টক শো রিভিউ
'এখনকার তরুণরা সেভাবে পড়াশোনা করে না'
16 September 2014, Tuesday
'দেশে অধিক হারে ছাত্রছাত্রী পাস করছে বলে যে দেশের শিক্ষার মান কমে গেছে, এটা বলা যাবে না। কারণ আমাদের শিক্ষার্থীরা এখনো দেশের বাইরে গিয়ে স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। তারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ৬০০ শিক্ষকের মধ্যে প্রায় এক হাজারের মতো শিক্ষক বিদেশ থেকে পিএইচডি করে এসেছেন, তাঁদের বিষয়ে কোনো লেখা দেখছি না। অথচ কেউ একজন খারাপ করলে তাঁর কথাই মিডিয়ায় বেশি ছড়ায়।' গত সোমবার রাতে কথাগুলো বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির বিশেষ টক শো 'কেমন বাংলাদেশ চাই' অনুষ্ঠানে।
সৈয়দ আশিক রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর, চিত্রনায়ক নিরব, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জুনায়েদ সাকি ও বেসিসের প্রেসিডেন্ট শামীম আহসান।
ড. মীজান বলেন, 'আমরাও এ দেশেই পড়াশোনা করেছি। আমরা ছাত্রজীবনে পড়ালেখা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিইনি। এ সময়ের ছাত্রছাত্রীরা অনেক বেশি মেধাবী। কিন্তু তারা সেভাবে পড়াশোনা করে না। সঙ্গদোষে তারা বই পড়ার চেয়ে অন্য কাজ বেশি করতে পছন্দ করে। তাই অভিভাবকদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে।'
অনুষ্ঠানে সঞ্চালক বলেন, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ তরুণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় এটা অনেক বেশি। এর পরও আমরা এ তরুণসমাজকে ভালো কাজে লাগাতে পারছি না।
এ বিষয়ে আঁখি আলমগীর বলেন, 'এই বিশাল তরুণসমাজকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে তাদের ইতিবাচক মনোভাবের হতে হবে। কোনো কিছুকে নেতিবাচক হিসেবে নেওয়া চলবে না। আমাদের ভিনদেশি ভাষা শিখতে হবে; তবে আগে নিজেদের ভাষাও ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। অনেক সময় দেখি সন্তানরা ইংরেজি ভাষায় কথা বললে মা-বাবারা খুশি হয়। কিন্তু এটা ঠিক না। ইংরেজিতে কথা বলবে ঠিক আছে, কিন্তু সন্তানকে বাংলাটাও ভালো করে শেখাতে হবে।'
এ পর্যায়ে জুনায়েদ সাকি বলেন, 'আমাদের তরুণদের সেই আগের মতো তারুণ্য নেই। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানে না। যেখানে আগে আমরা রাষ্ট্রীয় যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সোচ্চার ছিলাম, সেখানে এখনকার ছেলেমেয়েরা সেটা করতে পারছে না। আমাদের তরুণদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষিত হয়ে নিজেদের পেশার প্রতি আন্তরিক হতে হবে, তাহলে সফলতা আসবে। না হয় এই তরুণসমাজ বিপথগামী হতে পারে। এ জন্য আগে পরিবারকে সচেতন হতে হবে, তারপর সমাজও সচেতন হবে।'
এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা ভিনদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে বলে প্রায়ই শোনা যায়।
এ প্রসঙ্গে নায়ক নিরব বলেন, 'ভিনদেশি আগ্রাসন একটু-আধটু হতে পারে। তবে আমরা যদি নিজেদের দেশকে ভালোবাসি, তবে এটা মনে হয় কোনো সমস্যা নয়। আর সবচেয়ে ভালো দিক হলো, আমাদের তরুণরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চায়। কিন্তু অনেক সময় তারা সেই সুযোগ পায় না। সব দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কেই আমাদের পরিচিত হতে হবে। কিন্তু দেশি সংস্কৃতি ছাড়া অন্য কোনো দেশের সংস্কৃতিতে নিজেদের জড়ানো যাবে না।'
শামীম আহসান বলেন, 'আমাদের দেশের তরুণরা প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে গেছে। বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানে তারা শীর্ষ পদেও যোগদান করছে। আমাদের দেশের প্রায় তিন কোটি তরুণ প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত। তাদের মধ্যে অনেকে এ খাত থেকে মাসে এক হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করছে। কেউ কেউ তারও বেশি করছে।'
এ পর্যায়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'আমাদের আগে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই তরুণসমাজসহ সব খাতে সফলতা আসবে। সুশাসন না থাকলে আসলে কারো পক্ষে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।'
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন