Image description

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুরের চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। তবে এসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের পাশাপাশি দলের বিদ্রোহীদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিএনপির প্রার্থীদের। পাশাপাশি মাঠে সরব আছেন এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্য দল ও স্বতন্ত্র সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

স্বতন্ত্রদের মধ্যে রয়েছেন- ফরিদপুর- ৩ (সদর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, ফরিদপুর-১ আসনে কাঞ্চনমুন্সি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন, শিল্পপতি আবুল বাশার, ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন থেকে স্থপতি মুজাহিদ বেগমসহ কমপক্ষে ছয় জন।।

ফরিদপুরের-৪ আসনে বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তবে চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে আশাবাদী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন। তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভোটে প্রভাব ফেলবে না। বিভেদ ভুলে সবাই ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবে।’

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মুহাম্মাদ বদরুদ্দীন বলেন, ‘চার আসনেই আমাদের ভালো অবস্থান রয়েছে। এখন ইসলামী সমমনা ৮ দলের বিষয়ে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি মেনে নেওয়া হবে।’

ফরিদপুর-১

(বোয়ালমারী- আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী) উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-১ আসন। আসনটি
বরাবরই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। গত ৫ আগস্টের পর বিএনপির প্রভাব বাড়লেও দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সঙ্গে কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিবাদে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। গত ৭ নভেম্বর উপজেলা সদরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।

এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থকেরা।

খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বহুদিন পরে গণতান্ত্রিক
অধিকার প্রয়োগের সুযোগ এসেছে। এটি কাজে লাগাতে দলে কোনও ভেদাভেদ না রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি।’

শামসুদ্দীন মিয়া বলেন, ‘খন্দকার নাসিরকে মনোনয়ন দিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করা হয়েছে। তার কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই, এলাকায় তার কোনো ভোট নেই। যারা দলকে আজকের পর্যায়ে এনেছে, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইলিয়াস মোল্লা। নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

দলের জেলা আমির মুহাম্মদ বদরুদ্দীন বলেন, একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ইলিয়াস মোল্লার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে।’

এই আসনে রয়েছে প্রভাবশালী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। একজন কাঞ্চনমুন্সি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানও সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন। আরেকজন সাবেক ছাত্রদল নেতা শিল্পপতি আবুল বাসার খান। দোলন গত জাতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে ৮৬ হাজার ভোট পেয়ে ছিলেন । নিবাচনি এলাকাটিতে তার রয়েছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা।

ফরিদপুর-২

সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এখান থেকে নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান। এবার বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন তার মেয়ে শামা ওবায়েদ ইসলাম। নির্বাচনি প্রচারে বাবার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আমির সোহরাব হোসেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন শাহ আকরাম আলী। ফরিদপুরে তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুরব্বি হিসেবে পরিচিত। ইসলামি বক্তা হিসেবেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।

শাহ আকরাম আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আলেম-ওলামাদের সমর্থক বেশি। সেই হিসেবে চেষ্টা করছি ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী হতে। সভা-সমাবেশে যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমি বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।’

এই আসনটিতে বিএনপির প্রার্থীকে বেগ পেতে হবে ইসলামীপন্থী ৮ দলীয় প্রার্থীর
সঙ্গে।

ফরিদপুর-৩

ফরিদপুর সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে ফরিদপুর-৩ আসন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের দখলে। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তার মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফকে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে তাকে মেনে নিতে রাজি নন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোদাররেছ আলী ইছার অনুসারীরা। চৌধুরী নায়াব ইউসুফের প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সমাবেশও করেছেন তারা।

চৌধুরী নায়াব ইউসুফ বলেন, ‘আমার বাবা এখান থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এটা প্রমাণিত যে ফরিদপুর সদরের মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। মানুষ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। তারা আবার বিএনপির শাসন ফেরাতে চায়।’

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুত তাওয়াব নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারে দখল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিমুক্ত একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। স্বতন্ত্র হলেও তাকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। তবে গত ১৯ অক্টোবর তার গণসংযোগে বিএনপি সমর্থকদের হামলার পর তাকে আর মাঠে দেখা যায়নি।

নির্বাচনে এ আসনে খেলাফত মজলিস থেকে আমজাদ হোসাইন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে কামরুজ্জামান ও ইসলামী আন্দোলন থেকে কে এম সারোয়ার কাজ করে চলছেন।

ফরিদপুর-৪

ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন। এখানে বিএনপির প্রার্থী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবলু। তার পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুর-২ আসনে হলেও দল তাকে এখানে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি নিয়মিত ধানের শীষের পক্ষে কাজ করে চলছেন।

আসনটিতে রয়েছেন জামায়াতের প্রার্থী ভাঙ্গা উপজেলা আমির সরোয়ার হোসেন। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তিনি।

খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান মোল্লাও আছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন স্থপতি মুজাহিদ বেগ। আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ক্লিন ইমেজ রয়েছে এই স্থপতির।

তবে বরাবরই এই আসনে আওয়ামী লীগের ভোটের পরিমাণ বেশি, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ওই ভোট যে দিকে যাবে জয়ের সম্ভাবনা সেদিকেই বেশি বলে মনে করেন অনেকেই।