মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম ওভারে মুশফিকুর রহিম যখন ব্যাট হাতে খেলা শুরু করলেন, গ্যালারিতে তখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। সমর্থকদের ভিড়ে ছিলেন মুশফিকের বাবা মাহবুব হামিদও। তার উদ্বেগ সহজেই বোঝা যেত, কারণ দেশের মানুষের মতোই তার পরিবারের সদস্যরাও আর মাত্র এক রান করে মুশফিককে ইতিহাস গড়তে দেখার অপেক্ষা করছিলেন।
কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি আসে, এবং মুশফিকের রান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের আনন্দ আকাশ ছুঁয়ে যায়। মাহবুব হামিদ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বাবা মনে করলেন। খেলার আগের রাতটি তার জন্য শান্ত ছিল না; উদ্বেগ ও উত্তেজনায় ঘুম হরহামেশাই ভেঙে গেছে। সকালের দিকে তিনি আগেভাগে মাঠে পৌঁছে যান। বাবার চোখে শুধুই সমর্থন নয়, ছোট মুশফিককে বড় হতে দেখার স্মৃতিও জাগছিল।
মুশফিকের পরিবারের জন্য বিসিবি একটি হসপিটালিটি বক্স দেয়, তবে মাহবুব হামিদ গ্যালারিতেই বেশি সময় ছিলেন। প্রথম দিনের শেষে, মুশফিকের সেঞ্চুরি আর এক রান দূরত্বে না হওয়ায় মিশ্র অনুভূতি নিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, এক রানের জন্য এক রাত কষ্টের ছিল।
‘সকালে যখন একটা ওভার পুরোটা ডট খেলল, তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ও অনেক চাপ নিয়ে ফেলেছিল মনে হয়। চাপ খুব খারাপ জিনিস যে কোনো খেলায়। শেষ পর্যন্ত যখন হলো, বুকের ভেতর থেকে অনেক বড় পাহাড় নেমে গেলে যেমন লাগে, অমন আমার মনে হয়েছে, আমার অনুভূতি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বাবার মতো। মনে হয়েছে, আজকে আমিই সবচেয়ে সুখী বাবা।’- বললেন মাহমুদ হামিদ।
বাবা হয়ে ছেলের অনেক ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছেন। স্বাক্ষী হয়েছেন মুশফিকের অনেক স্মরণীয় ইনিংসের। তবে তার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার গলে সেই ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসটি। বাংলাদেশের ক্রিকেটেও যে ইনিংস অমর হয়ে আছে দেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হিসেবে।
‘ওর খেলা থাকলে আমি (দেশের) বাইরেও গিয়েছি। গলে প্রথম ২০০ রানটা আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে। যদিও ওর থেকে আগে ডাবল সেঞ্চুরি হওয়ার কথা ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। কিন্তু আশরাফুল ১৯০ রানে আউট হয়ে গিয়েছিল। মুশফিক বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। আমার কাছে এটাই ওর সেরা ইনিংস।’- এমনটাই বললেন তিনি।
খেলার সময় মুশফিকের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না; কারণ সেটা চাপ তৈরি করতে পারে। মাহবুব হামিদ মনে করেন, মুশফিক ক্রিকেটকে ভালো বোঝে এবং নিজের মতো খেলে। মুশফিকের মা-ও এই সেঞ্চুরি দেখে খুব খুশি হয়েছেন।
যদিও শততম টেস্টের ইনিংসের পর মুশফিক আউট হন, তবে তার বাবা তৃপ্ত। মাহবুব হামিদ মনে করেন, মুশফিকের ক্রিকেটে নিষ্ঠা ও কঠোর অনুশীলন অন্য খেলোয়াড়ের থেকে তাকে আলাদা করে। কেউ দক্ষতায় হয়ত তার রেকর্ড ছাড়াতে পারে, তবে মুশফিকের মতো ত্যাগী ও ধারাবাহিক প্রস্তুতি সম্পন্ন ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া সহজ নয়।
‘যা হয়েছে, আমি তৃপ্ত। প্রথম দিনে হয়ত শতক হয়নি, তবে পরে কোনো ম্যাচে হতে পারত। বাবা হিসেবে ছেলের পারফরম্যান্সই আমাকে সবচেয়ে খুশি করেছে। এখন যা হবে, সেটা আমাদের জন্য বাড়তি পাওয়া।’