বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার আদর্শ অনুসরণে ‘ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে আগারগাঁও বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় ইমাম–খতিব সম্মেলনে তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের তাঁবেদারি শাসন-শোষণের মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে, ইমান, ইসলাম এবং দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে ঐক্যের বিকল্প নেই। তাই দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা সুসংহত করার জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি এমন একটি কল্যাণমূলক সমাজব্যবস্থার পক্ষে, যেখানে মুসলমানরা নিঃসংকোচে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারবে। নির্ভয়ে, নিরাপদে ইবাদত করতে পারবে। একইভাবে অন্য ধর্মের মানুষেরা নিরাপদে, নিশ্চিন্তে যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করতে সক্ষম হবে।
বিএনপি ইসলামের মূলনীতি কিংবা মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে কখনো আপস করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না বলেও উল্লেখ করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান বলেন, লাখ লাখ মসজিদ, মাদ্রাসা, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসাশিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রীয় অগ্রগতিমূলক কার্যক্রমের বাইরে রেখে দেশে কখনোই টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা থেকে বিএনপি আগামী দিনের কর্মসূচিতে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ইমাম-খতিব পরিষদের দাবির বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বেশ কয়েকটি দাবি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করার সব রকম সুযোগ রয়েছে। ইমাম-খতিব–মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল (চাকরিবিধি) প্রণয়নের দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক। অনেক মসজিদে মসজিদ কমিটির ইচ্ছা–অনিচ্ছার ওপরে ইমাম-মুয়াজ্জিনের চাকরি নির্ভর করে, এটি হতে পারে না। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সার্ভিস রুল প্রণয়নের ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্যোগ নেবে। অন্য দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগও গ্রহণ করবে। তবে প্রতিটি দাবি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ যাতে বিএনপিকে দেওয়া হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপি মনে করে, সমাজ সংস্কারকের ভূমিকা পালনকারী ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিনদের মধ্যে যাঁরা আর্থিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এমন বাস্তবতায় তাঁদের মধ্যে যাঁরা আর্থিক টানাপোড়েনে আছেন, তাঁদের প্রতি মাসে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানী ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। ক্ষমতায় যেতে পারলে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের সম্মানী দেওয়ার পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। একই সঙ্গে ইমাম–মুয়াজ্জিনদের আর্থিকভাবে আরও স্বাবলম্বী করার জন্য ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করার চিন্তা রয়েছে বিএনপির।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজি, হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল হাবিব প্রমুখ।