Image description
 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে নির্বাচনী জোট গঠনের গুঞ্জন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত এক ইস্যু। সর্বশেষ এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে বিএনপি-এনসিপি ঐক্য নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে দেখা গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনে সমঝোতার বিষয়ে দল দুটির মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও চলছে। এসবের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬টি আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। এই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতার সম্ভাব্য নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।

আর এতে করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের নানান জল্পনা পাখা মেলতে শুরু করেছে। বিএনপি-এনসিপি সম্ভাব্য জোটের প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়ল কি না, সে আলোচনাও হচ্ছে বেশ জোরেশোরে। তবে এনসিপি নেতারা বলছেন, এ নিয়ে তারা ভাবছেন না। তারাও ৩০০ আসনেই প্রার্থী ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি সপ্তাহেই প্রথম ধাপের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে ঢাকার আলোচিত আসনগুলোও রয়েছে। যেসব আসন থেকে এনসিপির হেভিওয়েট নেতাদের নির্বাচন করার আলোচনা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০ এবং ঢাকা-১৮ আসন।

 

সবুজবাগ, খিলগাঁও ও মুগদা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। সেখানে বিএনপি হাবিবুর রশিদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বৃহত্তর উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ আসনে এনসিপি থেকে ভোটের মাঠে লড়বেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এই আসনে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ ছাড়া আলোচিত ঢাকা-১০ আসনেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। যেখানে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে থাকা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। বিএনপি গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলে তাতে ঢাকা-১০ আসন ফাঁকা রাখা হয়। এতে আসিফকে ঘিরে গুঞ্জন আরও পাকাপোক্ত হয়।

 
 

তবে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণাকালে মির্জা ফখরুল জানান, ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন শেখ রবিউল আলম। যদিও আসিফ কোনো দলের হয়ে নির্বাচনে লড়বেন নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করবেন, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।

 

এর আগে ২৩৭ আসনের ঘোষিত তালিকায়ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ঢাকা-১১; সদস্য সচিব আখতার হোসেনের রংপুর-৪; মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর কুমিল্লা-৪; মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের পঞ্চগড়-১ এবং সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদের নোয়াখালী-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী দেখা যায়।

এনসিপির একাধিক নেতা কালবেলাকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোট কিংবা আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত নয়। একই আলোচনা জামায়াতের সঙ্গেও রয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় ভিন্ন একটি জোট গঠনেরও চেষ্টা আছে। এনসিপি এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। বিএনপি এবং জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করলেও জোট কিংবা আসন সমঝোতা হলে সেসব আসনে প্রার্থী তুলে নেবে বলেও মনে করেন তারা।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। খুব শিগগির আমরা আমাদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করব। জোট, আসন সমঝোতা নিয়ে নানান আলোচনা আছে। তবে কোনোটিই চূড়ান্ত নয়। কারা প্রার্থী ঘোষণা করল-না করল, সেটা নিয়ে আমরা আপাতত ভাবছি না। যদি জোট বা আসন সমঝোতা হয় তখন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

যদিও এর আগে গত বুধবার দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ঐক্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছিলেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আজ দেশপ্রেমিক শক্তির সামনে একসঙ্গে দুটি যুদ্ধ। মুজিববাদ ও মওদুদীবাদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক, আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের দায়ভার। এ দুই যুদ্ধ একা কোনো দল লড়তে পারবে না। তাই বিএনপি ও এনসিপি—গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ধারার দুই শক্তির মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ঐক্য প্রয়োজন। তবে এ ঐক্যের শর্ত রয়েছে: বিএনপিকে তার পুরোনো সীমাবদ্ধতা ও পরিবারতন্ত্রের ছায়া থেকে বের হতে হবে। বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে। আর যারা ভারতের প্রভাব-রাজনীতির দিকে ঝুঁকে আছে, তাদেরও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলধারায় ফিরে আসতে হবে।’

কিন্তু বিএনপি এরই মধ্যে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের আসনে প্রার্থী ঘোষণা করায় সম্ভাব্য জোট গঠনের আলোচনায় কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। যদিও নেতারা বলছেন, জোট হিসেবেই বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির দর কষাকষি হবে। যার সঙ্গে লাভ হবে, তার সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করা হবে। লাভ না হলে এককভাবেই নির্বাচনের পক্ষে নেতাকর্মীরা।

জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়া প্রসঙ্গে এক অনুষ্ঠানে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘এটি নির্ভর করবে বেশকিছু বিষয়ের ওপর। যে রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে থাকা মৌলিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে নিশ্চয়তা দেবে, শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেবে এবং কাজে ও কথায় মিল থাকবে, তাদের সঙ্গে আমাদের জোট হতে পারে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এনসিপি যদি এই প্রতিশ্রুতিগুলো পায়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট হতে পারে। যদি না পায়, তাহলে শুধু কয়েকটি আসনের জন্য এনসিপি জোট করবে না। এনসিপি একেকভাবে নির্বাচন করবে।’