Image description

ক্ষমতায় গেলে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে-এমন প্রতিশ্রুতি রয়েছে বিএনপির। তাই নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ধানের শীষবিহীন মিত্র দলের প্রার্থী করা সঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির নেতারা। সেক্ষেত্রে নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা যেতে পারে বলে বৈঠকে এক নেতা পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য মিত্রদের নিয়ে ‘ডেমোক্রেটিক রিফর্ম অ্যালায়েন্স’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং ক্ষমতায় গেলে উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যোগ্যতা অনুযায়ী মিত্র দলের শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব দেবে। তবে, এই প্রস্তাব নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে একধরনের টানাপড়েন চলছে বিএনপির। শিগগিরই এর অবসান হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মিত্রদের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা আসন বণ্টনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দূরত্ব বা সংকট নিরসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন কমিটি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়টির সমাধান করবে। এর অংশ হিসাবে আজ বুধবার ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। এছাড়া দ্রুততম সময়ে পর্যায়ক্রমে গণতন্ত্র মঞ্চ ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গেও বসবে দলটি।

১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে বুধবার (আজ) ১২ দলীয় জোটের বৈঠক রয়েছে। নির্বাচন ও আসনসহ সার্বিক বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী এবং সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও বিবেচনায় নিয়ে মিত্রদের মধ্যে কেবল বিজয়ী হতে পারার মতো নেতাদেরই আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, শুধু আসন ছাড়লেই হবে না, তাদেরকে জিতিয়েও আনতে হবে। দলটি চায় না, মিত্রদের জন্য ছাড়া আসন জামায়াতের কাছে চলে যাক। একইসঙ্গে জোটের ঐক্যও ‘যৌক্তিকভাবে’ টিকিয়ে রাখতে চায় বিএনপি। তাই জোটের বড় বা সিনিয়র নেতা, কিন্তু ভোটের মাঠে যাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম- তাদের সংসদের উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যথাযথভাবে জায়গা করে দেওয়া হবে।

নির্বাচন সামনে রেখে মোট ২৭২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ফাঁকা রয়েছে আরও ২৮ আসন। বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, এই ফাঁকা আসনগুলোর বেশির ভাগই মিত্রদের ছাড় দেওয়া হবে। তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী দল ও জোটের প্রার্থী তালিকা জমা দিলেও তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তারা বিস্মিত, অনেকে ক্ষুব্ধও। দুই দফায় ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় অন্তত ছয়টি আসনে ‘অনিবন্ধিত’ মিত্ররা ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

জানা গেছে, শরিকদের কাঙ্ক্ষিত আসনগুলোর মধ্যে যেখানে বিএনপি ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে, সেগুলোর কয়েকটিতে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘যৌক্তিকভাবে’ জোটের ঐক্য ধরে রাখতে চায় বিএনপি। তাই মিত্রদের মধ্যে যাদেরকে শেষ পর্যন্ত আসন ছাড়া সম্ভব হবে না, আগামীতে সরকার গঠন করলে তাদেরকে যোগ্যতা অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়ন করবে দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আসন বণ্টন বা সমঝোতা নিয়ে সব শরিকের সঙ্গে অসন্তোষ বা সমস্যা হয়নি, কিছু কিছু শরিকের সঙ্গে হয়েছে। এলডিপিসহ দু-একটি ইসলামী দলের সঙ্গে তাদের মোটামুটি বোঝাপড়া আছে। এসব আসনে বিজয়কে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যারা বিজয়ী হতে পারবে, তাদের আসন ছাড় দেওয়া হবে। বাকিদের অন্যভাবে সম্মান জানানো হবে।

এদিকে বৈঠকে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য দলের কিছু প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তার মধ্যে সরকার গঠন করলে বিভিন্ন সেক্টরে কৃষক কার্ড, ফ্যামিলি কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, ক্রীড়াসহ অন্তত ৮টি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতি যাতে প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায়, সেজন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে লিফলেট থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হবে। মাঠে নামানো হবে পেশাজীবী ও নেতাকর্মীদের। নির্বাচনের তফসিলের পরেই তারা এ কাজে নেমে পড়বে।

বৈঠকে নির্বাচনের তফসিল নিয়েও আলোচনা হয়। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ আজ বা কালের মধ্যে এই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি মনে করছে, তফসিলের মধ্য দিয়ে দেশ পুরোপুরি নির্বাচনি প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে যাবে।

এছাড়া বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে স্থায়ী কমিটিকে ব্রিফ করেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন-তাকে কীভাবে সুস্থ করে তোলা যায়। আপাতত তাকে লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে না।