Image description
| ছবি: সংগৃহীত

বোকার মতো গণতন্ত্র বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার যুগ শেষ হয়েছে– এ কথা বলে ইতোমধ্যে অসংখ্য বই লেখা হয়েছে। এ ধারণাকে সত্য প্রমাণের চেষ্টাও কম হয়নি। এ নিয়েও আলোচনা কম হয়নি, কীভাবে তাহরির স্কোয়ারকে ছিন্নভিন্ন করা মুরব্বিরা তা জোড়া দিতে অস্বীকার করেছে; কীভাবে তিউনিসিয়ার বিপ্লবীরা; যারা নিজেদের একটু আলাদা কেতার বিপ্লবী ভেবেছিল– আট বছর পর তাদের প্রতিবেশীর পথই অনুসরণ করল; কীভাবে উপসাগরীয় রাজপুত্ররা তাদের লুট করা সম্পদ শীতের পর বসন্ত আনার জন্য ঢেলে দিয়েছিল। 

তার এই দীর্ঘ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াজুড়ে সিরিয়া এমন এক শিক্ষা তৈরি করেছিল, যা আরব বিশ্বকে এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছিল। বাহরাইন থেকে মরক্কো; প্রতিটি সরকার তাদের জনগণকে বার্তা দিয়েছিল– ‘আমরা সিরিয়ার পরিণতি বরণ করতে চাই না।’ সিরিয়া দেখাল, ১৩ বছর পর হলেও বিপ্লব শুরু হতে পারে। দামেস্কে সংঘটিত দৃশ্যগুলো একটি বিস্মৃত যুগ ফিরিয়ে আনে। মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলা; ট্যাঙ্কে আরোহণ করা লোকদের আনন্দ; কেবল উপলব্ধি করা– তাদের ওপর আর কেউ নজরদারি করছে না। 

 

সেদনায়া কারাগার থেকে আসা ছবিগুলো ভয়াবহ, যেখানে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের এতদিন আটক করে রাখা হয়েছিল। তারা মনে করে, সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম হাফেজ আল-আসাদ ক্ষমতায় আছেন এবং সাদ্দাম হোসেন তাদের মুক্ত করছেন, যদিও হাফেজ মারা যান ২০০০ সালে। যখন এই ক্লিপগুলো প্রত্যেকের আইফোনে দারুণভাবে বাজছিল, তখন দোহাতেও এ অঞ্চলের বিশাল পরিবর্তন অনুভূত হচ্ছিল, যেখানে এর বার্ষিক সভা চলছিল। শনিবার যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সেখানে কনফারেন্স হলে ঢুকেছিলেন, তারা রোববার ভিন্ন মানুষ হয়ে বেরিয়ে আসেন। 

 

সম্মেলনের মূল তারকা রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মুখ থেকে ​​দৃশ্যত রক্ত বের হচ্ছিল বলেই মনে হচ্ছিল। ১০ ঘণ্টা আগে ল্যাভরভ তাঁর শ্রোতাদের বলছিলেন, রাশিয়া সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কথা বলবে না। তাঁর দেশ তুর্কিদের ব্যবহার করে তাদের নৌ ও বিমানঘাঁটি সম্পর্কে হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছে। বিপ্লবী আন্দোলনটি অদ্ভুতভাবে ঘুরে গেল, যার ওপর রাশিয়ার বোমাবর্ষণ হচ্ছিল।

ল্যাভরভ সিরিয়া সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তীব্র অস্বস্তিতে পড়েছিলেন এবং এর পরিবর্তে তিনি ইউক্রেন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার দাবি জানান। এদিকে বিষণ্ন ইরানি প্রতিনিধি দল হোটেলের করিডোর দিয়ে এক বৈঠক থেকে অন্য বৈঠকে ছুটে যায়। বিপরীতে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান পুনরায় কেন্দ্রীয় মঞ্চে ফিরে আসেন। ফিদান গাজা যুদ্ধের গত ১৪ মাস আরব কনটাক্ট গ্রুপ থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। প্রায় রাতারাতি সিরিয়ার বিপ্লব তুরস্ককে আবারও নিরীহ পর্যবেক্ষক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের একজন খেলোয়াড়ে পরিণত করল।

এটি যদি সত্যিই আরব বসন্তের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এ থেকে অন্তত একটি অপরিহার্য শিক্ষা পাওয়া যাবে। মিসর ও তিউনিসিয়ার বিপ্লবীরা যথেষ্ট বিপ্লবী ছিল না। সশস্ত্র বিদ্রোহ মুসলিম ব্রাদারহুডের মজ্জাগত নয়। বিপরীতে মিসরীয় সামরিক গোয়েন্দারা ব্রাদারহুডকে আশ্বাসের ফাঁদে ফেলেছে। বিশেষত সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির কথা ধরা যাক, যিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন– সেনাবাহিনী স্বাধীনভাবে নির্বাচিত সরকারকে শাসন করার সুযোগ দেবে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম মোহাম্মদ মুরসি তাঁর গ্রেপ্তারের অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি সিসির হাতে বন্দি, তবে ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মিসর ও তিউনিসিয়ার বিপ্লব তার অস্তিত্বের প্রশ্নে শত্রুদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে ব্যাপক মূল্য দিয়েছিল। তাদের হাতিয়ার ছিল শুধু রাজনৈতিক। তারা নির্দেশাবলি যথাযথভাবে পড়ে এবং এর টুকরোগুলো একত্র করে গণতন্ত্র নামক এই সরল-সস্তা কিটকে জোড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

প্রথমে একটি সংবিধান পরিষদ, এর পর একটি নতুন সংবিধান, তারপর অবাধ নির্বাচন। এদিকে জেনারেলরা হেসে হেসে এই তাসের ঘরকে ধারালো বুট দিয়ে লাথি মেরেছিল। সিরিয়ার বিপ্লব সেনাবাহিনী, ডিপ স্টেট, গোপন পুলিশকে অস্ত্রের মুখে পতন ঘটিয়েছে। যদি এটি সফল হয়, তাহলে একটি বিদ্রোহী আন্দোলন কীভাবে জাতীয় বৈধতা নিয়ে আসে, সিরিয়া তার একটি শক্তিশালী পাঠ দিতে পারে। আর শাসকদের বৈধতার অভাব রয়েছে এমন সংক্রমিত ভঙ্গুর অঞ্চলে এটি সাফল্য বলেই বিবেচিত হয়।

এ কারণে এ মুহূর্তে অঞ্চলটিতে একাধিক স্বৈরশাসক আছে, যারা চুপচাপ চক্রান্ত করছে কীভাবে এই পরীক্ষাটি ভিন্ন পথে চালিত করা যায়, যেমনটি তারা এক দশক আগে সফলভাবে করেছিল। তাদের প্রতিবিপ্লবের কিট কি পুরোনো হয়ে গেছে? অনেকাংশে তা সিরিয়ার জনগণের ওপর নির্ভর করে। মিসরীয়, জর্ডানি ও ইরাকিরা শক্তিশালী বিপ্লব সম্পর্কে যা ভেবেছে তা এখন অনেক পুরোনো। তারা জ্বলে আর নেভে, কিন্তু মরে না।

ডেভিড হার্স্ট: মিডল ইস্ট আই-এর প্রধান সম্পাদক; মিডল ইস্ট আই থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম