‘আমাদের লক্ষ্য এই বিশ্বকাপ না, নেক্সট বিশ্বকাপ’ — কথাটা মনে আছে? সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের এ কথা রীতিমতো মানুষের মগজে গেঁথে আছে। প্রত্যেক বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবি হলেই সামনে চলে আসে তার এ কথা।
এখন দেখা যাচ্ছে বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদও একই পথে হাঁটছেন। না তিনি বিশ্বকাপ নিয়ে কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন বিপিএল নিয়ে। তিনি যা বলেছেন, তার সারমর্ম অনেকটা এমন— ‘আমাদের লক্ষ্য এই বিপিএল না, নেক্সট বিপিএল’।
চলতি বিপিএল কেমন যাচ্ছে, সে প্রশ্ন করলে গড়পড়তা মানুষের কাছ থেকে উত্তর আসবে একটাই, খেলার চেয়ে এখানে যেন ধুলা বেশি। যেখানে আলোচনায় থাকার কথা খেলোয়াড়দের পারফর্ম্যান্স, নতুন কে উঠে এলেন সে নিয়ে, সেখানে আলোচনায় থাকল মাঠ ছোট, অদ্ভুতুড়ে সব নো বল, ফিক্সিং সন্দেহ, বেতন অনাদায়ের মতো সব অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার।
এসবের মধ্য দিয়ে মাঠের খেলা ধীরে ধীরে শেষের দিকে চলে এসেছে। লিগ পর্ব শেষ, এখন বাকি প্লে অফ আর ফাইনালের লড়াই। তবে তার বাইরে যা হয়েছে এ পর্যন্ত, টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তি যে ক্ষুণ্ণ হয়েছে, সে বিষয়টা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।
সে প্রসঙ্গেই তিনি তাকাচ্ছেন সামনের দিকে। তার প্রত্যয়, পরের বিপিএলটা ঠিকঠাক আয়োজন করবে বিসিবি। তিনি বলেন, ‘(দুর্বার) রাজশাহী যা করেছে একটা টুর্নামেন্ট শেষ করে দিতে তারাই যথেষ্ট! তবে আজ থেকে পাঁচ মাস আগেও পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। তখন আমাদের জানানোর দরকার ছিল বিপিএল হবে কি হবে না। ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে, স্বীকার করে নিচ্ছি। তবে এখান থেকে বের হয়ে আসব। আগামী বিপিএলে দেখবেন।’
‘মানসম্মত বিদেশী খেলোয়াড়’ এর হাহাকারটা বাংলাদেশের ফুটবলে শোনা যায় কান পাতলে। তবে সে শব্দটা এখন বিপিএলেও শোনা যাচ্ছে বেশ করে। অথচ শুরুর দিকের আসরগুলোয় তারার মেলা বসে যেত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতে। আন্তর্জাতিক মানের তারকারা এসে খেলে গেছেন বিপিএলে। কিন্তু সেসব এখন অতীত। এবারের বিপিএলে ক’জন মানসম্মত ক্রিকেটার এসেছেন খেলতে, তা আপনি আঙুলে গুণে বলে দিতে পারবেন।
তার প্রধান কারণ এখন বিপিএলের সঙ্গে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সাংঘর্ষিক সূচি। বিপিএল যখন হচ্ছে, বিগ ব্যাশ, আইলিগ, এসএটি২০, পিএসএলের মতো টুর্নামেন্টগুলো মাঠে গড়ায় তখন। বেশি অর্থ, তার চেয়েও বড় কথা, অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকায় সেসব লিগেই খেলোয়াড় যাচ্ছেন বেশি।
এই বিষয়টা নিয়ে ভাবনায় আছে বিসিবি। সামনের আসর থেকে সেসবও আমলে এনে পরিকল্পনা করা হবে বলে জানান ফারুক, ‘আমরা দেখেছি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আয়োজনে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলে কাদের সঙ্গে। (আরব আমিরাতের) আইএল টি-টোয়েন্টির সঙ্গে সূচি সাংঘর্ষিক না করলে অনেক ভালো হবে। বিপিএল আয়োজনে ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দিয়ে দেওয়ার চিন্তা আমাদের। বের করেছি কী করতে হবে। ৫ দলের হলেও আমাদের কাউকে খুঁজতে হবে না। উইন্ডো বের করেছি। প্রথম-দ্বিতীয় বছরে হবে না। তৃতীয় বছরেই দেখবেন লাভের মুখ দেখবে।’
দিনকয়েক আগে রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল আকুতি জানিয়েছিলেন নেতিবাচক খবর যেন কম করা হয়। এবার ফারুকও একই সুরে কথা বললেন। তিনি জানালেন এবারের বিপিএলে অনেক ইতিবাচক বিষয়ও দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘অনেক ইতিবাচক দিক (আছে) বলতে হবে। সময় দিতে হবে আমাদের। আমাদের বুঝতে হবে এবার আয়োজনে কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল। ৯০ শতাংশ টিকিট (১০ কোটি টাকার) বিক্রি হয়েছে। মাঠে রান হচ্ছে। ভালো খেলা হচ্ছে। এই ইতিবাচকগুলো আপনারা লিখুন।’
রানের প্রসঙ্গ আসতেই উঠে আসে ছোট সীমানার বিষয়টা। ঢাকা, সিলেট পর্বে তো রীতিমতো ৬০ মিটারের আশেপাশে ছিল সীমানার দৈর্ঘ। ‘রানস্ফীতি’র বিপিএল দেখার অন্যতম কারণ তো এটাও! বিসিবি সেসবও ভাবনায় রাখবে তো ‘নেক্সট’ বিপিএলে?