রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চার দিন আগে কাজে নেওয়া গৃহকর্মী আয়েশাকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর বাসা থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী খোয়া যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে—লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে দায়ের করা মামলায় বাদী আ জ ম আজিজুল ইসলাম উল্লেখ করেন, সকালে বাসা ছাড়ার পর থেকে স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের দেখতে পান। গুরুতর আহত মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার স্ত্রীকেও বাসার রান্নাঘরসংলগ্ন করিডোরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সন্দেহভাজন গৃহকর্মী আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বাসায় কাজে আসে। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে সে বাদীর মেয়ের স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন গৃহকর্মীর গতিবিধি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হলেও তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই বারবার অবস্থান পরিবর্তন করছে সে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আয়েশা নিজেকে জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিলেও বাসায় কাজে রাখার সময় তার জাতীয় পরিচয়পত্র বা বিস্তারিত কোনো তথ্য রাখা হয়নি। ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট না মিললেও অ্যানালগ পদ্ধতিতে তার প্রকৃত পরিচয় ও অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে—একাই কি গৃহকর্মী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে? তবে পুলিশ বলছে, বাসা ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজে অন্য কারও উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সহিদুল ওসমান মাসুম বলেন, “ঘটনার সময় অন্য কাউকে দেখা যায়নি। তবে সব দিক বিবেচনায় রেখেই তদন্ত চলছে।”
মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “প্রাথমিকভাবে মূল্যবান সামগ্রী লুটের উদ্দেশ্যেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে আসামিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
নিহত লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) দাফন সম্পন্ন হয়েছে নাটোর শহরের গাড়িখানা কবরস্থানে। এর আগে জোহরের নামাজের পর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ নাটোরের বড়গাছা এলাকায় তাদের পৈতৃক বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
ঢাকাটাইমস