Image description
 

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ভুয়া সিল স্বাক্ষর বসিয়ে ১৩ রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মনিবন্ধন তৈরির অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে, গত বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে মোহনগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনের একটি দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

গ্রেপ্তার মওদুদ আহমেদ শাওন (৩৫) মোহনগঞ্জ পৌরশহরের টেংগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। শাওনের স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার উপজেলার ৭নং গাগলাজুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উদ্যোক্তা। স্ত্রীর হয়ে ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধনসহ অনলাইনের সকল কাজ করতেন তিনি।

 

এ ঘটনায় গাগলাজুর ইউনিয়নের সচিব রাজিব মিয়া বাদী হয়ে শাওনের বিরুদ্ধে থানায় প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।

 

পুলিশ, স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা ও এলাকার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪-৫ বছর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে টেকনিশিয়ান পদে আবেদন করেন শাওন। চাকরি না হলেও তখন থেকেই ওই কার্যালয়ের সকল অনলাইন কাজকর্মের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) টিসিবি কার্ড সংযোজন ও যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ডসহ সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন শাওন। ইউএনও কার্যালয়ে কাজের প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার অন্য ৭টি ইউনিয়নের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সকল কাজের নিয়ন্ত্রণও কব্জা করেন তিনি। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সিল স্বাক্ষর নকল করে অবৈধ জন্মনিবন্ধন তৈরির বাণিজ্য শুরু করেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি বনে যান শাওন।

শাওনের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ইউএনও কার্যালয়ের সকল সরকারি আইসিটি প্রোগ্রামের দায়িত্বে থাকতেন শাওন। সবাই তাকে ইউএনও কার্যালয়ের আইসিটি প্রোগ্রামার বলেই জানে। এমনকি ওই কার্যালয়ের সকল সরকারি ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ডও শাওনের কাছে থাকতো। ইউএনওদের ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সকল কাজ করতেন শাওন। এই সুযোগে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নকল সিল স্বাক্ষর তৈরি করে ভুয়া জন্মনিবন্ধন তৈরি করে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে কয়েকটি হারভেস্টার মেশিন কিনেছেন শাওন। পাশাপাশি ময়মনসিংহ শহরেও জায়গা কিনেছেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহনগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয় পাল বলেন, সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে বৃহস্পতিবার বিকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরে আদালতে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. হাফিজুল ইসলাম হারুন বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বারের ভুয়া সিল স্বাক্ষর বসিয়ে অন্য জেলার ১৩ নাগরিককে এখানকার জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দিয়েছেন শাওন। ওই ১৩ জনকে রোহিঙ্গা বলে ধারণা করা হচ্ছে। শাওন তার ব্যবহৃত সাইটটির ইউজার পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়েছে বলে দাবি করলেও প্রাথমিক তদন্ত এটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইউপি সচিব বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় শাওনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমেনা খাতুন বলেন, আমি আসার পরই সকল পাসওয়ার্ড তার থেকে নিয়ে নিয়েছি। বাইরের জেলার ১৩ জন লোককে এখানকার জন্মনিবন্ধন করে দেওয়ার বিষয়টি টের পাওয়ার পরই অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশি তদন্তে বিস্তারিত বের হয়ে আসবে।

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান বলেন, বিষয়টি জেনে ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। জেলার আর কোথাও যেন কেউ এমন কাজ করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আমরা নজরদারি করব।