Image description
সড়কে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা-বায়ুদূষণের জন্য ভাঙাচোরা বাসগুলো দায়ী দেখতেই খারাপ লাগলেও এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না বায়ুদূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

সড়ক-মহাসড়ক সর্বোত্রই বিশৃঙ্খলা। রাজধানী ঢাকার সড়কের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে। ঢাকায় ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কর বাস দুর্দান্ত প্রতাপে চলছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যানবাহনের লাইসেন্স-ফিটনেস দেখার নাম করে টাকা আদায় করছে। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। সেই সঙ্গে সড়কে যানজট এখন নিত্যচিত্র। তবে এসব সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িগুলোকেই দায়ি বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা। এসব গাড়ি পরিবেশ বিপর্যয়েরও কারণ হয়ে উঠেছে। ফিটনেস বিহীন মেয়াদোত্তীর্ণ এসব গাড়ির রুখতে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। পুরনো লক্কর-ঝক্কর বাসগুলোকে রঙ করে আবার রাস্তায় নামানোর চর্চা মালিকদের দীর্ঘদিনের। এসব বাস রাস্তায় চলাচলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি তৈরি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি পেলেই ডাম্পিং করার হুঁশিয়ারি এর আগেও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবার মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে তুলে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, বায়ুদূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। এছাড়াও দূষণ রোধে পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে তুলে নেওয়া হবে, পাশাপাশি জিরো সয়েল, নো ব্রিক ফিল্ডসহ এয়ার কোয়ালিটি নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বায়ুদূষণ রোধে শীতকাল বা আগামী অক্টোবরের আগে ভাঙাচোরা রাস্তার মেরামত কাজ শেষ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে তুলে নেওয়া হবে পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি। এছাড়া নতুন ২৫০টি গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বায়ুদূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। এটি রোধে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বেস্ট প্রজেক্ট, বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প এবং জাইকার একটি প্রকল্প আনা হচ্ছে; যাতে করে এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট করা যায়। এদিকে ইটভাটার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। ঢাকার আশেপাশের কোন এলাকাগুলোতে নো ব্রিক ফিল্ড জোন ঘোষণা করলে ঢাকার দিকে আর এই বাতাস আসবে না। বালু ও সিমেন্টের বস্তা খোলা আসে। এগুলো খোলা অবস্থায় আনা যাবে না। তবে খোলা আনতে সমস্যা হলে কাভার্ড ভ্যানে আনতে হবে। জিরো সয়েল, নো ব্রিক ফিল্ড জোন একদিনে করা সম্ভব না। তবে কাজটা আমরা শুরু করে দিতে চাই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে চলাচলের জন্য যে কোনো ভেহিক্যালের যান্ত্রিক ও কাঠামোগত ফিটনেস থাকতে হয়। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি দেখভাল করার মতো প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও পদ্ধতিগত সক্ষমতা এই মুহূর্তে নেই। এ ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাবের পাশাপাশি লোকবল সঙ্কটও রয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনা ও গণপরিবহন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান বলছেন, লক্কড়-ঝক্কড় বাসকে ফিটনেস সনদ দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান আর সেই ফিটনেস সনদ নিয়ে এরা রাস্তায় নামছে সংশ্লিষ্ট অন্যদের নানাভাবে ম্যানেজ করে। সড়কে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা আর বায়ুদূষণের জন্য এ ভাঙাচোরা বাসগুলোই দায়ী। অনেক বাস এতোই ভাঙাচোরা যে দেখতেই খারাপ লাগে। অথচ এদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এর দায়িত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরই। মেট্রো রেল বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় অবকাঠামোতে সরকার যতটা যতœশীল ঢাকার সড়ক ব্যবস্থাপনায় তা দেখা যায় না বলেই কেউ আইন মানে না।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের গাড়ি নিয়ে খুব ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। প্রতিনিয়তই স্থানীয় পর্যায়ের গাড়ি তথা নছিমন-করিমন গাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দূরের কথা, চালক ও গাড়িরও কোনো নিবন্ধন নেই। এসব গাড়ির কাগজপত্র ও ফিটনেস সনদ তো দেয় না, তাহলে কোন আইনি শক্তিতে এসব গাড়ি সড়কে চলে? গাড়ির ফিটনেস দেখার পাশাপাশি এসব রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ির বিষয়েও ভেবে দেখা এখন সময়ের দাবি। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য যাদের দেখভালের কথা তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। সড়কে যানবাহন সমস্যা সমাধানে যদি ধ্যান-জ্ঞান না থাকে তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে না। সড়কে ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের চলাচল বন্ধ করলেই অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা, চাঁদাবাজি এবং অনৈতিক অর্থ লেনদেন। তা ছাড়া পুলিশের বাধা তো রয়েছেই। গণপরিহনের মান উন্নত করতে হবে। সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সরকার চাইলেই সবকিছু সম্ভব। তেমনি সরকার চাইলেই সড়কে ফিটনেসবিহীন গণপরিবহন বন্ধ করা সম্ভব।