সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হল ও হোস্টেলের কারিগরি মূল্যায়ন ও মেরামত কার্যক্রমের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, আবাসিক হলগুলো থাকার উপযোগী এবং এক্ষেত্রে ভীতির কোনো কারণ নেই। বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন মেয়াদে সংস্কার কাজের সুপারিশ করেছেন সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তা তুলে ধরেন।
এসময় অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘২১ ও ২২ নভেম্বর সংঘটিত ভূমিকম্পের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও হোস্টেলসমূহের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, কারিগরি মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কারিগরি প্রতিবেদনে কোনো হল ব্যবহারের অনুপযোগী বা হলে থাকা যাবে না এমন কোনো মন্তব্য বিশেষজ্ঞরা করেনি। বিশেষজ্ঞরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি যেসব সংস্কার কাজের সুপারিশ করেছেন সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আবাসিক হলগুলো থাকার উপযোগী এবং এক্ষেত্রে ভীতির কোনো কারণ নেই।
কমিটি গঠন ও পরিদর্শন কার্যক্রম
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের লক্ষ্যে গত ২৬ নভেম্বর কোষাধ্যক্ষের সভাপতিত্বে একটি সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হয় এবং পরবর্তীতে কমিটির একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে ৫ সদস্যবিশিষ্ট ৪টি কারিগরি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। প্রত্যেক সাব কমিটিতে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর পুরকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং ডাকসু মনোনীত একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
গত ৪ ডিসেম্বর কারিগরি সাব-কমিটিসমূহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টি হল ও ২টি হোস্টেলে র্যাপিড ভিজ্যুয়াল পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এরপর ৮ ও ৯ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট কমিটিসমূহ তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেয়। সে মোতাবেক কাজ চলছে।
জরুরি মেরামত ও দরপত্র কার্যক্রম
সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯টি মেরামত কাজকে জরুরি বিবেচনায় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ গৃহীত হয়। এর আলোকে বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এক সভায় জরুরি বিবেচনায় ওটিএম পদ্ধতিতে ই-জিপির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান এবং অতিজরুরি ক্ষেত্রে ডিপিএম পদ্ধতিতে কিছু নির্দিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শামসুন নাহার হলের ৬টি ব্লকের মধ্যে ১টি ব্লকের পূর্ণাঙ্গ মেরামত, ৬টি ব্লকের আরসিসি ওভারহেড ট্যাংক খালি করে প্লাস্টিক ট্যাংক স্থাপন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্টিল প্রপ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইতোমধ্যে শামসুন নাহার হলের একটি বাথরুম ব্লকের মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় উপকরণ সাইটে আনা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক খালি করে জরুরি ভিত্তিতে প্লাস্টিক ট্যাংক স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞ মতামত অনুযায়ী, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে স্টিল প্রপ স্থাপনের কাজ আগামী ২/১ দিনের মধ্যে শুরু হবে।
এছাড়া অবশিষ্ট ১৭টি মেরামত কাজের জন্য ই-জিপির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী ২৯ ডিসেম্বর এর মধ্যে টেন্ডার ওপেনিং কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ)
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কয়েকটি হলে টেলস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ) পরিচালনার জন্য বিশেষজ্ঞগণ মতামত দিয়েছেন। সে অনুযায়ী অতি শিগগিরই ডিইএ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি হলে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও তিনটি হলের চলমান মেরামত ও সংস্কার কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে মোট ১৭৫টি কক্ষের মধ্যে ১৬৭টি কক্ষের মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি কক্ষের রং করণ শেষ হয়েছে। অন্যান্য কক্ষ, বারান্দা, বাথরুম, মসজিদ, ডাইনিং ও রিডিং রুমসহ বিভিন্ন অংশে মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৮০টি কক্ষের রং করণ ও সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন হবে।
সূর্যসেন হলে মোট ১৪১টি কক্ষের সবগুলোর মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০টি কক্ষের রংকরণ শেষ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০ থেকে ১০০টি কক্ষের রংকরণ কাজ সম্পন্ন হবে।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১২১টি কক্ষের সবগুলোর মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি কক্ষের রংকরণ শেষ হয়েছে। বাথরুম ও রিডিং রুমের টাইলসসহ অন্যান্য কাজ দ্রুত শেষের পথে। আশা করা হচ্ছে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১০০টি কক্ষের রংকরণ কাজ সম্পন্ন হবে।
এর আগে গত ২২ নভেম্বর ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুরুতে ১ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ওইদিন রাতে টানা ১৪ দিনের বন্ধের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া হওয়া এই বন্ধ চলবে আগামী ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত।