একুশ বছর | | আসাদ মান্নান
সবুজের মায়াকুঞ্জে একদিন আচানক শুনি
বিনা মেঘে বজ্রপাতে কর্মযজ্ঞে ঘোর অমানিশা;
কী নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে বেজন্মা ঘাতক;
উল্টোদিকে ঘুরে গেল ইতিহাস, সময়ের চাকা-
ফাঁকা মাঠে খেলতে নামে ভাড়াটিয়া ন্যাংটা খেলোয়াড় ;
দর্শক সারিতে বসে রেফারিবিহীন এই খেলা
দেখতে দেখতে একসময় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকে
ওই কানাখোঁড়া হাবাগোবা বোকা চোদা হুজুগি জনতা।
একুশ বছর ধরে ভুল পথে চলতে থাকে দেশ;
বিদেশি শকুন নেই-আছে তার লোকাল এজেন্ট
মেহনতি মানুষের রক্তপায়ী জঙ্গি জানোয়ার-
পেছনে রয়েছে তার ছদ্মবেশী গণতন্ত্রবাদী
বনেদি সিংহের বেশে সুচতুর সুশীল বাহিনী,
যাদের মদদে খুনি বোল আর পোশাক পাল্টায়।
ছেঁউরিয়ার ঘাট | | সাকিব জামাল
গাঢ় অন্ধকার রাত। হঠাৎ আকাশে ভাসে-
ষোলআনা যৌবনা একখানা চাঁদ। দেখে, বিস্মিত
এক গৃহত্যাগী বাউল। স্পর্শ আহ্বানে ধরে গান।
বাউল হাসে, চাঁদ হাসে।
বাউল হাটে, চাঁদ হাটে।
আপ্লত্ন মনে-চলে ছেঁউরিয়ার ঘাটে।
অথচ, নদীতে তখন তুমুল ঢেউ!
মন মজে- মোহ মোহনায়।
পাড়ি দেওয়ার আশায়, পা বাড়াতেই-
সঙ্গত কারণে চাঁদ লুকায় ফের।
ছলে, একতারা ভেঙে পড়ে জলে
একলা বাউল আরও একা হয়ে যায়-তত্ত্বমতে!
অতৃপ্ত | | শারমিন সুলতানা রীনা
আমি তো চিরকাল ভালোবাসা নিয়ে
বাঁচতে চেয়েছি-
পুরো আকাশেরও অধিকার চাইনি
তবু তোমার অপারগতার কাছে
হার মেনে ফিরে এসেছি।
নিস্তব্ধ জোয়ারের নিবিড়তা
গভীরভাবে উপলব্ধি করে জেনেছি
তারও সাধ জাগে গর্জন তুলে
প্রবাহিত হওয়ার।
শিশির ভেজা পায়ে নূপুরের
রিনঝিন ছন্দে টের পাই
সাপের বিষে নীল হয়ে যাওয়া
লক্ষীন্দরের আত্মা কখন ভর করেছে সত্তাজুড়ে
বেঁচে থাকার শক্তি হারানো মন
কখনো কি পায় নতুন সৃষ্টির সন্ধান।
শীতের অতিথি | | বদরুল হায়দার
গোল টেবিলের আড্ডায় ভ‚গোল ভুলে
পৌরনীতি পাঠ শেষে দুপুর গড়ায় শীতের শরীরে।
সংগীত মনস্কতার বিপরীত ভাষায় তোমার
ইঙ্গিত মনের কুয়াশায় ভাষান্তর করে শাপেবরে।
পাতা ঝরা স্বভাবের ঝরে পড়া মনের আবেগে
বাড়তি সৌজন্য বোধে রং করা বেদনার
ফুল ঝরে অকাতরে।
ঘৃতকুমারীর অম্লরসে প্রাণের আবেশে
তোমার মনের স্বপ্নছোঁয়া আঁধারের
তিক্তচাষে ঘুণে ধরে প্রেমের পরশে।
সাফকথা বলে দাও হৃদয়ের সভাঘরে।
অপারগতার আদরে আমি স্বপ্নের সাগরে
খুঁজি আনন্দের প্রীতি। তুমি মিলন সন্ধির
শর্তমূলে টেনে আনো শীতের অতিথি।
সমুদ্রের চিঠি | | সাইয়্যিদ মঞ্জু
ঘুমের পকেট ধরে আচমকা টান
বাঁচার আকুতি নিশির সমুদ্র জুড়ে
কেউ নেই আগাবার
জলবুকে হাহাকার আর্তনাদ স্বর
নির্দয় দস্যুর এমনি তাণ্ডব বুঝি-পরম্পরা
অন্তহীন প্রান্তজুড়ে প্রাণ সংহার-
যত, রয়ে যায় অগোচরে
দেখার যে চোখ, নিদ্রিত জনমভর
বিষণ্ন মনের ব্যথা, জানে
কর্ণফুলী বাঁকখালী কোহেলিয়া নাফ
উড়িয়ে দিলাম দুঃখ চিঠি-
হাওয়ার পানে
সাক্ষী থেকো তুমি ওগো বঙ্গোপসাগর ।
ছায়ার অসুখ | | কুমকুম দত্ত
আলোমেখে হেঁটে যায় অন্ধকার
ছায়ার অসুখ কান্না চেপে বুকের
পখ হৃদয়ের একান্তে গহিন,
যেতে যেতে অন্ধকার দীর্ঘ চূড়ান্ত সময়।
পৃথিবীর কথা ঘাস লতা-পাতার সবুজ
ভয় নক্ষত্রের রোদনে রাতজাগা দীর্ঘশ্বাস
মনে পড়ে ঢেউ ভীষণ একদিন,
বয়সি বালকের বালিকা রাজহাঁস,
প্রণয় প্রার্থনা আছড়ে পড়ে আকাশে রাত।