Image description

মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার তাদের সর্বশেষ চ্যাটবট গ্রোক-৩ উন্মোচন করেছে। এটি চ্যাটজিপিটি ও চীনের ডিপসিকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে বলে তার আশা।

এই উন্মোচনের মধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ফেডারেল সংস্থাগুলো পুনর্গঠন ও বিলুপ্তির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন ব্যতিক্রমী ব্যয় সংকোচন প্রচেষ্টার ফলে স্বার্থের সংঘাত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কারণ মাস্কের বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের বেশ কিছু অংশের ওপর এসব সরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

‘গ্রোক হলো মহাবিশ্ব বোঝার একটি উপায়’
গ্রোক-৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাস্ক বলেন, ‘গ্রোক হচ্ছে মহাবিশ্ব বোঝার একটি উপায়। আমাদের কৌতূহলই আমাদের চালিত করে এবং আমরা সর্বোচ্চ সত্য অনুসন্ধানী এআই তৈরির চেষ্টা করি, যদিও সেটি কখনো কখনো রাজনৈতিকভাবে সঠিক ধারণার সঙ্গে মিল নাও খেতে পারে।’

মাস্ক গ্রোক-৩কে ‘ভয়ংকরভাবে বুদ্ধিমান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যার কম্পিউটিং ক্ষমতা আগের সংস্করণের তুলনায় ১০ গুণ বেশি।

গ্রোক-৩-এর পূর্ববর্তী সংস্করণ ২০২৩ সালের আগস্টে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, নতুন সংস্করণ ১০ গুণ বেশি কম্পিউটিং ক্ষমতাসম্পন্ন এবং এটি সিন্থেটিক ডেটা ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত হয়েছে। নতুন এই চ্যাটবট ভুল সংশোধনের জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, যা কিছু এআই চ্যাটবটের সাধারণ সমস্যা ‘হ্যালুসিনেশন’—অর্থাৎ ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্যকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে।

একটি ভিডিও কলে মাস্ক বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত যে পরীক্ষা চালিয়েছি, তাতে দেখা গেছে গ্রোক-৩-এর যুক্তিনির্ভর চিন্তন ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী।

আমাদের জানা মতে, বাজারে বিদ্যমান অন্য যেকোনো এআই মডেলের তুলনায় এটি এগিয়ে রয়েছে।’

প্রথমে এক্সের পেইড সাবস্ক্রিপশন পরিষেবা প্রিমিয়াম প্লাস ব্যবহারকারীরা গ্রোক-৩ ব্যবহার করতে পারবে, পরে এটি অন্যান্য ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াই
এদিকে উন্নত ও সাশ্রয়ী এআই প্রযুক্তির বাজার দখলের দৌড়ে একাধিক দেশ প্রতিযোগিতায় নেমেছে। গত মাসে চীনের ডিপসিক স্টার্টআপ তাদের কম খরচের উন্নতমানের চ্যাটবট আর১ উন্মোচন করে বৈশ্বিক এআই শিল্পে আলোড়ন সৃষ্টি করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি আধিপত্যের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে গ্রোক-৩ সরাসরি ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী, যা মাস্কের সাবেক সহযোগী থেকে এখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা স্যাম অল্টম্যানের নেতৃত্বে রয়েছে।

২০১৫ সালে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠার সময় মাস্ক ও অল্টম্যান একই দলে ছিলেন, যেখানে মাস্ক প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে তিন বছর পর তিনি ওপেনএআই ছেড়ে দেন। এরপর ২০২২ সালে ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি উন্মোচন করে বৈশ্বিক প্রযুক্তি জগতে সাড়া ফেলে দেয়। কিন্তু সেই উদ্যোগে মাস্কের কোনো ভূমিকা ছিল না, বরং অল্টম্যান হয়ে ওঠেন কম্পানির মুখপাত্র।

তার পর থেকে দুজনের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ও আইনি লড়াইয়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহে ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ মাস্কের নেতৃত্বে কম্পানির মালিকানা কিনে নেওয়ার প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের ভূমিকা
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্সিতে প্রযুক্তিকে কেন্দ্রীয় অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল এবং হোয়াইট হাউস থেকে একাধিক এআই অবকাঠামো উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে।

মাস্ক ট্রাম্পের নিকটতম উপদেষ্টা হয়ে উঠেছেন এবং সদ্য গঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির (ডিওজিই) নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার অধীনে মার্কিন সরকারি ব্যুরোক্রেসির আমূল সংস্কার শুরু হয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের এত কাছাকাছি থাকার ফলে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হচ্ছে। কারণ মাস্ক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ যেসব খাতের নীতি ও বিধি-নিষেধ গঠনে পরামর্শ দিচ্ছেন, সেসব ক্ষেত্রেই তার নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুসারে, মাস্কের কম্পানি এক্সএআই প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এতে কম্পানির মোট মূল্য ৭৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে মাস্ক এক্সএআই প্রতিষ্ঠা করেন, ঠিক তখনই যখন তিনি একটি উন্মুক্ত চিঠিতে স্বাক্ষর করেন, যেখানে বলা হয়েছিল, শক্তিশালী এআই মডেলের উন্নয়ন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা উচিত।

সূত্র : এএফপি