‘নেতারা জন্মায় না, কঠোর চেষ্টা ও ত্যাগের মাধ্যমে একজন মানুষ নেতায় পরিণত হন’-কিংবদন্তি আমেরিকান ফুটবল কোচ ভিন্স লম্বারডির এই উক্তির মূর্তপ্রতীক যেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি গৃহকোণের মধূময় নিশ্চিত জীবন ত্যাগ করে দেশনেত্রী হয়ে ওঠেন নিজ দেশের প্রতি অবিচল প্রেম ও মমতার জন্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু নাম কেবল ক্ষমতার তালিকায় নয়, জাতির স্মৃতিতে স্থায়ী আসন গড়ে তোলে। বেগম খালেদা জিয়া তেমনই এক অবিসংবাদিত ব্যক্তিত্ব। বেশ কয়েকটি কারণে তিনি চিরকাল বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।
মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নারী নেত্রী ও সাহসী প্রধানমন্ত্রী: বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন শুধু বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী নন, বরং মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নারী নেতৃত্বের প্রতীক। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় এসে তিনি প্রমাণ করেন—নারী নেতৃত্ব কোনো ব্যতিক্রম নয়, বরং যোগ্যতার স্বাভাবিক প্রকাশ।
পুরুষপ্রধান রাজনীতির কঠিন বাস্তবতায় দাঁড়িয়েও তাঁর দৃঢ়তা, আত্মমর্যাদা ও রাষ্ট্র পরিচালনার সক্ষমতা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অগ্রসেনানী ও সংসদীয় ব্যবস্থার রূপকার: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক ও অনস্বীকার্য। তাঁর নেতৃত্বেই সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ ফিরে পায় সংসদীয় গণতন্ত্র—যা আজও রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি।
রাজনৈতিক ইতিহাসবিদদের মতে, এই এক সিদ্ধান্তই তাঁকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্থপতিদের কাতারে স্থায়ীভাবে স্থান দিয়েছে।
নির্যাতন, কারাবাস ও অসুস্থতার মধ্যেও আপসহীন সংগ্রামের প্রতীক: দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়াকে সহ্য করতে হয়েছে মামলা, কারাবাস, শারীরিক অসুস্থতা ও নানামুখী রাজনৈতিক চাপ। কিন্তু এসব কিছুই তাঁকে নত করতে পারেনি।
সমর্থকদের কাছে তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা না নত করার প্রতীক, আর সাধারণ মানুষের চোখে—একজন নেতা, যিনি ব্যক্তিগত কষ্টকে ছাপিয়ে আদর্শের পথে অটল থেকেছেন।
আপসহীন নেতৃত্বের এক অনন্য অধ্যায়: তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তির প্রতিষ্ঠাতা নেতৃত্ব, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নায়িকা এবং দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতীক—সব মিলিয়ে বেগম খালেদা জিয়া কেবল একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নন, তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায়।