Ali Ahmad Mabrur (আলী আহমেদ মাবরুর)
এনসিপির সিদ্ধান্তকে খুব সাদামাটাভাবে দেখার সুযোগ নেই। কেবল বেশি সিট পাওয়ার জন্য তারা জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটে এসেছে বললে তাদের ওপর এক ধরনের অন্যায় হয় বলেই মনে করি। এনসিপির জন্য বিকল্প কিছু ছিল বলেও মনে করি না। এনসিপির অনেকে হয়তো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন জামায়াত এলার্জি অথবা মিডিয়ার সামনে জবাবদিহিতার শংকা থেকে।
কিন্তু বিষয়টি এত সহজও নয়। এনসিপির নেতারা জুলাই বিপ্লবের বড়ো স্টেক হোল্ডার। বিপ্লব চলাকালে নাহিদ, হাসনাত, সারজিসরা চেনা মুখ ছিল। বিপ্লব পরবর্তীতে দেড়টা বছর চলে গেল। এই সময়ো এনসিপি জুলাইকে সংহত করার চেষ্টা করেছে। সেকেন্ড রিপাবলিক ও সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে নিজেদের রাজনীতি করতে চেয়েছে।
সমস্যা হলো, জুলাইয়ের মূল স্পিরিট নিয়ে বিএনপির সাথে জুলাই বিপ্লবীদের আগাগোড়াই দুরত্ব ছিল। আর বিএনপি জুলাই নিয়ে খুব বেশি আন্তরিক ছিল এমনটা কেউ দাবি করবে না। তারা যাই করেছে ফর্মালিটি হিসেবে, অনেকটা বাধ্য হয়ে, তাই তাদের রেসপন্সে একটা দায়সারা দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বরাবরই। জুলাইয়ের যোদ্ধাদের টিপ্পনী কাটা থেকে শুরু করে এনসিপির সাইজ নিয়ে পরিহাস,কিংবা সর্বশেষ শহীদ ওসমান হাদী ও ইনকিলাব মঞ্চকে না চেনা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের দুর্বলতা সবার চোখে পড়েছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে জুলাইয়ের চেতনা ধারন, জুলাই যোদ্ধাদের সম্মান দেয়া, জুলাইয়ের স্মৃতি সংরক্ষণ বা শহীদ ও গাজীদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে জামায়াত যে এগিয়ে ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
দ্বিতীয় ইস্যুটি আরো যৌক্তিক। জুলাই বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য ছিল মেজর কিছু সংস্কার। এই নিয়ে এনসিপিও শুরু থেকেই সরব ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তাদের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক। জামায়াতের ভূমিকাও তাই। উচ্চ কক্ষে পিআর ছাড়া জামায়াতের সাথে এনসিপির তেমন কোনো বিরোধ নেই। আর বিএনপি এক্ষেত্রে অনেকটাই রিজার্ভ। তারা মৌলিক সব সংস্কারের ব্যাপারে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে রেখেছে। জামায়াত এনসিপিসহ জুলাই পন্থীরা যেখানে সংস্কার চাইছে, গণভোটে হ্যাঁ'কে জয়ী করতে চাইছে, সেখানে বিএনপি গণভোটকে আমলেই নিচ্ছে না, উল্টো না ভোটের পক্ষে ক্যাম্পেইন করছে ও করবে। তাহলে জুলাইয়ের ধারক এনসিপি কীভাবে বিএনপির সাথে যায়!
তৃতীয় বিষয়টি বিচার। শহীদ ওসমান হাদীর শাহাদাতের পর বিচারের হাল হকিকত অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। আগামীতে কে কতদূর কী করবে তাও অনুমান করা যায়। জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা সংকট ও তাদের ওপর হামলা হলে কীভাবে তার সুরাহা হবে তা এনসিপির জন্য নিশ্চিত করা জরুরি। আবার ট্রাইবুনালে যাদের বিচার হয়েছে তাদের রায় বাস্তবায়ন করা আর যাদেরটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তা চলমান রাখার নিশ্চয়তা এনসিপি চেয়েছে। আর এটা এখন স্পষ্ট জামায়াত এই বিচারের ক্ষেত্রে সিরিয়াস। সর্বশেষ শিবিরের সদস্য সম্মেলনেও জামায়াতের আমীর বিচার চালিয়ে যাওয়ার এবং বিচারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
বিএনপি জুলাইকে ধারন করলে এবং একইসাথে সংস্কার ও বিচারের বিষয়েও জোরালোভাবে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করতে পারলে রাজনৈতিক সমীকরণটা অন্য রকম হতে পারতো। তবে তারা অতীতের মতোই আরো একবার জুলাই প্রজন্মের পালস ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। কার্যত বিএনপিই এনসিপিকে জামায়াতের দিকে ঝুঁকে যেতে বাধ্য করেছে।