Image description
 

মহানায়কের মতো ১৭ বছর পর দেশে ফিরে রাজসিক গণসংবর্ধনা সিক্ত হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ এক অন্যরকম দৃশ্য। বাংলাদেশে তো ঘটেনি বটে; এমনকি পৃথিবীর কোনো দেশে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ একত্রিত হয়ে নেতাকে বরণ করে নিয়েছেন: এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। বিগত শতকের নব্বই দশকে ২৭ বছর কারাভোগ করে মুক্তিলাভ করা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে জোহানেসবার্গে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করা সে সংবর্ধনার চেয়েও গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত তারেক রহমানের গণসংবর্ধনায় কয়েকগুণ বেশি মানুষের সমাগম ঘটেছিল। যুগে যুগে ভিন্ন ভিন্ন ভূ-খ-ে এমন কিছু মহানেতার জন্ম হয়, যারা সুচিন্তিত গতিশীল নেতৃত্বে পুরো দেশকে আলোড়িত করেছেন। তাদের চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, আদর্শ, নেতৃত্ব দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির গতিপথ বদলে দিয়েছে। তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসের খাতায় ওই মহানেতার তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে জনগণের মুক্তির দূত হিসেবে আবির্র্ভূত হয়েছেন তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেও তিনি নেতৃত্ব দলের গণ্ডি পেরিয়ে সব মত-পথের সবার নেতা এবং আগামীর মুক্তির দূত হয়ে উঠেছেন। তিনি মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পাহাড়ি, সমতল: সব অঞ্চলের ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের বিখ্যাত উক্তি: ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ (আমার একটি স্বপ্ন আছে) উল্লেখ করে তারেক রহমান দেশবাসীর উদ্দেশে বলছেন, ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি।’ তিনি দেশবাসীকে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, জনগণের ভোটে আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে নবী (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার আদলে দেশ গড়ব। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘপথ বিমানযাত্রা করে দেশে ফিরে দেশবাসীর উদ্দেশে নিজের সুচিন্তিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন। ১৭ বছর পর মাতৃভূমিতে ফিরলেও দীর্ঘ পথ ভ্রমণের কোনো ক্লান্তিই যেন তাকে কাবু করতে পারেনি। কালো প্যান্টের সাথে সাদ শার্ট পরা তারেক রহমানের চোখে ছিল চশমা। স্ত্রী-কন্যাকে বাসায় পাঠিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে প্রথমেই ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পড়ে ঠেকাই মাথা’ নবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের মতোই দেশপ্রেমে আবেগাপ্লুত হয়ে খালি পায়ে ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করেন। অতঃপর পরম মমতায় হাতে তুলে নেন দেশের এক খাবলা মাটি। দেশের মাটি স্পর্শ করার দৃশ্য সরাসরি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনী, বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ: সবার সাথে হাত মিলিয়েছেন। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে দলীয় নেতাদের সাথে নিয়ে তিনি সংবর্ধনা মঞ্চের দিকে রওনা হন। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা তিনি বাসে দাঁড়িয়ে থেকে পুরোটা পথ নেতাকর্মী এবং আমজনতার শুভেচ্ছার জবাব দিতে দিতে সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছান। কোনো ধরনের স্ক্রিপ্ট ছাড়াই ১৬ মিনিট ভাষণ দেন তারেক রহমান। আগামীতে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় এসেছে সবাই মিলে দেশ গড়ার। আমরা চাই, সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন। একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই; যে বাংলাদেশে নিরাপদে ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে আবার ফিরে আসবে। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, লক্ষ-কোটি মানুষের পরিকল্পনা পূরণ করতে পারি।’ জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতিক তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নিয়ামত হিসেবে অবিহিত করেন বিএনপি ও শরিক দলের নেতারা। জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও এনসিপির নেতারাও তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানান। তারেক রহমান বক্তৃতায় বেশ কয়েকবার মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নাম স্মরণ করেন। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার অঙ্গীকার করে তিনি রাজনীতির জাদুকরের মতোই আগামী দিনে দেশ গড়ার বার্তা দিলেন। সারাদেশ থেকে আগত সাধারণ মানুষ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা ঢাকা থেকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গেলেন নেতার নির্দেশনা নিয়েই।


গতকাল বৃহস্পতিবার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীর ৩০০ ফিটে বিএনপি আয়োজিত গণঅভ্যর্থনার জনসমুদ্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে লন্ডন থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিব বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে লাখ লাখ মানুষের রাজসিক অভ্যর্থনায় শিক্ত হয়ে পৌঁছান অভ্যর্থনা মঞ্চে।
বিভিন্ন আধিপত্যবাদ শক্তির গুপ্তচররা নানাভাবে এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, আমাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে। আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। যেকোনো মূলে শান্তি-শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, যে শ্রেণির মানুষ হই, যে দলেরই রাজনৈতিক দলের সদস্য হই, অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে আমরা আমাদের এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলাকে ধরে রাখতে হবে। যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে। যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক, যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকে: এই হোক আমাদের চাওয়া আজকে।


মঞ্চে উঠে তারেক রহমান উপস্থিত লাখ লাখ জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। এরপর তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রিয় ভাইবোনেরা, আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল। ঠিক একইভাবে পঁচাত্তরে আবার ৭ নভেম্বর আধিপত্যবাদীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সেদিন সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আধিপত্যবাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা হয়েছিল। একইভাবে পরবর্তীতে নব্বইয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এ দেশের জনগণ, এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু তারপরও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। আমরা তারপর দেখেছি, ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ২০২৪ সালে এ দেশের ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ-কৃষক, শ্রমিক, গৃহবধূ, নারী-পুরুষ, মাদরাসার ছাত্রসহ দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষ সেদিন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ চায়, তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার পাবে। তিনি বলেন, আজ আমাদের সময় এসেছে সবাই মিলে দেশ গড়ার। এই দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছে, এই দেশে একইভাবে সমতলের মানুষ আছে। এই দেশে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। আমরা চাই, সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা: যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন, অর্থাৎ একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন নারী, একজন পুরুষ, একজন শিশু যে-ই হোক না কেন, নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে নিরাপদে ইনশাআল্লাহ ঘরে আবার ফিরে আসতে পারে। এই দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, চার কোটিরও বেশি তরুণ প্রজন্মের সদস্য, পাঁচ কোটির মতো শিশু, ৪০ লাখের মতো প্রতিবন্ধী রয়েছেন, কয়েক কোটি কৃষক-শ্রমিক রয়েছেন। এই মানুষগুলোর একটি প্রত্যাশা আছে এই রাষ্ট্রের কাছে। এই মানুষগুলোর একটি আকাক্সক্ষা আছে এই দেশের কাছে। আজ আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হই। আমরা যদি সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, তাহলে আমরা এই লক্ষ-কোটি মানুষের সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে পারি ইনশাআল্লাহ। একাত্তর সালে আমাদের শহীদরা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এরকম একটি বাংলাদেশ গঠনের জন্য। বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শত শত হাজারো গুম-খুনের শিকার হয়েছে শুধু রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়, নিরীহ মানুষও প্রতিবাদ করতে গিয়ে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে, জীবন দিয়েছে। ২০২৪ সাল মাত্র সে দিনের ঘটনা। কীভাবে আমরা দেখেছি, আমাদের তরুণ প্রজন্মের সদস্যরা কীভাবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে দেশের এই স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য।
তারেক রহমান ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদির কথা স্মরণ করে বলেন, কয়েক দিন আগে এই বাংলাদেশের চব্বিশের আন্দোলনের এক সাহসী প্রজন্মের এক সাহসী সদস্য ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। ওসমান হাদি শহীদ হয়েছে। ওসমান হাদি চেয়েছিল এই দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। এই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। এই দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পাক। আজ চব্বিশের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন ওসমান হাদিসহ, একাত্তরে যারা শহীদ হয়েছেন, বিগত স্বৈরাচারের সময় বিভিন্নভাবে খুন-গুমের শিকার হয়েছেন, এই মানুষগুলোর রক্তের ঋণ যদি শোধ করতে হয়, আসুন আমরা আমাদের সেই প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলব: যেখানে আমরা সবাই মিলে কাজ করব, যেখানে আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তুলব।
তরুণরাই আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের যে সদস্যরা আছেন, আপনারাই আগামী দিন দেশকে নেতৃত্ব দেবেন, দেশকে গড়ে তুলবেন। এই দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের সদস্যদেরকে আজ গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে এই দেশকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি শক্ত ভিত্তির উপরে। গণতান্ত্রিক ভিত্তি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির উপরে যাতে এই দেশকে আমরা গড়ে তুলতে পারি।
বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ এই নেতা বলেন, আমার সাথে আজকে মঞ্চে এখানে বহু জাতীয় নেতৃবৃন্দ বসে আছেন। আসুন আজকে আমরা দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি: আল্লাহর রহমত আমরা চাই যে, যেসব জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই মঞ্চে আছেন, মঞ্চের বাইরে যে সব জাতীয় আরো নেতৃবৃন্দ আছেন, আমরা সবাই মিলে এই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশিত সেই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। যেকোনো উসকানির মুখে আমাদেরকে ধীর শান্ত থাকতে হবে। আমরা দেশের শান্তি চাই। আমরা দেশের শান্তি চাই। আমরা দেশে শান্তি চাই।
দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে নিজের একটি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, মার্টিন লুথার কিং, নাম শুনেছেন না আপনারা? নাম শুনেছেন তো আপনারা? মার্টিন লুথার কিং, তার একটি বিখ্যাত ডায়লগ আছে, ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’। আজ এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সবার সামনে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই, ‘আই হ্যাভ অ্যা প্লান ফর দ্য পিপল অফ মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি। এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য। যদি সেই প্ল্যান, সেই কার্যক্রম, সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হয়: প্রিয় ভাইবোনেরা এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন, সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি যত মানুষ উপস্থিত আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে। আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন, আপনারা যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন, ইনশাআল্লাহ, আমরা ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। আসুন আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করি, আমরা যেন হে রাব্বুল আলামিন, হে একমাত্র মালিক, হে একমাত্র পরওয়ারদিগার, হে একমাত্র রহমত দানকারী, হে একমাত্র সাহায্যকারী, আজ আপনি যদি আমাদেরকে রহমত দেন তাহলে আমরা এই দেশের মানুষ কঠোর পরিশ্রম করার মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারব। আজ যদি আল্লাহর রহমত এই দেশ এবং এই দেশের মানুষের পক্ষে থাকে আল্লাহর সাহায্য, আল্লাহর দয়া এই দেশের মানুষের উপরে এই দেশের উপরে থাকে, ইনশাআল্লাহ: আমরা আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি, ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আসবে, আমরা সবাই নবী করিম (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণয়তা, সেই ন্যায়পরায়ণতার আলোকে আমরা দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
নিজের মায়ের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আপনারা জানেন এখান থেকে আমি আমার মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে যাব। যে মানুষটি এই দেশের মাটি, এই দেশের মানুষকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালো বেসেছেন, তার সাথে কি হয়েছে আপনারা প্রত্যেকটি মানুষ সে সম্পর্কে অবগত আছেন। সন্তান হিসেবে আপনাদের কাছে আমি চাইব, আজ আল্লাহর দরবারে আপনারা দোয়া করবেন, যাতে আল্লাহ উনাকে তৌফিক দেন, উনি যাতে সুস্থ হতে পারেন। সন্তান হিসেবে আমার মন আমার মায়ের বিছানার পাশে পড়ে আছে, সেই হাসপাতালের ঘরে। কিন্তু সেই মানুষটি যাদের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছে, অর্থাৎ: আপনারা, এই মানুষগুলোকে যাদের জন্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই মানুষগুলোকে আমি কোনোভাবেই ফেলে যেতে পারি না। সে জন্যই আজ হাসপাতালে যাওয়ার আগে আপনাদের প্রতি, টেলিভিশনগুলোর মাধ্যমে যারা পুরো বাংলাদেশে আমাকে দেখছেন, আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আজ আমি এখানে দাঁড়িয়েছি আপনাদের সামনে।
সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আপনাদের সবার কাছে দোয়া চেয়ে, আবারো সবাইকে যেকোনো মূল্যে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে, যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিহার করে, ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। আবারো আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আজকে আমাকে এভাবে বরণ করে নেয়ার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
তারেক রহমানের আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। সংবর্ধনা মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজাতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহসভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. নুরুল আমিন ব্যাপারীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল ১০টা থেকে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে মঞ্চ থেকে বক্তৃতা দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন।