Image description

লন্ডনে দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গেলো ২৫ ডিসেম্বর তার দেশে ফেরার পর রাজনীতিতে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। অন্যদিকে, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে যাচ্ছে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এমন আলোচনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্ভাবনা, জোটের অঙ্ক এবং নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ আরও স্পষ্ট হচ্ছে। হয়তো তারেক রহমান ও নাহিদ ইসলামকে ঘিরেই ভোটের সমীকরণ বদলে যেতে পারে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় ও সংগঠিত রাজনৈতিক দল। তারেক রহমানের দেশে ফেরা দলটিকে সাংগঠনিকভাবে তো বটেই, মনস্তাত্ত্বিকভাবেও আরও শক্তিশালী করেছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান বগুড়া-৬ ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

সম্প্রতি তারেক রহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে বলেছেন, দেশে ফেরার দিনটা নিজের জীবনে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে তার। তিনি সর্বস্তরের মানুষকে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য ধন্যবাদ দেন। দেশকে নিয়ে তার ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি শুধু কোনো স্বপ্নের কথা বলিনি, আমি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি বাস্তব পরিকল্পনার কথা বলেছি। যে বাংলাদেশে শান্তি ও মর্যাদা থাকবে, যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজেকে নিরাপদ ও সম্মানিত মনে করবে, আর প্রতিটি শিশু আশার আলো নিয়ে বড় হবে। এই পরিকল্পনা সব বাংলাদেশির জন্য। একটি ঐক্যবদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের জন্য। সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার মতো বাংলাদেশের জন্য।’

এনসিপি ও নাহিদ ইসলাম

জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে আসা নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টি তরুণদের একটি অংশের কাছে নতুন রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মধ্যপন্থির রাজনীতির অঙ্গীকার নিয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি দলটির যাত্রা শুরু হয়। নির্বাচনি ডামাডোলে শুরুতে তারা বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনায় গেলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বিশেষ করে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর ভোটের অঙ্ক নতুন করে সাজাতে হচ্ছে এনসিপিকে। ফলে দলটি এখন পুরোনো রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠনের পথে এগোচ্ছে।

সম্প্রতি এনসিপির তরফে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকেই তারা অধিকাংশ সংস্কারের বিষয়ে জামায়াতের সঙ্গে একমত পোষণ করে আসছে।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গেই অন্য দলগুলোর মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হতো। সেখানে সংস্কারের পয়েন্টগুলোতে ন্যাচারালি (স্বাভাবিকভাবেই) এনসিপি, জামায়াত এবং অন্য দলগুলো একমত হয়েছে। সংস্কারের বিষয়, দেশটাকে নতুন করে গড়া, নতুনভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে গড়ে তোলার জন্য যে রাজনীতি, সে রাজনীতির প্রতি যে কমিটমেন্ট; সেটাকেই নির্বাচনি রাজনীতিতে জোটের বা সমঝোতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রধানতম বিবেচ্য বিষয় হিসেবে মূল্যায়ন করছি।’

জোটের রাজনীতি ও সংকট

২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। সুতরাং জোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও খুব কম। অনেকে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোটকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও এনসিপির জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তে দলটির অনেক নেতারই আপত্তি রয়েছে। এর মাঝে দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া জোট নিয়ে আপত্তি জানিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ নেতা আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে চিঠিও দিয়েছেন।

নেতৃত্বের সমীকরণ

অনেকে সম্ভাবনার কথা বলছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম তাকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করে। একদিকে অভিজ্ঞ, আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত তারেক রহমান, অন্যদিকে আন্দোলন থেকে উঠে আসা, তরুণ নেতৃত্বের প্রতীক নাহিদ ইসলাম। যদি জামায়াত-এনসিপি জোট বাস্তবায়িত হয়, তবে নাহিদ ইসলাম হতে পারেন সেই জোটের মুখপাত্র। এমনকি ভোটের মাঠে তিনি বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকাতেও উঠে আসতে পারেন।

রাজনৈতিক আলোচনায় চাওর হচ্ছে, আগামী দিনের বাংলাদেশের নেতৃত্ব কার হাতে যাবে? সে ক্ষেত্রে ক্ষমতায় বিএনপি গেলে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদে শক্তিশালী বিরোধী অবস্থানে নাহিদ ইসলাম, এই দুই ভিন্ন ধারার রাজনীতি একসঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ রচনা করতে পারে