বাসযোগ্য, আধুনিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে সাতটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। এগুলো হচ্ছে- জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষা, শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী, ক্রীড়া এবং ধর্ম। এসব বিষয়ে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কী করবে; তা প্রতিশ্রুতি আকারে ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লিফলেটের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। দলের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ে একাধিক টিম দ্রুতই মাঠে নামছে। এরই মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আসনভিত্তিক কাজ শুরু করেছে।
গত সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করবে, তা নিয়ে এখন থেকেই পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করেছে। ডে ওয়ান থেকে আমাদের পারফর্ম করতে হবে। ১ কোটি মানুষকে চাকরি দেবÑ এটা আমরা হোমওয়ার্ক করেই বলেছি। দেশ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরিকল্পনা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
শিক্ষা ও দক্ষ জনবল তৈরি : শিক্ষা খাতে পরিবর্তন আনার লক্ষ্য এই খাতে বাজেট বাড়ানো, স্কুল থেকেই ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষা চালুর পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এর আওতায় স্কুল পর্যায়ে আইটি, খেলাধুলা, আর্ট কালচার, ডেন্টাল হাইজিন, মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য কারিগরি শিক্ষা চালু করা হবে। প্রাইমারি থেকে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি তৃতীয় ভাষা এবং হাইস্কুল থেকে আরও একটি ভাষা চালু হবে। আরবি, জার্মান, ফরাসি, জাপানি ও চীনা ভাষা শেখার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। এতে বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো যাবে এবং কর্মীরা সম্মানজনক মজুরি পাবেন। ক্যাম্পাসে মেধাভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির সংস্কৃতি চালু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, আবাসন সংকট নিরসন এবং লাইব্রেরিগুলোকে অনলাইন এবং অফলাইনে আধুনিকায়ন করার প্রতিশ্রুতি ভোটারের সামনে তুলে ধরা হবে। নারী শিক্ষার প্রসার, দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি। ১০ লাখের বেশি আউটসোর্সিং ফ্রিল্যান্সারদের লেনদেন নিরাপদে করতে জরুরি নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং পেপাল ও ওয়াইল্ড চালু করার প্রতিশ্রুতি থাকবে লিফলেটে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থা : ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাজ্যের (ইউকে) ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এনএইচসির আদলে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। এ জন্য হেলথ কার্ড করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বিনামূল্য প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি গ্রামে পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার পরিককল্পনা রয়েছে। এখানে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ নারীকে নিয়োগ দেওয়া হবে। বিদেশমুখী চিকিৎসার বিস্তার রোধ করতে তিন ধাপ- স্বল্পমেয়াদি (এক থেকে তিন বছর), মধ্যমেয়াদি (এক থেকে পাঁচ বছর) এবং দীর্ঘমেয়াদি (১০ বছর পর্যন্ত) পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। দেশের সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গেও চুক্তি করা হবে।
কৃষিব্যবস্থা : প্রতিটি কৃষককে ফার্মার্স কার্ড দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে তাঁরা মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই সরাসরি ভর্তুকি, ন্যায্য দাম, ঋণ, কৃষি বীমা ও সরকারি ক্রয় সুবিধা পাবেন। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাতে কোল্ড স্টোরেজ লজিস্টিক্স থেকে শুরু করে রপ্তানিমুখী খাদ্যশিল্প পর্যন্ত ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। তরুণদের কৃষি উদ্যোগে যুক্ত করতে মেকানাইজেশন, ড্রোন প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে কৃষিতে ফিরিয়ে আনতে চায় দলটি।
জলবায়ু : ২০ হাজার কিলোমিটার নদী ও খাল পুনরুদ্ধার, সম্প্রদায়ভিত্তিক সেচ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন এবং আধুনিক তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনাও করছে বিএনপি। অল্টারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং’ ধান চাষ সম্প্রসারণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা পানির অপচয় কমাবে, পানি সংরক্ষণ করবে এবং বাংলাদেশকে কার্বন ক্রেডিট থেকে কোটি কোটি ডলার আয় করতে সহায়তা করবে।
নারী : ফ্যামিলি কার্ড’ ও ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের গৃহপ্রধান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার নেত্রী হিসেবে ক্ষমতায়ন করা।
ধর্মীয় : ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে সমান আচরণ করতে চায় বিএনপি। ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি উপাসনালয়ের ইমাম, মুয়াজ্জিন অথবা পুরোহিতসহ ধর্মগুরুদের জন্য মাসিক ভাতা এবং উৎসব ভাতা দেওয়া হবে।
ক্রীড়া : যুব সমাজকে সঠিক পথে ধরে রাখতে ক্রীড়ায় বিশেষ গুরুত্ব দেবে বিএনপি। এ জন্য ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে ক্রীড়াবিদ বাছাই করা হবে।
দলের সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রচারে নেমে গেছেন। পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চওয়া শুরু হয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়া-৩, বগুড়া-৪ ও ৫ আসনের প্রার্থীদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারী শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, আগামী দিনে বিএনপি যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়, প্রতিটি পরিবারে নারীপ্রধানের নামে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে, যা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারবে। তিনি বলেন, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, তারেক রহমান নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নও করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশের নারী সমাজ জেগে উঠলে বাংলাদেশে পরিবর্তন হবে।