জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, অন্তর্বর্তী সরকার এবং আরও দু’-একটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ বলে মনে করছে বিএনপি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেয়া সুপারিশমালার অনেকগুলোতে এই দুই দলের চাওয়া প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে মনে করে দলটি। এ ঘটনায় বিএনপি বিস্মিত এবং একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ। এসব আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন সঠিক সময়ে না করার অপচেষ্টা হিসেবে দেখছে দলটি। গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে নেতারা বলেন-বিএনপি সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিএনপি’র ‘নোট অব ডিসেন্ট’ লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাদ দেয়া হয়েছে। এটা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এটা করে ঐকমত্য কমিশন চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে কার্যত অনৈক্য সৃষ্টি করছে।
‘রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ আলোচনার পর গত ১৭ই অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ থেকে যায়। এরমধ্যে গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা তুলে দেন।’ এ বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এতে নেতারা, গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জারিকৃত লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) এবং আইয়ুব খান প্রবর্তিত বেসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। নেতাদের ভাষ্য, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ঠিক একইভাবে দু’টি দলের প্রস্তাব ও ঐকমত্য কমিশনের চিন্তা-ভাবনা জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। হয়তো এগুলো বাংলাদেশে আনার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।