ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তিনশ আসনের মধ্যে এরই মধ্যে দুইশ আসনে প্রাথমিকভাবে দলের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলীয় যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করেছে দলটি। জানা গেছে, এই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অংশ হিসেবে তিনশ আসনে অর্থাৎ ১০ সাংগঠনিক বিভাগে দলের ৯৯৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীকে ঢাকায় ডেকে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সে হিসাবে প্রতি আসনে গড়ে তিনজনের বেশি প্রার্থী রয়েছে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত রবি ও সোমবার অনুষ্ঠিত পৃথক মতবিনিময় সভায় দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দ্রুততম সময়ে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জানান তারেক রহমান।
এদিকে দুদিনের এই মতবিনিময় সভা শেষে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন যে, তাদের মধ্যে দল থেকে কাকে বেছে নেওয়া হবে। অর্থাৎ প্রার্থিতার বিষয়ে তারা এখন শেষ মুহূর্তের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকে এখনো ঢাকায়ই রয়ে গেছেন। এলাকায় ফিরে যাওয়ার আগে শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবির করছেন তারা।
জানা গেছে, বিএনপি গত মাস থেকেই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া শুরু করেছে। তারেক রহমান নিজে ফোন করে অথবা দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে এই মেসেজ পৌঁছে দেন। এখন দুইশর মধ্যে অবশিষ্ট অধিকাংশ আসনে এ মাসের মধ্যে একই প্রক্রিয়ায় প্রার্থিতার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে দলীয় সূত্রমতে, এটি প্রাথমিক মনোনয়ন। নির্বাচনের তপশিলের পর দলীয় সাংগঠনিক প্রক্রিয়া তথা মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে ঘোষণা করা হবে। এদিকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরও দল থেকে প্রার্থীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। কোনো অভিযোগ কিংবা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাঠে ভালো করতে না পারলে মনোনয়ন বোর্ডে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থিতায় পরিবর্তনও আসতে পারে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে।
মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একজন প্রার্থীকে ফোনে বা অন্যভাবে মেসেজে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে এবং সেটা এ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। তারপর যখন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে, তখন অফিসিয়ালি তিনশ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সদস্য। তার নেতৃত্বেই আমরা কাজ করছি।’
জানা গেছে, দুদিনের মতবিনিময় সভায় তিনশ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মোটা দাগে তিনটি বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেগুলো হলো দলে কোনো গ্রুপিং-বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না; যে কোনো পরিস্থিতিতে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমান তার আবেগঘন বক্তব্যে ‘ধানের শীষের বিজয় কেন নিশ্চিত করতে হবে’—সে ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। জিয়া পরিবারের ত্যাগ-তীতিক্ষা বিশেষ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে কোনো বিভেদ নয়, দীর্ঘ সময় পর যে সুযোগ এসেছে, সবাই মিলে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে, ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে। জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে দলও প্রার্থীদের মধ্যে কোথাও কোনো বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ দেবে না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ইতোমধ্যে দুইশ আসনের প্রার্থিতা বাছাই করলেও বাকি একশ আসনের মনোনয়ন নিয়েও কাজ করছে। এর মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং ‘নির্বাচনী জোট’ শরিকদের আসনও রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এখন ‘বৃহৎ জোট’ গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মিত্রদের জন্য ৫৯টি আসন ছাড়লেও এবার সে সংখ্যা পঞ্চাশের আশপাশে থাকতে পারে। তবে নির্বাচনী জোটের পরিধি বড় হলে সেক্ষেত্রে আসন ছাড়ের সংখ্যাও বাড়তে পারে।