পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ইট সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় স্থবির হয়ে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম ও নির্মাণকাজ। জেলার অধিকাংশ ইটভাটা বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন থমকে গেছে উন্নয়ন প্রকল্প, অন্যদিকে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজারো শ্রমজীবী মানুষ। পরিস্থিতির প্রতিবাদে ইটভাটা মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা আমরণ অনশন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শুরু হয় আমরণ অনশন কর্মসূচি।
এ সময় খাগড়াছড়ি–দীঘিনালা সড়ক অবরোধ করা হলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। ফলে ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রী, শিক্ষার্থী, পর্যটক ও পণ্যবাহী যানবাহনের চালকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, খাগড়াছড়ি একটি বিশেষ ও উন্নয়নধর্মী পার্বত্য অঞ্চল। এখানে সড়ক, সেতু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ সরকারি-বেসরকারি নানা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ায় জেলায় তীব্র ইট সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, ঠিকাদারি কাজ এমনকি ব্যক্তিগত গৃহনির্মাণ কার্যক্রমও পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে।
বক্তারা আরও জানান, ইটভাটা বন্ধ থাকায় একদিকে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ইটভাটা মালিক, ঠিকাদার, বালু মহালের ইজারাদার, ট্রাক্টর ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশাজীবী। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে জেলার সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
আমরণ অনশন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন খাগড়াছড়ি ব্রিকফিল মালিক সমিতির সভাপতি হাফেজ আহম্মদ ভূঁইয়া, জেলা ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক মাহাবুব আলম সবুজ, সদস্যসচিব শাহেদুল হোসেন সুমন, মাটিরাঙ্গা ব্রিকফিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল কাজলসহ ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকরা।
বক্তারা বলেন, ‘আমরা পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব অস্বীকার করি না। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার ও শর্তসাপেক্ষে ইটভাটা চালু রাখার বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পুরো জেলার উন্নয়ন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে এবং সাধারণ মানুষ চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।’
পরে আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিলে অনশন কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
তবে আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, আগামী দুই দিনের মধ্যে কার্যকর সিদ্ধান্ত না এলে তারা পুনরায় আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেবেন।