Image description

চট্টগ্রামে চলতি বছরে চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ গোড়ালি, ৮২ শতাংশ হাঁটু, ৮০ শতাংশ কবজি ও ৬৫ শতাংশ হাতের অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সকালে অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ রোগীর ফোলাভাবের লক্ষণ দেখা যায়।

অন্যদিকে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৯ শতাংশ রোগীর জ্বর ছিল। পাশাপাশি এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে বমিভাব ও বমি (৭১.৮%), মাথাব্যথা (৬২.৫%), মাংসপেশি (৪২.৪%) ও চোখের পেছনে ব্যথা (৩৯.৭%), পেটব্যথা (৩৫.৮%) এবং ডায়রিয়া আক্রান্ত (২৩%) ছিল।

ডেঙ্গু সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ১৮ বছর থেকে ৩৫ বছরের তরুণ জনগোষ্ঠী (৪৮.৪%)।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে (টিআইসি) আয়োজিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এআরএফ) যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি, জনস্বাস্থ্যে প্রভাব, চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ভাইরাসের জিনোমের স্বরূপ উন্মোচন অনুষ্ঠানে গবেষণার এসব ফলাফল তুলে ধরা হয়।

চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে গত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া আক্রান্তদের মধ্যে এক হাজার একশত রোগী এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে এক হাজার ৭৯৭ জন রোগীর ক্লিনিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণায় এসব ফল উঠে আসে বলে আয়োজকরা জানান।

গবেষকরা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র নিরূপণ এবং ভবিষ্যৎ জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

তারা জানান, চিকনগুনিয়া এখন আর কেবল একটি সাময়িক জ্বরের রোগ নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। শুধু ডেঙ্গু কেন্দ্রীক নিয়ন্ত্রণ কৌশল দিয়ে এই রোগ মোকাবেলা যথেষ্ট নয় বলে গবেষণায় মত দেওয়া হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়, চিকুনগুনিয়া রোগ কেবল স্বল্পমেয়াদি জ্বরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী অস্থিসন্ধির ব্যথা, কর্মক্ষমতা হ্রাস এবং উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে।

গবেষণায় উঠে আসে, চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে ডেঙ্গু (১০ শতাংশ) ও জিকা (১ দশমিক ১ শতাংশ) একযোগে সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে কোতোয়ালী, বাকলিয়া, ডবলমুরিং, আগ্রাবাদ, চকবাজার, হালিশহর ও পাঁচলাইশ এলাকায় সংক্রমণের হার ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। 
উপজেলা পর্যায়ে সীতাকুণ্ড, বোয়ালখালী ও আনোয়ারা এলাকায় সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী অস্থিসন্ধির ব্যথা তিন মাসের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়েছে, যার হার প্রায় ৬০ শতাংশ। ভুল রোগ নির্ণয় ও পর্যাপ্ত রিপোর্টিংয়ের অভাবে প্রকৃত রোগভার অনেকাংশেই অজানা থেকে যাচ্ছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি জনসচেতনতার অভাব এবং গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যয়ের চাপ রোগ ব্যবস্থাপনাকে আরও জটিল করে তুলছে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দিন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আদনান মান্নান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়াবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে টেকসই ও কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করতে গবেষণাভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন, অধ্যাপক ডা. এম এ সাত্তার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইবরাহিম চৌধুরী এবং সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. একরাম হোসাইন, গোলাম বাকি মাসুদ, ডা. সারোয়ার আলম প্রমুখ।