
নতুন শিক্ষাবর্ষ (২০২৬ সাল) থেকে মাদ্রাসার প্রথম থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। যেখানে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস। পাঠ্যবইগুলোর যেসব জায়গাতে ছেলে বা মেয়ের ছবি রয়েছে, সেগুলোতে হিজাব বা টুপি যুক্ত ছবি ব্যবহার করা হবে। এমনকি ছেলে বা মেয়েদের নামেও পরিবর্তন হবে।
জানা গেছে, ২০১২ সালের কারিকুলাম থেকে এসব পরিবর্তন করেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব পুনরায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ফলে ২০১২ সালের কারিকুলাম পুনরায় চালুসহ পরিমার্জিত সিলেবাসে পাঠদান করবে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে প্রায় প্রতিটি শ্রেণির পাঠ্যবইতে বির্তকিত নানা বিষয় সংযোজন ও বিয়োজন করতে দেখা গেছে। এরই ধারাবাহিতকায় বাদ দেওয়া বিষয়গুলো পরিমার্জন করে ফের তুলে ধরার চেষ্টা করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা এসব পরিবর্তন-পরিমার্জনের পরামর্শে দিয়েছেন। তাদের পরামর্শের আলোকে চূড়ান্তভাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পাঠ্যবইয়ে এসব বিষয় অর্ন্তভূক্ত করবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০২৬ সাল থেকে ২০১২ সালের কারিকুলামে পড়বেন শিক্ষার্থীরা। তবে সে কারিকুলামেও আধুনিকায়তন করা হবে। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৩৩টি পাঠ্যবইয়ে (মাদ্রাসার নিজস্ব বই) পরিমার্জনের জন্য ইতোমধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) জানিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এ ছাড়াও মাদ্রাসা জন্য নির্ধারিত জেনারেল বইয়েও পরিমার্জন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারিকুলাম পরিবর্তন-পরিমার্জনের খসড়া ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমাও দেওয়া হয়েছে।
কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ২০১২ সালের কারিকুলামে মাদ্রাসার সিলেবাস পরিমার্জন করে পাঠদান শুরু হবে। ২০২৬ সালে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য যে বইগুলো আসবে সেখানেও অনেকটা পরিমার্জন হবে। যেমন আকাইদ ফিকহ বইয়ে ‘মাজার’ সম্পর্কিত বিষয় ছিল সেগুলো পরিবর্তন হবে অর্থাৎ শিরক সম্পর্কিত যেকোনো বিষয় আর থাকছে না। মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে যায় না এমন কোনো বিষয় আর থাকছে না। তবে ইসলামিক কৃষ্টি-কালচার প্রাধান্য পাবে।
পাঠ্যবইগুলোর যেসব অধ্যায় বা অনুচ্ছেদে ছেলে বা মেয়ের ছবি রয়েছে, সেগুলোতে হিজাব বা টুপি যুক্ত ছবি ব্যবহার করা হবে। এমনকি নামেও পরিবর্তন হবে। যেমন- অনামিকা/মোনালিসা নামের পরিবর্তে ফাতেমা/আয়েশা/খাদিজা ইত্যাদি ধর্মীয়ভাবে অগ্রাধিকার যেসব নাম যুক্ত করা হবে। মাদ্রাসার জেনারেল বইগুলোতে ফ্যাসিবাদের বয়ান বাদ দেওয়া হবে। জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস প্রাধান্য পাবে বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের একজন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিষয় প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়েও প্রাধান্য পাবে। তবে মাদ্রাসা শিক্ষায় নিজস্বতা বজায় থাকাসহ আধুনিকায়তন হবে।’
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফ এম শাকিরুল্লাহ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মাদ্রাসা বোর্ড মূলত প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে। মাদ্রাসা শিক্ষায় নতুন বর্ষ থেকে পুরোদমে আগের কারিকুলাম চালু হচ্ছে এবং সিলেবাসেও পরিমার্জনসহ পাঠ্যবইগুলোতে নানা পরিবর্তন করা হবে। এসব বিষয় এনসিটিবিকে জানিয়েও দেয়া হয়েছে।’