Image description
প্লট দুর্নীতি মামলা, নতুন করে সাক্ষ্য গ্রহণের আর্জি আসামি খুরশীদের

ভিন্ন কৌশলে খেলছেন শেখ হাসিনা এবং তার দুর্নীতির সহযোগিরা। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্লট দুর্নীতি মামলার রায়ের তারিখ ছিলো গতকাল বুধবার। ঠিক এ সময় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন অন্যতম আসামি খুরশীদ আলম। তিনি ছিলেন রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি)। হঠাৎ হাজির হয়েই তিনি সাক্ষীদের নতুন করে সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন জানান।

এর ফলে আদালত রায় ঘোষণা করতে পারেননি শেখ হাসিনার দুর্নীতি মামলার। রায়ের দিন হাজির হয়ে অন্য সাক্ষীদের ‘রি-কল’ করার এ কৌশলকে হাসিনা ও তার সহায়ক দুর্নীতিবাজদের চাতুর্যপূর্ণ কৌশল বলে মনে করছেন প্রসিকিউশন। এর ফলে হাসিনার দুর্নীতি মামলাটি দীর্ঘসূত্রিতায় নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অথচ, এ মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে গতকালই হাসিনার বিষয়ে আসতে পারতো বিচারিক সিদ্ধান্ত। তিনি অপরাধ করেছেন কী, করেন নি- সেই ফয়সালা হতে পারতো গতকালই। সেটি ঠেকিয়ে দেয়া হলো আসামি খুরশীদ আলমের চাতুর্যপূর্ণ ও নাটকীয় আত্মসমর্পণে।

গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

আত্মসমর্পণকারী আসামি খুরশীদ আলমের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহিনুর ইসলাম তার জামিন প্রার্থনা করেন। দুদকের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ তার জামিনের বিরোধীতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

রাজউকের এই সাবেক কর্মকর্তা শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্লট দুর্নীতির একাধিক মামলার আসামি। এসব মামলার একটিতে শেখ হাসিনাসহ ১২ জন, আরেকটিতে সজীব ওয়াজেদ জয় ও শেখ হাসিনাসহ ১৭ জন এবং অপর মামলায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও শেখ হাসিনাসহ ১৮ জন আসামি রয়েছেন।

এর আগে গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অপরদিকে বাকি তিন মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

মামলাগুলোর একটিতে শেখ রেহানা, টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ আসামি ১২ জন। আরেকটিতে আজমিনা, টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৭ জন এবং অপর মামলায় রাদওয়ান ববি, টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য ছিলো গতকাল।

প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ছয় মামলা করে দুদক। মামলায় ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার কন্যা ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আরেক কন্যা আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তিসহ আরো অনেককে আসামি করা হয়। এজাহারে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। অযোগ্য হলেও তারা পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।

এদিকে দুদকের প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, গতকাল ছিলো হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি মামলার রায় ঘোষণার তারিখ। সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তি উপস্থাপনসহ বিচারিক সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের পর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান ছিলো। পুরো বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় প্রধান আসামি শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে। বিচার চলাকালে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাতে আসামিরা কোনো সাড়া দেননি। আত্মসমর্পণও করেননি। কিন্তু রায়ের দিন নাটকীয়ভাবে এক আসামির আত্মসমর্পণ এবং পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে করা একটি কূটকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, এর ফলে হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় সহসাই রায় ঘোষণার বিষয়টি আপাতঃ ঝুলে গেলো। আদালত যদি আসামি খুরশীদ আলমের আবেদন খারিজও করে দেন তাহলে এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন। সেই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রায় ঘোষণা সম্ভব নয়। এতে নতুন এক জটিলতায় নিপতিত হলো মামলাটি। যা অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং দুরভিসন্ধিমূলক। পুরো বিচারের সময় উক্ত আসামি আত্মগোপনে থেকে হঠাৎই উদয় হলেন রায় ঘোষণার দিন। যা কূটকৌশলের অভুত নিদর্শন।