Image description

বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র মাস দেড়েক হলো। এরই মধ্যে তিনি যুক্ত হয়েছেন নারী ক্রিকেটার জাহানারা আলমের করা যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে গঠিত বিসিবির তদন্ত কমিটিতেও। নতুন দুই সম্পৃক্ততা দেশের নারী ক্রীড়াঙ্গনের আড়ালে থাকা এক ছবিই সামনে নিয়ে এসেছে ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজের সামনে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বিসিবির যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য হওয়ার পর মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নবনিযুক্ত সভাপতি ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ ফোনে একের পর এক ‘যৌন হয়রানি’র অভিযোগ পাচ্ছেন দেশের নারী ক্রীড়াবিদদের কাছ থেকে। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে অভিযোগ জানাচ্ছেন এবং বেশির ভাগ অভিযোগই ফেডারেশন কর্মকর্তা ও কোচদের বিরুদ্ধে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ গুলশানে নিজের চেম্বারে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘জাহানারা আলমের ইস্যুটা ওঠার পর বিভিন্ন সময়ে মেয়েরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তাঁরা তাঁদের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ মৌখিকভাবে আমার কাছে তুলে ধরেছেন। তাঁরা নাম-পরিচয় প্রকাশ করছেন না, তবে নিজেদের খেলোয়াড় বলে পরিচয় দিচ্ছেন।’

কতজনের কাছ থেকে এমন ফোন পেয়েছেন, জানতে চাইলে সারওয়াত বলেন, ‘চার-পাঁচটি খেলার অন্তত ডজনখানেক খেলোয়াড় তো হবেই।’ তবে তাঁরা কোন খেলার খেলোয়াড়, তা তিনি বলতে রাজি হননি। মেয়েদের অভিযোগ সম্পর্কে সারওয়াত সিরাজ বলেন, ‘তাঁদের কয়েকজন বলেছেন যে “আমরা এসব কথা ফেডারেশনে বলতে চাই না। আপনাদের এখানে (মহিলা ক্রীড়া সংস্থা) একটা অভিযোগ বাক্স খোলেন, যেখানে আমরা অভিযোগগুলো দেব।” আমি তাদের বলেছি অভিযোগুলো সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত আকারে দিতে, সম্ভব হলে তথ্যপ্রমাণসহ দিতে।’

মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাহানারার করা যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল বিসিবির পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে পারেনি কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আরেকটু সময় লাগবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্ট ২০০৯ সালে একটি নীতিমালা ঘোষণা করলেও এত দিন তা অনুসরণ করেনি ক্রীড়া ফেডারেশন ও সংস্থাগুলো। তবে গত ১০ নভেম্বর এ নিয়ে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) সব ফেডারেশনকে চিঠি দিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে অভিযোগ কমিটি গঠন করতে বলে। অনেক ফেডারেশনই এরপর তা করেছে।

যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আইনের ড্রাফটিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা ব্যারিস্টার সারওয়াত জানিয়েছেন, অভিযোগগুলো লিখিত আকারে পেলে মহিলা ক্রীড়া সংস্থা সেগুলো সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের অভিযোগ কমিটির কাছে পাঠাবে, ‘যে কারও যেকোনো অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হচ্ছে এই কমিটিতে একটি লিখিত অভিযোগ উপস্থাপন। সেভাবেই আমি তাঁদের পরামর্শ দিয়েছি।’

ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ
ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ

ওদিকে নারী ক্রিকেট দলের সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাহানারার করা যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল বিসিবির পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে পারেনি কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আরেকটু সময় লাগবে। কমিটির সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত জাহানারার সঙ্গে কথা বলেছেন, আইনজীবীদের মাধ্যমে কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন জাহানারা।

তবে তিনি নাকি কমিটির সঙ্গে আইনজীবীদেরসহ আরেকবার কথা বলতে চেয়েছেন। এ ছাড়া অভিযোগসংশ্লিষ্ট আরও কিছু বিষয়েও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কমিটি। জাহানারার অভিযোগটি তদন্তাধীন বলে ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো যৌন হয়রানি বা এ ধরনের যেকোনো বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সে ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বলব, আমরা কোনো মিডিয়া ট্রায়ালে বিশ্বাস করি না।’

এসব ঘটনা অনেক মেয়ে বা তাদের পরিবারের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। খেলাতে আগ্রহী করার জন্য খেলার প্রয়োজনীয়তা যেমন তাদের বোঝানো দরকার, একই সঙ্গে খেলাটা যে ক্যারিয়ার গড়ারও একটা সম্ভাবনাময় জায়গা, এটাও বোঝাতে হবে।
ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নবনিযুক্ত সভাপতি

মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জানিয়েছেন, মেয়েদের স্বাচ্ছন্দের কথা চিন্তা করে তারা তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোতে মহিলা কোচ নিয়োগের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া আগামী মাসে দেশের সব বিভাগীয় শহরে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শুরু করবেন তাঁরা, ক্যাম্পেইন হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। যেটির উদ্দেশ্য, ‘খেলাধুলায় মেয়েরা যেন ভালো ও সুস্থ একটা পরিবেশ পায়। মেয়েরা নিজেরা এবং অভিভাবকেরাও যেন তাদের খেলায় পাঠাতে উৎসাহিত হন।’ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদের খেলাধুলার ওপর বাধা আসার প্রসঙ্গ টেনে সারওয়াত সিরাজ বলেন, ‘এসব ঘটনা অনেক মেয়ে বা তাদের পরিবারের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। খেলাতে আগ্রহী করার জন্য খেলার প্রয়োজনীয়তা যেমন তাদের বোঝানো দরকার, একই সঙ্গে খেলাটা যে ক্যারিয়ার গড়ারও একটা সম্ভাবনাময় জায়গা, এটাও বোঝাতে হবে।’

 

মেয়েদের ক্রীড়াঙ্গনে সুস্থ পরিবেশ আনার লক্ষ্যে একটি প্রতীকী পদক্ষেপও নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা। খেলাধুলায় লিঙ্গসমতা ও মেয়েদের পূর্ণ অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্রাইটন প্লাস হেলসিংকি ডিক্লারেশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে জানিয়ে ব্যারিস্টার সারওয়াত বলেন, ‘আমরা প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে ব্রাইটন প্লাস হেলসিংকিতে সই করতে যাচ্ছি। আমাদের পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রমে এর প্রতিফলন দেখা যাবে।’

১৯৯৪ সালে স্বাক্ষরিত ব্রাইটন ডিক্লারেশন ১০টি মূলনীতির মাধ্যমে বিশ্বের ক্রীড়া সংস্থাগুলোকে লিঙ্গবৈষম্য দূর করে খেলাধুলাকে সবার জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ করতে উৎসাহিত করে।