
দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল এখন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ এশিয়ান কাপে। এখন তারা আঁকছে ২০২৭ নারী বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন। গতকাল জহির উদ্দিনকে দেওয়া অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার–এর সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সেই স্বপ্ন, বাস্তবতা আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা—
প্রথমবার এশিয়ান কাপে খেলবেন। এত বড় প্রাপ্তি, ভাবতে কেমন লাগছে?
আফঈদা খন্দকার: এত দিন আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে খেলেছি। এশিয়ায় সেভাবে জায়গা করে নিতে পারিনি। এবার আমাদের লক্ষ্য ছিল এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, এটা আমাদের পরিশ্রমের ফসল।
অধিনায়ক হিসেবেও এই সাফল্য আপনার প্রথম। পুরো টুর্নামেন্টে বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করেছিলেন?
আফঈদা: না। কারণ, আমি জানতাম আমাদের দলটা ভালো। একটা ব্যালান্স টিম। তা ছাড়া যে যার জায়গা থেকে সেরাটা দিয়েছে। তাই অধিনায়ক হিসেবে বাড়তি কোনো চাপ ছিল না।
মিয়ানমারে যাওয়ার আগে কি ভেবেছিলেন এমন ইতিহাস হবে?
আফঈদা: এমন কিছু কল্পনায়ও ছিল না। তবে এটা ঠিক, ভালো কিছু করার জন্য একটা জেদ, একটা ইচ্ছাশক্তি কাজ করেছিল। যেভাবেই হোক, এবার কোয়ালিফাই করতে হবে—সবার মধ্যে এমন একটা প্রতিজ্ঞা ছিল।
শেষ পর্যন্ত যখন খবর পেলেন বাংলাদেশ এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছে, তখন কীভাবে উদ্যাপনটা করলেন?
আফঈদা: আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে জিতে যাওয়ার পথেই টিম বাসে গানবাজনা, নাচানাচি করে একটু উদ্যাপন করেছিলাম। তখনো শুনিনি, আমরা কোয়ালিফাই করেছি। হোটেলে আসার পর যে যার মতো বিশ্রাম নিচ্ছিল, হঠাৎ কে যেন ফেসবুকে দেখল আমরা কোয়ালিফাই করেছি। এরপর সবাই আনন্দ করা শুরু। যে যার মতো সময়টা উদ্যাপন করেছে। আমার বাবা-মা শুনে খুব খুশি হন, দেশ থেকে তাঁরা আমাকে শুভকামনা জানান।
বাংলাদেশ এখন এশিয়ার সেরা ১২ দলের একটি। আগামী মার্চে আপনারা অস্ট্রেলিয়ায় খেলবেন, বিশ্বাস হয়?
আফঈদা: এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, আমরা কোয়ালিফাই করেছি। ২০২৬ সালে আমরা অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপে খেলব…সত্যি এটা বিস্ময়কর! আসলে সবার মধ্যে একটা তীব্র ইচ্ছা ছিল, যেভাবেই হোক আমাদের অস্ট্রেলিয়ায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেই প্রবল ইচ্ছা আমাদের এত দূর নিয়ে গেছে।

এই যে এত দূর গেলেন, এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে?
আফঈদা: প্রথমেই আমি কাজী সালাহউদ্দিন স্যারের নাম বলব। আমাদের সাবেক সভাপতি, সেই সঙ্গে কিরণ ম্যাডাম। তাঁরা দুজন যদি আমাদের জন্য দীর্ঘদিনের ক্যাম্প পদ্ধতি চালু না রাখতেন, তাহলে আজকের এই সাফল্য আসত না। বর্তমান সভাপতি স্যারও আন্তরিক। তিনি একইভাবে সবকিছু করছেন। দেখুন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এমন লম্বা সময় ধরে ক্যাম্প হওয়ার নজির নেই বললেই চলে। সেদিক থেকে আমাদের অনেক ভাগ্য। আমাদের বিদেশি কোচ আছেন, অনুশীলনের অনেক সুযোগ আছে। ফেডারেশনও চেষ্টা করে যাচ্ছে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে।
আপনার কি মনে হয়, নারী ফুটবল পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে?
আফঈদা: সেটা বলতে পারব না। তবে এটা ঠিক, আমাদের ঘরোয়া লিগ হয় না, তেমন কোনো কিছুই হয় না!
এই যে লিগ হয় না, আরও অনেক সীমাবদ্ধতা; এসব নিয়ে কতটা চিন্তিত?
আফঈদা: দেখুন, আমরা দেশের জন্য, ফুটবলের জন্য এত কিছু করছি; কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ কী? ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার পর ভবিষ্যতে আমরা কী করব। এই অনিশ্চয়তা তো আছেই।
এশিয়া কাপের টিকিট পেলেন। সেই টিকিট দিয়ে বিশ্বাকাপ ও অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করার সুযোগও আছে। বাংলাদেশ এমন সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে চায়।
আফঈদা: সুযোগ যেহেতু আছে, আমরা অবশ্যই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। তার জন্য বড় দলগুলোর সঙ্গে আমাদের বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে হবে। আরও পরিশ্রম করতে হবে। মাত্র তো কোয়ালিফাই করেছি। সামনে আরও খেলা আছে। কদিন পর অনূর্ধ্ব-২০ সাফ। আপাতত সেটা নিয়ে ভাবছি।

এ বছরের শুরুতে কোচের বিরুদ্ধে অনেকে বিদ্রোহ করেছিল। আপনি অবশ্য তাদের বাইরের। আসলে কোচ হিসেবে বাটলার কতটা পেশাদার?
আফঈদা: কোচ তো কোচই। তিনি যেভাবে শেখাবেন, আমাদের সেভাবেই শিখতে হবে। যদি তিনি রাগও করেন, ধরে নিতে হবে আমাদের ভুলের জন্যই। আবার ভালো বললেও আমাদের কারণেই। আমরা ভুল করলে তিনি রাগ করবেন, আবার ভালো করলে প্রশংসা করবেন; এটাই স্বাভাবিক। একেকজনের একেকরকম টেকনিক থাকে। এদিক থেকে আমি বলব, বাটলার স্যার খুবই ভালো একজন কোচ।
ছেলেরা যখন গোলই পাচ্ছে না, আপনারা এক ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ছয়-সাত গোল দিচ্ছেন। এত গোলের রহস্য কী?
আফঈদা: তেমন কোনো রহস্য নেই। কোচ আমাদের ফিনিশং প্র্যাকটিসটা বেশ গুরুত্ব দিয়ে করান। স্ট্রাইকারদের নিশানাও আগের চেয়ে এখন ভালো। তারা এত দিন ধরে খেলছে, একটু তো তাদের মাথায় সেই বুদ্ধিটা আছে যে কীভাবে কখন গোল করতে হবে।