Image description

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা। ঢাকার মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে খুন এবং চট্টগ্রামে নির্বাচনি প্রচারের মধ্যে গুলির ঘটনায় সংগঠিত অপরাধচক্রের উত্থান দেখা যাচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আধুনিক অস্ত্র, কিশোর-তরুণের সমন্বিত গ্যাং নেটওয়ার্ক এবং বিদেশ থেকে পরিচালিত ভার্চুয়াল কমান্ড রুম।

নিরাপত্তা সংস্থা এবং পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কিছু গ্যাং রাজনৈতিক নেতা, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখছে। তাদের উদ্দেশ্য—নির্বাচনের আগে সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করা, এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি এবং অপরাধচক্রকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে টাকা কামানোর নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশ তৈরি করা।

নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া গ্যাং নেতা এবং বিদেশে গা-ঢাকা দেওয়া অপরাধীরা আবার তাদের চক্র গঠন করছে। তারা এনক্রিপটেড অ্যাপ, আন্তর্জাতিক ফোন নম্বর, হুন্ডি নেটওয়ার্ক ও ভার্চুয়াল রুম ব্যবহার করে তাদের অনুসারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছে। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা তৈরির মাধ্যমে নির্বাচনি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা রয়েছে তাদের।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় থাকলেও মাঠপর্যায়ে শান্তি বজায় রাখতে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অদৃশ্য রাজনৈতিক অপরাধী নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা। কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার আশীর্বাদ রয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়াদের ওপর। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিয়মিত রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহে ঢাকায় যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুনরুত্থানের ভয়াবহতাকে নতুন করে সামনে এনেছে। গত ১০ নভেম্বর ঢাকার ব্যস্ততম আদালত এলাকার মাত্র কয়েক গজ দূরে দিন-দুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। আদালতপাড়ার মতো উচ্চ নিরাপত্তার স্থানে এমন প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুঃসাহসকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এর মূল পরিকল্পনাকারী আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি, যিনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ডিবি পুলিশ তাকে ঢাকার অপরাধ জগতের নতুন ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রনি প্রথমে মুদি দোকানি এবং পরে ডিশ ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করলেও কারাগারে থাকা ইমনের মাধ্যমে অপরাধচক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত পরিচিতি পান। ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে জানা গেছে।

এরপর গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় পল্লবীর সেকশন-১২ এলাকায় একটি হার্ডওয়্যার দোকানে গুলি করে হত্যা করা হয় স্থানীয় যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে। তদন্তে উঠে এসেছে, মালয়েশিয়ায় থাকা সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান মামুন এ খুনের প্রধান পরিকল্পনাকারী।

এর আগে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারের সময় টার্গেটেড শুটিংয়ে নিহত হন সরোয়ার হোসেন বাবলা। পুলিশের ভাষ্য, তিনি স্থানীয় চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে যুক্ত ছিলেন। এ হত্যার সঙ্গে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা উল্লেখ করেছে স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ঢাকা-চট্টগ্রাম উভয় শহরেই সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে, যা নতুন করে নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে।

আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুনরুত্থান

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া বা বিদেশে লুকিয়ে থাকা বহু কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবার দৃশ্যমান হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বড় শহরগুলোয়। কিলার আব্বাস, সানজিদুল ইসলাম ইমন, পিচ্চি হেলাল, সুইডেন আসলাম, মোল্লা মাসুদ, টোকাই সাগর, জিসান, সাজ্জাদ—এসব নাম আবার আলোচনায় এসেছে। নিরাপত্তা সূত্রে জানা গেছে, এদের কেউ কারাগার থেকে, কেউ বিদেশ থেকে এনক্রিপটেড প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের নেটওয়ার্ককে নির্দেশ দিচ্ছে। দৈনিক চাঁদাবাজি, এলাকা দখল, টার্গেট কিলিং, ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপারেশন অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে।

ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ একাধিক এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নামে চাঁদাবাজি ও হুমকি দিন দিন বাড়ছে। ইংল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যের কোডযুক্ত নম্বর থেকে ফোন করে ‘চাঁদা দিতে হবে’—এমন বার্তা পেয়ে আতঙ্কিত ভুক্তভোগীরা থানায় জিডি করছেন। হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবনে ভয়ংকর অস্ত্রের মহড়া, ফাঁকা গুলি ছোড়া এবং বিদেশি নম্বর রেখে যাওয়া—সবই ইমনের তৎপরতার নতুন রূপ। এলাকাবাসী বলছেন, এসব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য নির্বাচনের আগে এলাকা নিয়ন্ত্রণ দেখানো এবং চাঁদাবাজির অঙ্ক বাড়ানো।

মিরপুরে নতুন গ্যাং

মিরপুরের অপরাধ জগতে সম্প্রতি ‘ফোর স্টার’ নামে একটি নতুন গ্যাংয়ের উত্থান ঘটেছে, যা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মামুন, ইব্রাহিম, শাহাদাত ও মুক্তার নেতৃত্বে পরিচালিত এ চক্র চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংগুলোর ওপর আক্রমণ চালিয়ে পল্লবী এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। গত এক বছরে মিরপুর জোনে গ্যাং-সংঘাত ও হত্যাকাণ্ডের যে রেকর্ড তৈরি হয়েছে, তার নেপথ্যে এ চক্রের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা ‘ফোর স্টার’ গ্রুপের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। তার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং তিনি তাদের ব্যবহার করে এলাকায় নিজের আধিপত্য বজায় রাখছেন।

এই ফোরস্টার গ্রুপের শেল্টারদাতা এবং মিরপুর অঞ্চলে চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকা মহানগরের রাজনীতিতে প্রভাবশালী এই নেতাকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দলটির তৃণমূলের ভেতর। একসময় তার স্বচ্ছ ভাবমর্যাদা থাকলেও রাজনীতির ময়দানে তা এখন বিতর্কের ঘূর্ণিপাকে। দলে আদর্শ ফেরানোর পরিবর্তে তিনি চাঁদাবাজি, পদ বাণিজ্য, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের ‘শেল্টার’ দেওয়া এবং স্বৈরাচারী গোষ্ঠীর দোসরদের পুনর্বাসনের মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত—এমন অভিযোগ উঠেছে নিরপত্তাসংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থার তথ্য ও তৃণমূলের কর্মীদের বক্তব্যে।

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি এসেছে একজন বিএনপি নেতার হত্যাকাণ্ডের মামলাকে কেন্দ্র করে। আশিয়ান সিটি ও স্বদেশ প্রোপার্টিজের বিরোধে সংঘটিত ওই হামলায় এক যুবনেতা নিহত হন। ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তি বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু অভিযোগ আছে—ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর মামলার গতিকে প্রভাবিত করতে বর্তমানে প্রভাবশালী মহানগর উত্তরের এই নেতা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। মাত্র তিনদিনের মাথায় ওই দাগি আসামিকে জামিনে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেন, যা তৃণমূল পর্যায়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

মিরপুরের পরিবহন খাতেও তার একচ্ছত্র চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, শিকড় পরিবহনের বৈধ মালিক ও এমডিকে তাদের মালিকানা বুঝিয়ে না দিয়ে তিনি ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ওই দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আওয়ামী লীগের দোসরদের হাতে। এক্ষেত্রে উঠে এসেছে মিরপুরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের পরিচিত নাম কচি ও নান্নুর প্রসঙ্গ। তাদের দোসরদের হাতে পরিবহনের অবৈধ দায়িত্ব দিয়ে এই নেতা কোটি কোটি টাকার সম্পদ দখল ও চাঁদাবাজির পথ সুগম করেছেন।

গার্মেন্ট সেক্টর, পরিবহন খাত এবং সিটি করপোরেশনের কাজের কমিশন—সবই নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, দলের দুর্দিনে যারা রাজপথে ছিলেন না, এমন সুবিধাবাদী, সাবেক আওয়ামী এমপি ইলিয়াস মোল্লার সম্পত্তির জিম্মাদার ও আওয়ামী লীগের দালালদের টাকার বিনিময়ে দলে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয়কে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বানানোর পাঁয়তারা করছেন। একটি সহযোগী সংগঠনের সভাপতি হিসেবে চাঁদপুর জেলার একজন বাসিন্দাকে বসানো হয়েছে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে। সহযোগী সংগঠনের ওই নেতার অতীত ইতিহাস খুবই বিতর্কিত বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর যখন তৃণমূল নেতারা হামলা-মামলার ভয়ে লুকিয়ে ছিলেন, সেই সময়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সামাজিক অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহফিলে উঠাবসা করতেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরকম বেশ কয়েকটি ছবি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

পুরোনো সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের পুনরুত্থান

পুরোনো গ্যাং নেতারা আবার মাঠে নেমেছে। কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া বা গা-ঢাকা দেওয়া সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হচ্ছে। কিলার আব্বাস, ইমন, পিচ্চি হেলাল, টোকাই সাগর, জিসান, সাজ্জাদ—এসব নাম এখন ফের আলোচনায়। তারা আবারও চাঁদাবাজি, টেরিটরি দখল, মাদক, গ্যাংযুদ্ধ—সবদিকেই তাদের পুরোনো নেটওয়ার্ককে পুনর্গঠন করছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, যদিও কিছু নেতা কারাগারে ছিল, তাদের আন্তঃসংযোগ শেষ হয়ে যায়নি; তারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে থেকে স্থানীয় গ্যাং সদস্যদের নির্দেশ দিচ্ছেন। গ্যাং নেতারা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করছেন। রাজধানীর ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর—সব এলাকায়ই গ্যাং এবং সন্ত্রাসীদের ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি কিছু এলাকায় কোডযুক্ত বিদেশি নম্বর থেকে চাঁদাবাজির হুমকিবার্তা আসে, যা বিদেশ থেকে পরিচালিত গ্যাং অপারেশনের প্রমাণ বলেই অভিজ্ঞরা মন্তব্য করছেন।

জানা যাচ্ছে, ইমন, পিচ্চি হেলাল, মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে ঢাকায় কয়েকটি সন্ত্রাসী চক্র চাঁদাবাজি ও জমি দখলের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে কুষ্টিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া সুব্রত ও মাসুদ ছাড়া বাকিরা এখনো বিদেশে পালিয়ে আছে বলে জানা গেছে।

একসময় মগবাজার, মতিঝিল, পল্টন ও মালিবাগ এলাকায় প্রভাব বিস্তারকারী সুব্রতের গ্রেপ্তারের পর বর্তমানে জিসান গ্রুপ মালিবাগ, মতিঝিল, মগবাজার, বাড্ডা ও মহাখালী নিয়ন্ত্রণ করে বড় চুক্তি, জমি ও ব্যবসা থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে ইমন মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, হাজারীবাগ ও নিউ মার্কেট এলাকায় প্রভাব বজায় রাখছে আর তার সহযোগী রনি, কাল্লু ও শহীদুল বেরাইখালী থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত চাঁদা তোলার কাজ করছে।

রায়েরবাজার এলাকায় ইমনের সহযোগীরা জোর করে চাঁদা নেওয়ার পাশাপাশি পণ্যও নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে তারা মাসে এক লাখ টাকা দিতে সম্মত হওয়ার পর ইমন গ্রুপের উৎপাত কমেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পাইকপাড়া, কল্যাণপুর, আদাবর ও মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন স্থানে পিচ্চি হেলাল গ্রুপ ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলে আর মিরপুর–১ ও শাহআলীতে স্থানীয় বাণিজ্য, ঠিকাদারি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশে থাকা সন্ত্রাসী শাহাদাতের লোকজন।

মিরপুর ১০, ১৩ ও ১৪, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত ও ভাসানটেকে কিলার আব্বাস ও ইব্রাহিম গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্তরা নিয়মিত ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে, এমনকি নির্মাণসামগ্রী বাড়তি দামে কিনতেও বাধ্য করছে। এর মধ্যেই নতুন নাম হিসেবে উঠে এসেছে ‘পর্দা রনি’, একসময় ছোট ব্যবসায়ী হলেও এখন আন্ডারওয়ার্ল্ডের শক্তিশালী মুখ হিসেবে পরিচিত রনি, সে সন্ত্রাসী ইমন গ্রুপের ঘনিষ্ঠ। রনি এমন এক নতুন গোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা এলাকা, ভোটপ্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেছেন, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও মামুনের মধ্যে সম্প্রতি দ্বন্দ্ব বেড়েছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয়, সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী বলেন, ঢাকার অপরাধ পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগ না করেই আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখেছে।

সীমান্ত থেকে রাজপথে অস্ত্রবাজার

দেশে অবৈধ অস্ত্রের সংকট নেই; বরং সরবরাহ বেড়েই চলেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে, টেকনাফ, বেনাপোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও মেহেরপুরসহ অন্তত ১৮টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিত ঢুকছে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও অ্যামুনিশন। নদীপথ, ট্রানজিট, নাফ নদের অগভীর পয়েন্ট, এমনকি ছোট দ্বীপাঞ্চল ব্যবহার করে অস্ত্র চোরাচালান চলছে গোপনে। জুলাই বিপ্লবে দেশের বিভিন্ন থানায় লুট হওয়া পাঁচ হাজার ৭৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে এক হাজার ৩৪০টি এখনো নিখোঁজ। গোয়েন্দারা বলছেন, এ অস্ত্রগুলোই এখন রাজধানীর বড় গ্যাংগুলোর হাতে, যা নির্বাচনের আগে পরিস্থিতিকে আরো অনিশ্চিত করে তুলছে। যদিও র‍্যাব গত চার মাসে ১৮৯টি এবং বিজিবি ৯ মাসে এক হাজার ২২৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে, তবুও পুলিশের নিখোঁজ অস্ত্র শনাক্তকরণে খুব বেশি অগ্রগতি নেই। গোয়েন্দাদের দাবি, ৭৫টির বেশি গ্যাংয়ের হাতে এখন স্বয়ংক্রিয় বিদেশি অস্ত্র রয়েছে।

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা

নিরাপত্তা সংস্থার একাধিক সূত্র বলছে, নির্বাচনি মাঠে নিজেদের সুবিধা নিশ্চিত করতে কিছু রাজনৈতিক নেতা আন্ডারওয়ার্ল্ডকে ‘হায়ার্ড মাসল’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ভোটভীতি তৈরি, বিরোধী প্রার্থীর প্রচারে হামলা, কেন্দ্র দখল, এলাকায় আধিপত্য—এসব কাজে অপরাধী চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইমন, পিচ্চি হেলাল, জিসান, কিলার আব্বাসÑএসব আলোচিত সন্ত্রাসী রাজধানীর কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার আশীর্বাদে নিরাপদে চলছে। বিদেশ ফেরত কিছু গ্যাং গডফাদার অনলাইনে ‘কমান্ড রুম’ চালিয়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মাঠপর্যায়ের গ্যাংগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামেও একই চিত্র। পাঁচলাইশ, পতেঙ্গা, রাউজান, হালিশহর ও বন্দর এলাকায় সক্রিয় রয়েছে অন্তত ১৫টি সশস্ত্র গ্রুপ। গত কয়েক বছরে শহরে ৩৫টি টার্গেট কিলিং, ১৫টি প্রকাশ্যে গুলি এবং ২০০টির বেশি চাঁদাবাজির অভিযোগ নথিভুক্ত আছে। নির্বাচনের আগে এসব গ্যাং নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে।

সক্রিয় বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা

নিরাপত্তা সংস্থার কিছু সূত্র দাবি করছে, বিদেশে অবস্থানকারী কিছু গ্যাং গডফাদারের সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর একটি অংশের যোগাযোগ রয়েছে, যারা নির্বাচনি অস্থিরতা বাড়াতে আন্ডারওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করতে আগ্রহী।

এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় সরকারি মহল আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলছে না। তবে গোয়েন্দারা বলছে, যেসব আন্তর্জাতিক কল ও এনক্রিপটেড চ্যানেলের মাধ্যমে নির্দেশ আসছে, তার মধ্যে কিছু যোগাযোগ প্রতিবেশী দেশের নম্বর ও সার্ভার থেকে পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচনের আগে আন্ডারওয়ার্ল্ডকে রাজনৈতিক চাপ বা প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করার চেষ্টা জোরদার হতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে।

ভার্চুয়াল কমান্ড ও রিমোট অপারেশন

শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগার বা বিদেশে থাকলেও তাদের প্রভাব অনেকাংশে রয়ে গেছে। এনক্রিপটেড কমিউনিকেশন অ্যাপ, বিদেশি ফোন নম্বর এবং অনলাইন কমান্ড রুম তাদের আধুনিক অস্ত্র। তারা তাদের অনুসারীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন দূর থেকে আর স্থানীয় গ্যাংগুলো সে নির্দেশনায় কাজ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ডিজিটাল কমান্ড স্ট্র্যাকচার গ্যাংগুলোর গঠনকে আরো কাঠামোবদ্ধ করেছে। তারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিতে পারে, নতুন সদস্য নিয়োগ করতে পারে এবং নির্বাচনের আগে নিজের প্রভাবকে অগ্রাধিকার দিতে পারে। শীর্ষ গ্যাং নেতারা তাদের অর্থ ও প্রভাব রেমিট্যান্স চ্যানেল, হুন্ডি নেটওয়ার্ক ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বজায় রাখছেন। তাদের চাঁদাবাজি ও স্থায়ী ফান্ডগুলো নির্বাচনের সময়ে অত্যন্ত কার্যকর অস্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে।

নিরাপত্তা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ডিএমপি, র‍্যাব ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসব গ্যাং দমনে কাজ করছে। তারা অস্ত্র উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করেছে। তবে তাদের কাজ কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান।

প্রথমত, গ্যাং নেটওয়ার্কে রাজনৈতিক সহায়তা বেশ গভীর। অনেকে বলছেন, গ্যাং নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজনৈতিক ‘গ্রিন সিগন্যাল’ না পেলে সংবিধান ও আইন শতভাগ মেনে চলা কিছু ক্ষেত্রে দুরূহ হয়ে ওঠে।

দ্বিতীয়ত, গ্যাং-অস্ত্র-অর্থের জটিল যোগাযোগব্যবস্থা মোকাবিলায় গোয়েন্দা কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। হুন্ডি নেটওয়ার্ক, অনলাইন আর্থিক লেনদেন এবং রেমিট্যান্স চ্যানেলগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে এবং প্রমাণ সংগ্রহ করতে আরো শক্তিশালী এবং সমন্বিত ব্যবস্থা প্রয়োজন। তৃতীয়ত, দ্রুত বিচার ও শাস্তি কার্যকর না হলে, গ্যাংয়ের সদস্যরা সহজেই তাদের অপব্যবহার চালিয়ে যেতে পারে। বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতি এবং সহজ জামিনব্যবস্থা অপরাধীদের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে।

নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পরামর্শ

নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ভোটারের বিশ্বাসেও বড় প্রভাব ফেলছে। যখন ভোটাররা জানে যে, তাদের এলাকায় গ্যাংশাসিত ক্ষমতা আছে এবং গ্যাং ভোটভীতি সৃষ্টির জন্য নিয়োজিত হতে পারে, তখন তাদের অংশগ্রহণ কমে যেতে পারে।

গ্যাং চক্রের প্রভাব বিশেষত গরিব বা অপর্যাপ্ত সংস্থাপনা এলাকায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কিশোর গ্যাং গঠন, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি—এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাবোধ ও আস্থা নষ্ট করে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। তারা বিনিয়োগ কমাচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হচ্ছে। এটি নির্বাচনেও প্রভাব ফেলে। কারণ জনমত গঠন এবং ভোটাভুটি প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ সীমিত হতে পারে।

আরো বলা হয়েছে, নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সহিংসতামুক্ত রাখতে হলে আন্ডারওয়ার্ল্ড তৎপরতা মোকাবিলায় দ্রুত এবং সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। এছাড়া জরুরি সীমান্ত নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ পয়েন্ট বৃদ্ধি করা। অবৈধ অস্ত্রপ্রবাহ বন্ধ করতে কাস্টমস, সীমান্ত বাহিনী ও গোয়েন্দাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর্থিক চেইন-ট্রেসিং শক্তিশালী করতে হবে।

হুন্ডি, অনলাইন ছদ্ম লেনদেন ও রেমিট্যান্স চ্যানেলগুলোতে নজরদারি বাড়িয়ে অপরাধী অর্থপ্রবাহ চিহ্নিত করতে হবে। দরকার রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করা। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়া যে, তারা কোনো গ্যাং বা সন্ত্রাসীর সঙ্গে সমঝোতা করবে না এবং অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে না। দ্রুত বিচার নিশ্চয়তা করা।

সন্ত্রাসী ও গ্যাং-সংক্রান্ত অপরাধগুলোর জন্য দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া ও কঠোর শাস্তি প্রযোজ্য করতে হবে, যা অপরাধীদের জন্য ভীতি সৃষ্টি করবে। কমিউনিটিভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠন করা। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় ও সিভিল সংগঠন একসঙ্গে কাজ করে সতর্কতা সভা, হটলাইন ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল গঠন করতে পারে। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি-স্ট্র্যাটেজি অপরিহার্য।

ভারতের র-এর সঙ্গে গ্যাং চক্রগুলোর পারস্পরিক সংশ্লেষ এবং আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের ভয়, অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দল ও সমাজ একত্রে কাজ না করে, তাহলে আগামী ভোট প্রক্রিয়া শান্তিময় ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক এএইচএম শাহাদাত হোসেন আমার দেশকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে অপরাধী চক্র সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে পুলিশ সম্পূর্ণ সতর্ক ও নজরদারিতে করছে। কোনো চক্র নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে সহিংসতা, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বা অস্ত্রের ব্যবহার করার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি ও সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিম রাজধানীসহ সারা দেশে টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করেছে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে।

পুলিশ এর আগে এসব অপরাধীকে নজরদারিতে রাখার কথা বললেও অধ্যাপক ফারুক প্রশ্ন তোলেন তা কীভাবে সম্ভব। প্রতিদিন এত বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটছে। পুলিশের নজরদারির সক্ষমতার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, দ্রুত চিহ্নিত অপরাধীদের পুনরায় গ্রেপ্তার করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্যই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। না হলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা কমবে, যা দেশকে আরো অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে।