ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের মেঘালয় পুলিশ। এছাড়া আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে হাদি হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার চার্জশিট দিবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মামলাটি বর্তমান ডিবিতে তদন্তাধীন আছে।
রবিবার বেলা ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম।
ভারতে গ্রেপ্তার দুজন হলেন– পুত্তি ও সামি।
এদিকে ঘটনার পরপরই সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হাদিকে গুলি করা ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাকে সহায়তাকারী মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখকে শনাক্ত করে পুলিশ। যারা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যাওয়ার জোর গুঞ্জন শোনা গেলেও এতোদিন সংশ্লিষ্টদের তরফে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি। তবে এদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল জানালেন ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত হওয়ায় আসামিদের ‘শনাক্ত করার আগেই’ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়েছেন।
তিনি বলেন, “ফয়সাল ও আলমগীর প্রথমে ঢাকা থেকে সিএনজিতে করে আমিনবাজারে যায়। সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুরে ও পরে প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছায়।”
সেখানে ফিলিপ নামে একজন তাদেরকে সীমান্ত পার করে পুত্তির নামে একজনের কাছে হস্তান্তর করে। তারপর তিনি ট্যাক্সি ড্রাইভার সামি নামে একজনের কাছে দেওয়া হয়। সামি তাদেরকে মেঘালয়ের তুরা নামক শহরে পৌঁছে দেয়।
পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল বলেন, “ইনফরমাল চ্যানেলে আমরা মেঘালয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, সেখানে তারা পুত্তির ও সামিকে গ্রেপ্তার করেছে।”
এখন পর্যন্ত হাদি হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গেল ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন।
চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী।
গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই ওই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর দুদিন পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৮ ডিসেম্বর হাদির মৃত্যুর খবর আসে।
হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলাটি দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটিতে ৩০২ ধারা যুক্ত হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এরা হলেন-মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির এবং মা হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ‘ভারতে পালাতে’ সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম।
ঢাকাটাইমস