Image description

কথাটি যেহেতু রাজনীতির ফলে এই নিয়ে সম্ভবত শেষ কথা বলে কিছু নেই। লন্ডন বৈঠকের পর নানা সংকটের সমাধান ও আশা দেখেন রাজনৈতিক নেতারা। এরপর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি নিতে প্রধান উপদেষ্টা যে নির্দেশনা দেন তাতে ওই আশা আরও বেগবান হয়। তবে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, লাগাতার নির্মম হত্যাকান্ডসহ নানা ঘটনা রাজনীতিতে চিন্তার কারণ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতারা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপিকে চাপে ফেলতে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অদৃশ্য শক্তি। বিএনপি নেতাদের সোজা যুক্তি দ্রুত নির্বাচনের দাবি উঠলে সক্রিয় হয়ে উঠে অদৃশ্য শক্তি। আবার একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা দাবি করে বলছেন, নির্বাচন বিলম্বিত করতে ‘বি টিম’ এখন সক্রিয়। অবশ্য এই ‘বি টিমের’ ব্যাখ্যা দেননি তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে নির্বাচন প্রশ্নে অনড় অবস্থানে থাকা ও জুলাই সনদে বিএনপির আপত্তি ভালো চোখে নেয়নি শক্তিগুলো। ফলে দলটিকে চাপে ফেলার রাজনীতি শুরু করেছে বিভিন্ন ব্যানারে থাকা একাধিক শক্তি। বিএনপির সারা দেশের বিশৃঙ্খল কর্মী-সমর্থকরা সেই শক্তির হাতে একের পর এক ইস্যু তুলে দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, গত ছয় মাস ধরে বিএনপিকে চাপে  ফেলার রাজনীতির ছক কষা হচ্ছে। তারা বিএনপিকে চাঁদাবাজ সংগঠনে পরিচিত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এরই অংশ হিসেবে অত্যাচার-নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার সংঘটিত হলেই সামাজিক  যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে।

বিএনপির নীতি-নির্ধারণী মহলের এশাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নানাবিধ কৌশল অনুসরণ করে ‘বি-টিমের’ তৎপরতা (কথিত) বিএনপি মোকাবিলা করে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও হঠাৎ  হোঁচট খেতেও হচ্ছে । তবে একটি অংশের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কারণে ‘বি টিমগুলো’ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে মনে করে বিএনপির শীর্ষ মহল। বিএনপি সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেও সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, চাঁদাবাজি, দখল ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগে বিএনপি ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দলের ভিত্তি দুর্বল হতে দেখা যাচ্ছে। চাঁদা ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে বিএনপিকে সামাজিকভাবে হেয় করা ও সামাজিকভাবে বয়কটের আওয়াজ তোলা শুরু করেছে অদৃশ্য শক্তির কারিগররা । সর্বশেষ পুরান ঢাকায় চাঁদার দাবিতে লাল চাঁদ সোহাগের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ইমোশন কাজে লাগিয়ে যে মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশ শুরু করেছে তা অদৃশ্য শক্তির মদদেই।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপির পরিষ্কার কোনো অবস্থানে না থাকতে পারার কারণে চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠগুলোর সঙ্গে বিএনপি অনেক ক্ষেত্রে আপস ও সহযোগিতার রাজনীতির ফল আজকে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলেছে।

তিনি বলেন, এ সরকারের শুরু থেকে কিছু জায়গায় বিএনপিকে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার রাজনীতি দরকার ছিল। বিএনপি সেখানে সহযোগিতা বা আপসের রাজনীতি করেছে বলেই বিএনপিকে চক্রান্তের রাজনীতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বিএনপির অপর একটি সূত্র দাবি করে, হঠাৎ চাপে পড়লে সরকারি একাধিক মহল বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের সহযোগিতা কামনা করে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয়রা আগপিছ না ভেবে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়েও আসে, এটিও বিএনপির ভুল রাজনীতি। অন্তর্বর্তী সরকার, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াত সবাই ভেতরে বিএনপির সহায়তা নিয়ে রাজনীতি তথা টিকে থাকতে চাইলেও বাধার মুখে ফেলতেও তারাই চক্রান্তের রাজনীতি শুরু করে। সময় এসেছে বিএনপিকে সেসব আমলে নিয়ে সামনে পা বাড়ানোর রাজনীতি করতে হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপিই একমাত্র ক্ষমতার দাবিদার, ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে সবাই তা মনে করে। আবার বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখতেও তারাই নানা কৌশলে নির্বাচন বিলম্বিত করতে সব অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে অদৃশ্য শত্রু। প্রশাসনের মধ্যে এখনো স্বৈরাচারের ভূত এখনো লুকিয়ে আছে।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ছাত্রদলের অমর শহীদদের স্মরণ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রশ্ন রেখে তারেক রহমান বলেন, সুষ্ঠু-স্বাভাবিক পরিস্থিতি কারা ও কীভাবে বাধাগ্রস্ত করছে? জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার কেন জোরদার করা হচ্ছে না?

এ সময় গত বছরের জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস  দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ৩ মাস আগেই জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কার বিষয়ে মতামত দিয়েছে বিএনপি।

দেশে নির্বাচন নেই বলেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি কোনো অন্যায়কে সমর্থন করে না। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেসব ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘গণতন্ত্রে যাওয়ার প্রধান বাহন হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন নেই বলেই আজকে দেশে আপনার এই ঘটনাগুলো ঘটছে, আইনশৃঙ্খলার ঘটনাগুলো ঘটছে, অবনতি ঘটছে, মৃত্যু বাড়ছে, দুর্বৃত্তরা সুযোগ নিচ্ছে। কারণ, তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার)  পেছনে সেই ধরনের জনসমর্থন নেই। একটা ইলেকটেড (নির্বাচিত) সরকার আসলে নিঃসন্দেহে অনেক শক্তিশালী গভর্নমেন্ট (সরকার) হবে।’

বিএনপির শীর্ষ আরেক নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, কারও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, আদর্শ ভিন্ন থাকতে পারে। তাদের নির্বাচনী কৌশল ভিন্ন থাকতে পারে, কিন্তু আমরা এখন সাংবিধানিক পদ্ধতির মধ্যে আছি। সংবিধান অনুযায়ী সরকার চলছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে। এখানে যদি  কোনো দল সুবিধা করতে পারবে না মনে করে, তখন তারা বিভিন্ন ইস্যু তুলে হয়তো বলবে নির্বাচনে যাব না। এটা তাদের স্বাধীনতা। ওইরকম রাজনৈতিক বক্তব্যকে খুব বেশি গুরুত্বের সঙ্গে আমি দেখি না। কিছু কিছু দল হয়তো নির্বাচন হলে ১ ভাগ ভোট পাবে না। রাজনীতিতে জনমতের মূল্য সবচেয়ে বেশি। সেই হিসেবে আগামী  ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে জনমতই প্রাধান্য পাবে। আমরা খুবই আশাবাদী, এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে।