Image description

একসময় ছিলেন সাকিব আল হাসান, এখন কি তবে নাহিদ রানা?

প্রশ্নটা উঠছে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের জায়গা থেকে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আগামীকাল বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। তার আগে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আজ সাকিবকে নিয়ে সাকল্যে একটি প্রশ্নই হলো। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো টুর্নামেন্টে তাঁর মতো একজনের বাংলাদেশ দলে না থাকাটা খারাপ হলো কি না, ভারতের এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘জি না।’

আইপিএলে খেলার সুবাদে একটা সময় সাকিবকে নিজেদের মানুষই মনে করত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে সাকিবই হতেন তাদের বড় কৌতূহলের জায়গা। নতুন বাস্তবতায় সাকিব এখন দৃশ্যপটে নেই। তাঁকে নিয়ে তাই প্রশ্নেরও আকাল। তবে নতুন চরিত্র হিসেবে সামনে চলে এসেছেন বাংলাদেশ দলের পেসার নাহিদ রানা। সংবাদ সম্মেলনে হওয়া ১৬-১৭টি প্রশ্নের অর্ধেকেই কোনো না কোনোভাবে এসেছে রানার নাম। সেসব প্রশ্নের বেশির ভাগই ভারতীয় সাংবাদিকদের করা।

এখনো আইপিএলে নাম না লেখানো রানাকে নিয়ে কৌতূহল অবশ্য অন্য জায়গায়। কয়েক বছর ধরে বদলে যেতে থাকা বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের ‘পোস্টার বয়’ তিনি। তাঁর আগমনেই যেন পূর্ণতা পেল বাংলাদেশের গতিময় বোলিং। গতি আর পারফরম্যান্সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শিরোনামপ্রত্যাশী উপস্থিতি রানার। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছেও তিনিই হয়ে উঠলেন কেন্দ্রীয় চরিত্র।

সংবাদ সম্মেলনে কখনো নাহিদ রানার বোলিং নিয়ে প্রশ্ন হলো, কখনো তাঁর চোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে, কখনো আবার নাহিদ রানাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের বদলে যাওয়া পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে। এই প্রথম নাহিদ আইসিসির কোনো ইভেন্টে খেলছেন। এমনিতেই নতুন অভিজ্ঞতা, তার ওপর প্রথম ম্যাচেই মাথার ওপর ভারতীয় চাপ। অবশ্য খেলায় কী হবে, কে জানে, তার আগে সেই চাপটা আজ নাজমুল হোসেনের সংবাদ সম্মেলনেই বেশি অনুভূত হলো।

 
আগামীকাল দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত।প্রথম আলো

নাজমুল অবশ্য বলেছেন, রানা এসব চাপ-টাপ নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না। তাঁকে দেখে অন্তত সে রকম কিছু মনে হচ্ছে না অধিনায়কের, ‘যে রকম বোলিং করছে, ওর প্রতি বাড়তি নজর থাকবেই। তবে ওকে দেখে মনে হচ্ছে না সে চাপ নিচ্ছে, এত বড় টুর্নামেন্টে এসেছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে ভালোভাবে। কাল যদি ওর খেলার সুযোগ থাকে, আমি বিশ্বাস করি সেরাটাই দেবে।’

বিপিএলে টানা ম্যাচ খেলায় নাহিদ রানাকে নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা জেগেছিল। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্টের আগে না আবার চোট-আঘাত পেয়ে বসেন! নাজমুল আশ্বস্ত করেছেন, সে রকম কোনো শঙ্কা এখন আর নেই, ‘রানা ঠিক আছে। অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছে, তবে এখন ঠিক আছে। ফিজিও, ট্রেনার কাজ করেছে। ও খেলার জন্য প্রস্তুত আছে।’

 
বাংলাদেশের বদলে যাওয়া পেস বোলিংয়ের অন্যতম দৃষ্টান্ত নাহিদ রানার উত্থান।প্রথম আলো

নাজমুলের বিশ্বাস, রানার ভালো করা মানেই বাংলাদেশের ভালো করা, ‘গত কয়েকটা ম্যাচে সে ভালো বোলিং করেছে। অনেক জোরে বল করেছে। সে যদি এভাবেই বোলিং করে, সেটা আমাদের পুরো বোলিং বিভাগকেই সাহায্য করবে। প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারবে, এ রকমই বোলিং চাই। ওর বোলিংটা আমাদের জন্যও প্রেরণা। সে যেন ফিট থাকে এবং এই ফর্ম ধরে রাখতে পারে।’

ভারতীয়দের বড় আগ্রহের জায়গা—কীভাবে এ রকম বদলে গেল বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিট? এত এত পেসারের জোগান সম্ভব হচ্ছে কীভাবে? সন্দেহ নেই, তাঁদের মনে এমন আগ্রহ উসকে দিচ্ছে নাহিদ রানার গতি। নাজমুল অবশ্য বিস্তারিতভাবেই চেয়েছেন তাঁদের সে কৌতূহল মেটাতে, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেটের ধরন ও বল পরিবর্তনটা গুরুত্বপূর্ণ এখানে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ওরা ডিউক বলে বোলিং করে এবং ওদের দিয়ে প্রচুর বোলিং করানো হয়। আমাদের ফাস্ট বোলাররাও এখন উজ্জীবিত যে তারা যেকোনো কন্ডিশনে ভালো বোলিং করতে পারে।’

 

পেস বোলিংয়ে এমন ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বিসিবিকেও ধন্যবাদ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘বিসিবিকে ধন্যবাদ, তারা ফাস্ট বোলারদের নিয়ে ভেবেছে। স্থানীয় কোচদেরও অবদান আছে এখানে।’

বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের ছবিটা নতুন করে তুলে ধরা নাহিদ রানা এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজের দায়িত্বটাও একটু বাড়িয়ে নিলেন!