দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শাখা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামিনকে সভাপতি এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জহিরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কমিটি ঘোষণার পরই ৯ সদস্যের এই আংশিক কমিটির মধ্যে সভাপতিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সহ নেতাকর্মীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বেশ কিছু ছবিতে দেখা গেছে, নতুন কমিটির সভাপতি মো. ইয়ামিন অতীতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। পতিত সরকার প্রধান শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গাছ লাগানোসহ একাধিক কর্মসূচিতে তার উপস্থিতির ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। কমিটির সহ-সভাপতি তুহিন রানার বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জুলাই হামলায় জড়িত এক ছাত্রলীগ কর্মীকে বাঁচাতে তিনি আত্মসমর্পণ আবেদন দাখিল করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি পোমেল বড়ুয়ার সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ছবিও সামাজিক যোগামাধ্যমে মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রচার সম্পাদক মাসুদ রানাকেও বঙ্গবন্ধুর প্ল্যাকার্ড হাতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচির প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতির বিরুদ্ধেও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে শিক্ষার্থীদের সাথে সভাপতি ইয়ামিন ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন রাফিকে নাচতে দেখা যায়।
এদিকে কমিটিতে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ইমরান খাঁন শ্রাবণ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন মুন্না।
বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রতিষ্টাকালীন সাধারণ সম্পাদক ইমরান খাঁন শ্রাবন বলেন, আমি নিজের জীবন যে সংগঠনের জন্য বিলিয়ে দিয়েছি সেখানে আমার ক্যাম্পাসই ছাত্রদলের কমিটি ঘোষনা করা হলো নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকারী হিসাবে আটক প্রক্টর তথা আওয়ামী লীগের শিক্ষক শরীফের আস্থাভাজন জুলাই বিপ্লবের সময় হেলমেট পরে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারন সম্পাদক মশিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছাত্রলীগ কর্মীসহ নেশাগ্রস্তদের দিয়ে। এই বিষয়টি আমাকে খুবই মর্মাহত করেছে।
তিনি নিজের ফেইসবু ওয়ালে নতুন দায়িত্ব পাওয়া সভাপতি ইয়ামিন ও সহ সভাপতি তুহিন রানার বেরোবি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়ার সাথে বেশ কয়েকটি ছবি ও শেয়ার করে তিনি লেখেন, অভিনন্দন! বেরোবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি। ছাত্রদল নামে ছাত্রলীগের পূর্নবাসন সম্পন্ন হলো। এরা সকলেই ছাত্রলীগের প্রথমসারির নেতা ছিল, আজ ছাত্রদলের নেতা। যারা এমন কমিটি দিলেন তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
বেরোবি শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন মুন্না লিখেন, ছাত্রলীগের কর্মী দিয়ে কমিটি! এ কেমন ছাত্রদলের কমিটি! বেরোবির ছাত্রদলের ইতিহাসের এক কলংকিত অধ্যায়। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এহেন কাণ্ডজ্ঞানহীন কমিটি প্রত্যাখ্যান করলাম। বেরোবিতে ছাত্রদলের কি এতোই কর্মীর অভাব পরছে?
অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে ছাত্রদল বেরোবি শাখার নতুন সভাপতি ইয়ামিন বলেন, আমরা নতুন কমিটি সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করব। এটাই আমাদের কাজ। এসব ছবি ইডিট করা। এগুলো আমাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ছড়ানো হচ্ছে। কমিটিতে সকল রানিং শিক্ষার্থী দিয়েই করা হয়েছে, সকলেই খুশি।
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকার পরও কিভাবে কমিটিতে রাখা হয়েছে এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার কল দিলেও তারা কল রিসিভ করেনি।
দীর্ঘ পাচঁ বছর পর বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে স্থান পেয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রিফাত হোসেন রাফি, সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব গাজী, দপ্তর সম্পাদক মোঃ সুমন হোসাইন, প্রচার সম্পাদক মোঃ মাসুদ রানা এবং ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক মোছা. আসমা আক্তার খুশি। এর আগে ২০২১ সালের ১৬ জুন বেরোবি শাখা ছাত্রদলের সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।