Image description
 

সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের (সেনা, নৌ ও বিমান) সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নির্বিঘ্নে শেষ করতে গত ২১ ডিসেম্বর সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে আলোচনার জন্য ২০ ডিসেম্বর তাদের জরুরি ভিত্তিতে ডাকা হয়। তবে বৈঠকের পর কোনো পক্ষ আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে মুখ না খোলায় বিষয়টি নিয়ে রহস্য তৈরি হয়।

 

সভাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইসির বিভিন্ন সূত্র জানায়, বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরা। দেশ রক্ষায় নিয়োজিত তিন বাহিনীর প্রধানদের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে কমিশনও বেশ আশ্বস্ত হয়েছে এবং ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরেছে। সভায় বাহিনীগুলোকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

 

সাংবিধানিক সংস্থাটির নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো অপরাধী গ্রেপ্তার হলে তাকে ভোটের আগে ছাড়া যাবে না। এমনকি আসামি ছাড়াতে রাজনৈতিক নেতাদের তদবির এলেও তাতে কর্ণপাত করার সুযোগ নেই। তবে নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন- সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া কমিশন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কিছু কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।

গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় এক ইসি কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, ‘আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আর শঙ্কা নেই। যথাসময়েই তা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ সমর্থন আছে। নির্বাচন হবে না বলে একটি মহল নানা শঙ্কার কথা বলছে, এগুলো গুজব। ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

ইসি-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ ডিসেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি নিহত হয়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের জরুরি বৈঠকের জন্য ডাকা হয় এবং ২১ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

একই কারণে নাম প্রকাশ না করে আরেক নির্বাচন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন- নির্বিঘ্নে, ভয়হীন ও শঙ্কামুক্ত নির্বাচন করতে সব ধরনের সহায়তা ইসিকে দেওয়ার ব্যাপারে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরা সিইসিকে আশ্বস্ত করেছেন। তারা জানান, যদি প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা ও নিরাপত্তা প্রদানে নির্বাচনে কোনো ঘাটতি থাকে, সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে তারা নির্বাচনটি যথাসময়ে শেষ করবেন। গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আসন্ন সংসদ নির্বাচন হতেই হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, বৈঠকটি ছিল সৌজন্যমূলক। তবে নির্বাচনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরা।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর ওইদিন বিকালে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। এরপর ২৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি-এসপি ও ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। আর গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহর সভাপতিত্বে সব গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে আবুল ফজল ছাড়া ইসির দুই কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মোবাইল কোর্ট আইনের আওতায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য বিচারিক ক্ষমতা চাওয়া হয়েছিল; কিন্তু তা নাকচ করেছে ইসি।

অপরদিকে গোয়েন্দা সংস্থার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- এমন কয়েকজন জানান, নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, সবাই নিজ নিজ বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলবেন, কমিশনের পক্ষ থেকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলা হওয়ার আশঙ্কা থেকে সবাইকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে বলা হয়েছে। অপরাধী যে-ই হোক, তাদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনি প্রচার শুরু হলে আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং নির্বাচনে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। শহরকেন্দ্রিক নাশকতার চেষ্টাও হতে পারে। এগুলো প্রতিহত করার জন্য সব গোয়েন্দা সংস্থাকে গোপন নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।