আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে এই জোটের আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত এনসিপি, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে একটি বিষয়ে এনসিপি তীব্র ‘আপত্তি’ জানায়। এ ছাড়া জোট নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। মূলত এই দুই কারণে জোট গঠনের আলোচনা চূড়ান্ত হয়নি।
গতকাল বিকেল থেকে প্রায় চার ঘণ্টা এই নির্বাচনী জোটের লাভ-ক্ষতি নিয়ে এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলে আলোচনা হয়। সভায় বেশির ভাগ নেতা জোটের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। কিন্তু ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশকে (ইউনাইটেড পিপল বাংলাদেশ) এই জোটে রাখার প্রশ্নে এনসিপির বেশির ভাগ নেতা নেতিবাচক মত দেন।
পরে রাত ১০টা থেকে ঢাকার বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের একটি জায়গায় গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে এনসিপির নেতাদের বৈঠক শুরু হয়। সেখানে এনসিপির পক্ষ থেকে ছিলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম এবং মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আর গণ অধিকারের পক্ষে ছিলেন দলের সভাপতি নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ ও শহিদুল ইসলাম।
বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনায় গণ অধিকার পরিষদের নেতারা এনসিপির নেতাদের কাছে জানতে চান, জোটের কোনো রূপরেখা তৈরি হয়েছে কি না। এনসিপি নেতারা বলেন, সেটি এখনো তৈরি হয়নি। গণ অধিকারের নেতাদের কেউ কেউ তাড়াহুড়া করে জোটের আত্মপ্রকাশের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার কথা বলেন। তাঁরা এ-ও বলেন, জোটের বিষয় নিয়ে আরও আগে থেকে আলোচনা হতে পারত। এমনকি গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে এনসিপির সঙ্গে দল একীভূত করার প্রসঙ্গটিও বৈঠকে তোলা হয়।
গণ অধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খান আলোচনায় এসব বিষয়ে বেশি শক্ত অবস্থানে ছিলেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। জানতে চাইলে রাশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোট গঠনের বিষয়ে বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
জোট হলে তা হবে তফসিলের আগেই
রাত একটার দিকে এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম। রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তাঁদের আলোচনা চলে। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে মীমাংসা না হওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। পরে আজ সকালে এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন সাংবাদিকদের এক বার্তায় জানান, এনসিপির সঙ্গে কিছু দলের সমন্বয়ে আজ কোনো জোট ঘোষণা হচ্ছে না। আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, মূলত দুটি কারণে জোট গঠনের প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে। এগুলো হলো আপ বাংলাদেশের বিষয়ে এনসিপির নেতিবাচক মনোভাব আর গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যে জোটে আসা নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি।
জানতে চাইলে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এনসিপি, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জেএসডি—এই পাঁচটি দলের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের আলোচনা চলছে, যা নির্বাচনী জোটে রূপান্তরিত হবে। জোট যদি হয়, তাহলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই হবে।