খালেদা জিয়া বিধবা হন ৩৬ বছর বয়সে। তখন তিনি একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান-দুই সন্তান নিয়েই ছিল তার সংসার। তার পুরো নাম ছিল খালেদা খানম।
জিয়াউর রহমান ১৯৬০ সালে যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন, তখন তাদের বিয়ে হয়। তিনি বিয়ের পরই তার স্বামীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে খালেদা জিয়া নাম নিয়েছিলেন বলে তার বোন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছেন। তবে রাজনীতিতে নামার পরই তিনি পরিচিত হন খালেদা জিয়া নামে।
তার বড় বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, সে সময় খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে কোনো চিন্তাই ছিল না। এর আগে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ও খালেদা জিয়া কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হননি।
তবে, খালেদা জিয়া তার স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর নিজ দক্ষতায় হাল ধরেছিলেন বিএনপির। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয় এবং অন্যদিকে নেতাদের অনেকে তখন সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের সঙ্গে শরিক হন।
সব মিলিয়ে দলটি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। সেই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া বিএনপিতে যোগ দেন ১৯৮৩ সালের ৩রা জানুয়ারি। প্রথমে তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। এর পরের বছর ১৯৮৪ সালের ১০ই মে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।
তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বিএনপির সাবেক নেতা অলি আহমেদ।
খালেদা জিয়া সেই ১৯৮২ সালে যখন বিএনপির নেতৃত্বে আসেন, তখন জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসন চলছিল। সেই শাসনের বিরুদ্ধে নয় বছরের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তিনি রাজনীতিতে নিজের এবং দলের অবস্থান তৈরি করেন বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন।
বিএনপির নেতৃত্ব নেয়ার পরের বছর ১৯৮৩ সালে তিনি সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠন করে এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন।
অন্যদিকে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আট দলীয় জোট এবং বামপন্থী দলগুলোর পাঁচ দলীয় জোট। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের জোট এরশাদ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তবে বিএনপির জোট নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নয় বছর রাজপথের আন্দোলনে থাকায় খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন।
এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনবার। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন। নির্বাচনে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবক'টি আসনেই নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।