Image description

মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছয়জন আওয়ামীপন্থি ডিন স্বপদে বহাল থাকার অভিযোগকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ডিনদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছেন রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকালে তিনি রাকসু ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এর আগে গতকাল শনিবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে সালাহউদ্দিন আম্মার আজ রাকসু ভবনের সামনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন।


এই ছয় ডিন হলেন আইন অনুষদের আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদের নাসিমা আখতার, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এ এস এম কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এস এম একরাম উল্লাহ, প্রকৌশল অনুষদের বিমল কুমার প্রামাণিক ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের এ এইচ এম সেলিম রেজা।

ছয় ডিনের কেউ ক্যাম্পাসে না থাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে একে একে তাদের সবাইকে কল করেন সালাহউদ্দিন আম্মার। একই সঙ্গে তাদের উদ্দেশে লেখা পদত্যাগপত্রও প্রকাশ করেন।

রাকসু ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আম্মার বলেন, ডিনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ক্যাম্পাসে উপস্থিত নন। ফোনে তারা জানিয়েছেন, তারা আর এই দায়িত্বে থাকতে চান না।

আম্মারের তৈরি করা পদত্যাগপত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ডিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। উপাচার্য বরাবর লেখা ওই পত্রে বলা হয়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তাঁদের ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ওই সময়ের কিছু সিদ্ধান্ত, বক্তব্য ও অবস্থান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, অধিকার ও স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল, এমন অভিযোগ উঠেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়।

আম্মার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ছয়টি অনুষদের ডিনদের কেউ অসুস্থ, কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন ও কেউ বৈঠকে থাকায় আজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন না। এ কারণে তাদের কার্যালয়ে তালা দেওয়ার পথে যাননি তারা। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। উপাচার্য দ্রুত নতুন ডিন নিয়োগ দিলে সেটিই ভালো হবে। তালা দেওয়ার সংস্কৃতি তাঁরা আর চান না; বরং সরাসরি পদক্ষেপ নিতে চান।

আম্মারের ভাষ্য, ছয়জন ডিন সম্মিলিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছেন যে তারা দায়িত্ব পালনে অক্ষম। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের দুটি স্পষ্ট দাবি আছে—একটি হলো তাঁদের পদত্যাগ, আরেকটি হলো প্রশাসন তাদের বিষয়ে বিচারকার্য শেষ না করা পর্যন্ত সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে তাদের বিরত রাখা। তিনি অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা এখনো জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করছেন, যা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১২টি অনুষদের মধ্যে ছয়টিতে আওয়ামী লীগপন্থী হলুদ প্যানেলের প্রার্থীরা ডিন হিসেবে নির্বাচিত হন। গত বুধবার তাদের মেয়াদ শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্বে থাকার নির্দেশ দেন উপাচার্য।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে ও আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় উত্থাপন করতে হবে। যথাযথ প্রমাণ ছাড়া কাউকে পদচ্যুত করা সম্ভব নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা চাই না কোনো শিক্ষক লাঞ্ছিত হোক।’