারা ভবিষ্যতে মানব-পরীক্ষিত তথ্যের বিকল্প উৎসের উপর নির্ভর করতে চায়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আকারে ছোট হলেও স্কেল এআই ২০২৪ সালে ৮৭০ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করেছে, যার মধ্যে গুগলের অবদান ছিল ১৫০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গুগল ছিল কোম্পানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্লায়েন্ট।
এই চুক্তি বাতিলের পেছনে বড় কারণ হিসেবে রয়টার্সের সূত্রগুলো জানায়, স্কেল এআই-এর সঙ্গে কাজ করলে প্রতিযোগী এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব প্রোটোটাইপ, ডেটা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মতো সংবেদনশীল তথ্য মেটার নাগালের মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটি স্বার্থের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে মেটা নিজেও যখন এআই খাতে বড় বিনিয়োগ করছে।
স্কেল এআই শুধুমাত্র এআই মডেলই নয়, স্ব-চালিত গাড়ির জন্যও ডেটা ও প্রশিক্ষণ সরবরাহ করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তি জায়ান্টদের এভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়া কোম্পানিটির আর্থিক লাভে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতি কোম্পানির ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে যখন প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের এআই উন্নয়নের জন্য আরো স্বাধীন ও সুরক্ষিত প্ল্যাটফর্ম খুঁজে নিতে চাচ্ছে।
সূত্র : আল জাজিরা