Image description

আমিনুল ইসলাম বুলবুল গত মার্চে আজকের পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় একটা লেখা লিখেছিলেন। লেখাটায় দেশের ক্রিকেটের ইতিহাস যেমন তুলে ধরেছেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে না পারার আফসোসও ঝরেছে তাঁর লেখনীতে। একইভাবে বুলবুল দেশের ক্রিকেট নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা দারুণভাবে তুলে ধরেছেন লেখায়। অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বুলবুল কদিনের জন্য দেশে এসেছেন পারিবারিক কাজে। পারিবারিক কাজে এসে এত বড় এক দায়িত্ব নিতে হবে, কদিন আগেও কি তা আর ভেবেছিলেন!

আজকের পত্রিকার ঈদসংখ্যার লেখক কপি বুঝিয়ে দিতে গতকাল বৃষ্টিভেজা বিকেলে কারওয়ানে বাজারে সাক্ষাৎ বুলবুলের সঙ্গে। একেবারেই সাদামাটা চলনবলনে আর দশটা সাধারণ মানুষের সঙ্গে একেবারে আলাদা করার উপায় নেই তাঁকে! বৃষ্টি থেকে বাঁচতে একটা ভবনের নিচে আশ্রয় নিতেই নিরাপত্তাকর্মী হা রে রে করে এগিয়ে এলেন বুলবুলের দিকে। ভবনের নিচে দাঁড়ানো যাবে না! পাশ থেকে বুলবুলকে চিনতে পেরে বিব্রতকণ্ঠে নিরাপত্তাকর্মীকে বললেন, ওনাকে চেনেন? দ্রুত ছাতার ব্যবস্থা করে বুলবুলকে সহায়তা করা হলো পাশের আরেকটি ভবনে পৌঁছে দিতে। তিনি সাবেক অধিনায়ক, যাঁর অধীনে বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপে (১৯৯৯)। ২০০০ সালের জুনে বাংলাদেশ যখন টেস্ট মর্যাদা পায়, তখনো তিনি দলের অধিনায়ক। লর্ডসে সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক হিসেবেই। যদিও অধিনায়ক হিসেবে আর খেলতে পারেননি প্রথম টেস্ট। টেস্ট অভিষেক স্মরণীয় হয়ে আছে তাঁর আইকনিক সেই সেঞ্চুরিতে। খেলা ছাড়ার পর এসিসিতে কাজ করেছেন। এখন আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের গেম ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছেন। তিনি মাস্টার এডুকেটর, কোচদের কোচিং করান! আফগানিস্তানের মতো দলের উন্নতিতে বুলবুলের অবদান আছে।

খুব সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত বুলবুলের ঢাকায় ঢাকার নিজস্ব বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট নেই। দেশে ছুটিতে এলে ভাইদের বাসায় থাকেন। বিলাসী গাড়ি-বাড়ি তো সেখানে দূর কি বাত! সাদামাটা এই বুলবুলের আছে সারা জীবনে সঞ্চিত ক্রিকেটীয় কীর্তি আর অগাধ ক্রিকেট জ্ঞান। সেই জ্ঞান কখনো দেশের ক্রিকেটে কাজে লাগানোর প্রস্তাব পাননি তিনি। বিসিবি কখনো তাঁকে ডাকেনি। এবার ডাক পেলেন, সেটিও আবার দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রশাসনের দায়িত্বে। মাত্র ৪ মাসের দায়িত্ব নিয়ে বুলবুলের প্রধান কাজ বিসিবির একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন হলেও সাবেক এই অধিনায়ক মনে করেন, দেশের ক্রিকেটের এই ক্রান্তিকালে সংক্ষিপ্ত সময়ে অনেক ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে একটা ভালো ছাপ রেখে যাওয়া সম্ভব।

সংক্ষিপ্ত সময়ে কী কী কাজ করতে চান বুলবুল? গতকাল কারওয়ান বাজারের একটা সাদামাটা রেস্তোরাঁয় বসে বুলবুল বলে যান, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে আসার রাস্তাটা পরিষ্কার রাখতে চাই। ক্রিকেট ফ্যাসিলিটিজ ঢাকার বাইরে বাড়ানোর কাজটা করতে চান। খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজমেন্ট এমনকি সাংবাদিকদের জন্যও প্রশিক্ষণ-কর্মশালা করতে চান, যাতে দেশের ক্রিকেটে একটা সমৃদ্ধ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। বিসিবি নাইটস অ্যাওয়ার্ডস করতে চান, সেখানে ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে চান। অর্থ বিভাগে দক্ষ, সৎ প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) নিয়োগ দিতে চান। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ঠিক রাখতে বিসিবি সভাপতিসহ সবার কার্যক্রম, আর্থিক আয় ব্যয়ের যাবতীয় তথ্য বোর্ডের ওয়েবসাইটে তুলে দিতে চান। বিসিবির একটা ইয়ার বুক প্রকাশ করতে চান। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে একটা ক্রিকেট জাদুঘর নির্মাণ করতে চান। এমন আরও কত স্বপ্ন বুলবুলের চোখে।

সৎ, সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত বুলবুল তাঁর ক্রিকেট প্রজ্ঞার কতটুকু কাজে লাগাতে পারেন এই অল্প সময়ে, সেটিই দেখার। ঝুঁকিও কম নয় কিন্তু! পাপনদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় ছিল। ফারুক আহমেদ অপসারিত হয়েছেন বিতর্কের কালি নিয়ে। বুলবুল এমনই চেয়ারে বসেছেন, তাঁর তাপ অনেক। এ তাপ সামলেই তাঁকে হাঁকাতে হবে সেঞ্চুরি।