
১) মেসি বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২টি গোল করেছেন–শীর্ষ পর্যায়ের কোনো একক ক্লাবের হয়ে এটাই সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ডটি ছিল পেলের, ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের হয়ে ৬৪৩ গোল করেছিলেন তিনি। পেলের মতো মেসিও বয়স ত্রিশ পেরোনোর পর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান (পেলে খেলতেন নিউইয়র্ক কসমসে)।
২) এখন পর্যন্ত মেসির মোট গোলসংখ্যা ৮৬৬–বার্সেলোনায় ৬৭২, পিএসজিতে ৩২, ইন্টার মায়ামিতে ৫০ এবং আর্জেন্টিনার হয়ে ১১২টি। এর মধ্যে বাঁ পায়ে ৭২৫, ডান পায়ে ১০৯, হেডে ২৮, বুকের মাধ্যমে ২, কোমরের সহায়তায় ১ এবং হাতের মাধ্যমে ১টি গোল করেছেন। মেসির ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোলটি এসেছিল ২০০৭ সালের জুনে এসপানিওলের বিপক্ষে।
৩) ২০১২ সালে মেসি ক্লাব ও দেশের হয়ে ৯১টি গোল করেছিলেন (৬৯ ম্যাচে), যা কোনো পঞ্জিকাবর্ষে একজন শীর্ষ খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ গোল। এই কীর্তির মাধ্যম তিনি ছাড়িয়ে যান জার্মান গ্রেট গার্ড মুলারকে। ১৯৭২ সালে ৮৫ বার বলে জালে পাঠিয়েছিলেন তিনি।
৪) ইউরোপের ‘টপ ফাইভ’ লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি। ২০২৩ সালের মে মাসে স্ট্রাসবুর্গের বিপক্ষে পিএসজির হয়ে তার শেষ লিগ গোল ছিল ইউরোপে ৪৯৬তম, যা তাকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর (৪৯৫) ওপরে তুলেছিল।
৫) মেসি রেকর্ড ৮ বার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন–অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে তিনবার বেশি। তিনি জিতেছেন: ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে।
৬) বিশ্বকাপে দুবার গোল্ডেন বল জেতা একমাত্র খেলোয়াড় মেসি–২০১৪ সালে ব্রাজিলে (আর্জেন্টিনা ফাইনালে হারে জার্মানির কাছে) এবং ২০২২ সালে কাতারে, যখন তিনি পরম আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি জেতেন।
৭) ছয়টি মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৫০ বা ততোধিক গোল করেছেন মেসি। তার সর্বোচ্চ গোলসংখ্যা ৭৩, ২০১১-১২ মৌসুমে। সেসময় বার্সা লা লিগা বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারেনি, তবে কোপা দেল রে ও ক্লাব বিশ্বকাপের পুরাতন ছোট সংস্করণ জিতেছিল।
৮) মেসি বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২টি গোল করেছেন, যা ২০০০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফ্লোরিডায় আল গোরকে জর্জ ডব্লিউ বুশ যে ব্যবধানে (৫৩৭ ভোট) হারিয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি।
৯) মাত্র ১৩ বছর বয়সে আর্জেন্টিনা থেকে বার্সেলোনায় পাড়ি জমান মেসি, লা মাসিয়া একাডেমিতে যোগ দিতে। ২০০৪ সালের অক্টোবরে বার্সার মূল দলের হয়ে অভিষেক এবং ২০২১ সালে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার মধ্যে ৩৫টি ট্রফি জিতেছেন তিনি।
১০) মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে করেছেন ১১২টি গোল–আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিন সংখ্যার ক্লাবে প্রবেশ করা মাত্র তিনজন খেলোয়াড়ের একজন। অন্য দুইজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (১৩৮), আলি দায়ি (১০৮)।
১১) ২০২২ বিশ্বকাপে, মেসি গ্রুপ, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল—সব রাউন্ডেই গোল করেন। ১৯৮৬ সালে শেষ ষোলো পর্ব চালু হওয়ার পর, এটি একটি বিশ্বকাপে প্রতিটি রাউন্ডে গোল করার প্রথম ঘটনা।
১২) মেসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হ্যাটট্রিক ৮টি— যা এই খেলোয়াড়দের সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি–রাউল, অঁরি, রুনে, সালাহ, ইব্রা, ফন পার্সি, রোনালদো (ব্রাজিলিয়ান), লুকাকু, মুলার, ত্রেজেগে, সুয়ারেজ, কাভানি, দিয়েগো কস্তা, ক্রেসপো, হিগুয়েন, মোরাতা, গ্রিজমান, আনেলকা, সানে, ইম্মোবিলে, তোরেস, ভিয়েরি, ফরলান।
১৩) মাত্র ১০ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোন ঘাটতির রোগ ধরা পড়ে, তখন উদ্বেগ ছিল এই শারীরিক অবস্থার কারণে তিনি হয়তো ফুটবলার হতে পারবেন না। চিকিৎসার মাধ্যমে তার উচ্চতা হয় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১৭০ সেমি)।
১৪) এই উচ্চতা একজন গড় আমেরিকান পুরুষের চেয়ে ২ ইঞ্চি কম এবং এনবিএ তারকা মানুট বোলের চেয়ে প্রায় দুই ফুট কম (৭ ফুট ৬ ইঞ্চি)।
১৫) মেসি ইউরোপে দু’বার ট্রেবল জেতা হাতে গোনা কয়েকজনের একজন। বার্সেলোনার হয়ে ২০০৮-০৯ এবং ২০১৪-১৫ মৌসুমে জিতেছেন লা লিগা, কোপা দেল রে ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। প্রথমবারে করেন ৩৮টি, দ্বিতীয়বারে ৫৮টি গোল।
১৬) মেসির ঝুলিতে রয়েছে একটি অলিম্পিক স্বর্ণপদকও। ২০০৮ সালে চীনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার হয়ে দুটি গোল করেন এবং ফাইনালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মূল একাদশে ছিলেন (১-০ ব্যবধানে জয়)। সেই ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেছিলেন আনহেল দি মারিয়া।
১৭) মেসির ক্যারিয়ারে মোট হ্যাটট্রিক ৫৯টি–বার্সেলোনার হয়ে ৪৮, ইন্টার মায়ামির হয়ে ১, আর্জেন্টিনার হয়ে ১০। প্রথমটি করেছিলেন ১৯ বছর বয়সে, ২০০৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে লা লিগা ম্যাচে।
১৮) বার্সেলোনার পুরুষ দলের ১২৫ বছরের ইতিহাসে মোট ৯,৬০৬ গোলের মধ্যে ৭ শতাংশই এসেছে মেসির পায়ে (৬৭২টি)। তিনি ক্লাবটির হয়ে খেলেছেন মাত্র ১৭ বছর।
১৯) ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৮৬৬ গোল করলেও কোনোটিই ম্যাচের প্রথম মিনিটে আসেনি।
২০) আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেকে লাল কার্ড দেখেছিলেন মেসি। ২০০৫ সালের আগস্টে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচে বদলি হিসেবে নামার দুই মিনিটের মধ্যেই প্রতিপক্ষকে কনুই মেরে লাল কার্ড দেখেন। পুরো ক্যারিয়ারে ৩ বার লাল কার্ড দেখেছেন (বার্সেলোনার হয়ে ১ বার, আর্জেন্টিনার হয়ে ২ বার)।
২১) ক্লাব ক্যারিয়ারে মেসির মোট ট্রফি ৪০টি–বার্সেলোনায় ৩৫, পিএসজিতে ৩, ইন্টার মায়ামিতে ২টি। গড়ে প্রতি ২২টি ক্লাব ম্যাচে একটি করে ট্রফি।
২২) এক ম্যাচে মেসির সর্বোচ্চ গোল ৫টি। ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার হয়ে বায়ার লেভারকুজেন এবং ২০২২ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে এস্টোনিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে এই কীর্তি গড়েন তিনি।
২৩) ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ছিল বিশ্বকাপে মেসির ২৬তম ম্যাচ–যা লোথার ম্যাথাউসের ২৫ ম্যাচের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
২৪) তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন–এই রেকর্ডে মেসির সঙ্গে আছেন অ্যান্টোনিও কারভাহাল, রাফায়েল মার্কেজ, আন্দ্রেস গার্দাদো, ম্যাথাউস ও রোনালদো (পর্তুগাল)।
২৫) মেসির আর্জেন্টিনা ক্যারিয়ারের মোট সময় ১৫,৯৪৭ মিনিট–যা ১১ দিনেরও বেশি। এই সময়ে মায়ামি থেকে তিনবার ক্যালগেরি (কানাডা) গিয়ে আবার গাড়িতে ফিরতে পারবেন।
২৬) আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩৮টি ভিন্ন দেশের বিপক্ষে গোল করেছেন। সবচেয়ে বেশি গোল (১১টি) করেছেন বলিভিয়ার বিপক্ষে—তবে বলিভিয়ার মাঠে কখনও গোল পাননি।
২৭) আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছেন ১৯৩টি ম্যাচ—যা দেশের এবং দক্ষিণ আমেরিকার রেকর্ড। পুরুষদের মধ্যে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ম্যাচ মাঠে নামা খেলোয়াড়দের তালিকায় তিনি চতুর্থ।
২৮) মেসি তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার বিপক্ষে—৩৮টি।
২৯) মেসি সবসময় আর্জেন্টিনার হয়ে ১০ নম্বর জার্সি পরেননি। ১৮ এবং ১৯ নম্বর জার্সিও পরেছেন। সর্বশেষ ১০ ছাড়া অন্য নম্বর ছিল ২০০৯ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে (১৮ নম্বর)।
৩০) চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইংলিশ ক্লাবগুলোর বিপক্ষে মেসির গোল ২৭—যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে ৭টি বেশি। এর মধ্যে আর্সেনালের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি, ৯টি।
৩১) মেসি ক্যারিয়ারে ৬৮টি ফ্রি-কিক গোল করেছেন—বার্সেলোনার হয়ে ৫০, পিএসজির হয়ে ২, ইন্টার মায়ামির হয়ে ৫, আর্জেন্টিনার হয়ে ১১।
৩২) কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন মেসি—৩৯টি। ২০২৪ আসরে তিনি চিলির গোলকিপার সার্জিও লিভিংস্টোনের পুরনো রেকর্ড (১৯৪০–৫০ দশক) ভেঙেছেন।
৩৩) পুরো ২০১০ এর দশকে ইংলিশ ক্লাব সান্ডারল্যান্ড প্রিমিয়ার লিগে ৮ মৌসুম কাটালেও মেসি একাই তাদের মোট গোলসংখ্যার কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন।
৩৪) পরপর সবচেয়ে বেশি ক্লাব ম্যাচে (১০ ম্যাচ) গোল করেছেন বার্সেলোনার হয়ে ২০১২-১৩ মৌসুমে, সেসময় তার বয়স ছিল ২৫।
৩৫) পরপর সবচেয়ে বেশি ক্লাব ম্যাচে (১২ ম্যাচ) গোলহীন ছিলেন। ২০০৬-০৭ মৌসুমে ১৯ বছর বয়সে এই গোলখরায় পড়েছিলেন মেসি, পরে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে খরা কাটিয়েছিলেন তিনি।
৩৬) মেসির বিশ্বকাপ জয়ের পর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবিটি ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি লাইক পাওয়া ছবি—এখন পর্যন্ত ৭৪.৬ মিলিয়নের বেশি লাইক।
৩৭) ২০২৪ সালের ৪ মে মেসি এমএলএস ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক ম্যাচে ৫টি অ্যাসিস্ট দেন—নিউইয়র্ক রেড বুলসের বিপক্ষে। তিনি সেটআপ করেন মাতিয়াস রোহাস (৪৮ ও ৬২ মিনিটে) ও লুইস সুয়ারেজকে (৬৯, ৭৫ ও ৮১ মিনিটে)।
৩৮) মেসির ক্যারিয়ারে মোট পেশাদার ম্যাচ সংখ্যা ১,১০৮—বার্সেলোনার হয়ে ৭৭৮, পিএসজির হয়ে ৭৫, ইন্টার মায়ামির হয়ে ৬২ এবং আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৩।
তথ্যসূত্র: দ্য অ্যাথলেটিক